জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) আবাসন সংকট দীর্ঘদিনের ইস্যু। পূর্বে বিশ্ববিদ্যালয়টির ১১ টি নিজস্ব হল ছিল, যা এখনো স্থানীয় প্রভাবশালী নেতা হাজী সেলিমের দখলে। কিন্তু ১১ টি হলের উচ্ছেদ কার্যক্রমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদাসীনতা দেয়া যায়। যার ফলে শিক্ষার্থীরা আবাসন সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
আবাসন সংকট নিরসনের দাবিতে জবি শিক্ষার্থীরা বহুদিন যাবত আন্দোলন করে আসছে। তবে ফলস্বরূপ কিছুই পাচ্ছে না। এবার সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রধান উপদেষ্টা বরাবর খোলা চিঠি কর্মসূচি পালন করতে দেখা যায়।
আজ শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জবি শিক্ষার্থীরা প্রধান উপদেষ্টা বরাবর খোলা চিঠি লিখে। চিঠিতে লেখা হয়,
-মাননীয় Chief Adviser GOB
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে গভীর হতাশা ও বেদনার সঙ্গে এই খোলা চিঠি লিখছি। এক সময় জগন্নাথ কলেজের ছাত্রাবাসগুলো দখল করে নেওয়া হয়েছিল আওয়ামী লীগের সহযোগী ছাত্রসংগঠনের মাধ্যমে। বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে পথচলার ২০ বছর অতিক্রম করলেও, আজ পর্যন্ত একটি ছেলের জন্যও আবাসনের স্থায়ী ব্যবস্থা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি।
২০১৪, ২০১৬, ২০২৪ ও ২০২৫ সালে আমরা একের পর এক আন্দোলন করেছি, প্রাণ দিয়েছি, রক্ত দিয়েছি, ত্যাগ স্বীকার করেছি—কিন্তু তবুও আমাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। দ্বিতীয় ক্যাম্পাস নির্মাণকাজ যেখানে থমকে আছে, তাতে আগামী চার বছরের মধ্যেও কোনো আবাসন সুবিধা পাওয়া যাবে কি না, তা অনিশ্চিত।
আমাদের সর্বশেষ অনশন কর্মসূচিতে আমরা তিন দফা দাবি উত্থাপন করি—
★প্রথম দাবিটি পূরণ হলেও সেনাবাহিনীর কাছে কাজ হস্তান্তরের পর DPP, সংশোধিত DPP এবং একনেক অনুমোদনের দীর্ঘসূত্রতায় প্রকল্পের বাস্তবায়ন এখনও থমকে আছে। কবে নাগাদ প্রকৃত আবাসন সুবিধা পাওয়া যাবে, তার কোনো সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা নেই।
★দ্বিতীয় দাবির বিষয়ে আশ্বাস দেওয়া হলেও আজ পর্যন্ত কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়নি। আবাসিক হল নির্মাণে কমপক্ষে ২-৩ বছর সময় প্রয়োজন। তাই আমাদের তৃতীয় দাবি ছিল,
★৭০% শিক্ষার্থীর জন্য আবাসন ভাতা বরাদ্দ করা। কিন্তু এ দাবির ব্যাপারেও কোনো অগ্রগতি লক্ষ্য করা যায়নি।
এদিকে পুরান ঢাকার অস্বাস্থ্যকর, ঝুঁকিপূর্ণ ও মানবেতর পরিবেশে শিক্ষার্থীরা বছরের পর বছর ধরে বাস করছে। নিজের খরচ চালাতে অনেকেই টিউশনি ও পার্টটাইম কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে। তবুও নেই সরকারি আবাসন, নেই কোনো আবাসন ভাতা।
শিক্ষার্থী সংখ্যার বিচারে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয়। অথচ রাজস্ব বাজেট বরাদ্দের দিক থেকে আমরা সবচেয়ে নিচে। যেখানে অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে মাথাপিছু বরাদ্দ দেড় লাখ থেকে আড়াই লাখ টাকা, সেখানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য বরাদ্দ মাত্র ৮০ হাজার টাকা। ১৬৮ বছরের পুরাতন একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং ২০ বছর বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে পথচলা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য এমন বৈষম্যমূলক আচরণ কেন? এই অবহেলার শেষ কোথায়? এই বৈষম্যের দায়ভার কে নেবে?
২০২৪ সালের গণআন্দোলনে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই সবচেয়ে বেশি ত্যাগ স্বীকার করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে যাওয়ার চেষ্টা করলে ছাত্রলীগের বাধার মুখে পড়তে হয়েছে, নিজের ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ ও স্থানীয় যুবলীগের সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছে। শাহবাগ অবরোধ করে আন্দোলনের নেতৃত্বও দিয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই।
২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে একরামুল হক সাজিদ ভাই শহীদ হয়েছেন। গুলিবিদ্ধ হয়েছেন ফেরদৌস, নাসিম, অনিক, প্রভা সহ অনেকে। আহত হয়েছেন শতাধিক শিক্ষার্থী—কারও হাত ভেঙেছে, কারও পা, কারও মাথা ফেটেছে। এত ত্যাগের পরও আজও আমরা অবহেলিত। শহীদদের আর্তনাদ, আহতদের কান্না সচিবালয় কিংবা আপনার কার্যালয়ে পৌঁছায় না।
তাই আজ বাধ্য হয়েই এই খোলা চিঠি লিখছি।
মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা, আমাদের দিকে অনুগ্রহ করে একবার সুদৃষ্টি দিন। আমরা আর পারছি না। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের রাজস্ব বাজেট বৃদ্ধি এবং সেখানে আবাসন ভাতা অন্তর্ভুক্ত করে আবাসন সমস্যার প্রাথমিক সমাধান দিন। এই বৈষম্য, এই অবিচার আর সহ্য করা যাচ্ছে না।
আমরা ক্লান্ত, আমরা বিপর্যস্ত—আর টিকে থাকতে পারছি না। আপনার সদয় হস্তক্ষেপেই কেবল আমাদের আবাসন সমস্যার সমাধান সম্ভব।
একুশে সংবাদ//জবি.প্র//এ.জে
আপনার মতামত লিখুন :