জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন আয়োজনের সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, “জুলাই সনদ বাস্তবায়ন, গণহত্যার বিচারের রোডম্যাপ প্রকাশ এবং বিচারপ্রক্রিয়া অগ্রগতি ছাড়া স্থিতিশীলতা ফেরানো সম্ভব নয়। দ্রুত সংস্কার সম্পন্ন করে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন জরুরি।”
বুধবার (২৯ অক্টোবর) সন্ধ্যায় রংপুর পর্যটন মোটেলে বিভাগীয় আট জেলা ও মহানগর পর্যায়ের আহ্বায়ক কমিটি গঠনের লক্ষ্যে সাক্ষাৎকার শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
নাহিদ ইসলাম বলেন, “দেশে এখন নানামুখী সংকট চলছে। পতিত স্বৈরাচার শক্তি নতুন করে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। এই অবস্থায় জাতীয় ঐক্য অপরিহার্য। কেউ যদি মনে করে এককভাবে সরকার গঠন বা নেতৃত্ব দেওয়া সম্ভব, তা হবে ভুল ধারণা। জনগণের ন্যূনতম প্রত্যাশা, বিচার ও সংস্কারের দাবিকে উপেক্ষা করে নির্বাচনের পথে গেলে সেটি টেকসই হবে না।”
তিনি আরও বলেন, “একটি স্থায়ী ও টেকসই পরিবর্তনের জন্য সংবিধানের কিছু জায়গায় ন্যূনতম সংস্কার প্রয়োজন। সরকার যদি এসব সংস্কারে গড়িমসি করে, তবে তাদের জনগণের মুখোমুখি হতে হবে।”
জোট রাজনীতি প্রসঙ্গে নাহিদ ইসলাম বলেন, “পুরনো রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি জনগণের অনীহা তৈরি হয়েছে। আওয়ামী স্বৈরাচারী গোষ্ঠী উৎখাত হলেও বিএনপি, জামায়াতসহ পুরনো দলগুলোর অতীত নিয়ে জনগণের প্রশ্ন রয়েছে। তাই জুলাই সনদ, বিচার ও সংস্কারের প্রশ্নে যে দলগুলো নীতিগতভাবে আমাদের কাছাকাছি অবস্থানে, তাদের সঙ্গেই রাজনৈতিক সমন্বয়ের বিষয়ে চিন্তা করা হবে।”
চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে এক দফার ঘোষক হিসেবে নাহিদ ইসলাম বলেন, “জুলাই সনদ বাস্তবায়নে যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে। তবে ঐকমত্য কমিশনের দুটি প্রস্তাব দেওয়ার প্রয়োজন ছিল না। দ্বিতীয় প্রস্তাব একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়। প্রথম প্রস্তাবটি কিছু ভাষাগত সংশোধনসহ গ্রহণযোগ্য। আমাদের দাবি ছিল— জুলাই সনদের বাস্তবায়ন আদেশ প্রকাশ করা এবং কার মাধ্যমে আদেশ জারি হবে তা পরিষ্কার করা। কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী আদেশ জারি করবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, যা ইতিবাচক পদক্ষেপ।”
তিনি জানান, “আমরা গণভোটের দাবিও তুলেছি— যাতে পরবর্তী সংসদ সংবিধান সংস্কার ২০২৬ প্রণয়ন করার ক্ষমতা পায়।”
ঐকমত্য কমিশনের আলোচনার প্রসঙ্গে এনসিপি আহ্বায়ক বলেন, “কমিশনে বিএনপি প্রাথমিকভাবে বড় সংস্কারের বিরোধিতা করেছিল। জনগণের চাপ ও অন্যান্য দলের ঐকমত্যের কারণে তারা শেষ পর্যন্ত কিছুটা অবস্থান পরিবর্তন করেছে।”
শেষে নাহিদ ইসলাম জুলাই সনদ বাস্তবায়ন, বিচারের রোডম্যাপ ঘোষণা, সমান প্রতিযোগিতার পরিবেশ (লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড) নিশ্চিত করা এবং নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের দাবি জানান।
এ সময় এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম, রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ড. আতিক মুজাহিদ, জেলা এনসিপির প্রধান সমন্বয়কারী আসাদুল্লাহ গালিব, মহানগরের প্রধান সমন্বয়কারী সাদিয়া ফারজানা দীনাসহ দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
একুশে সংবাদ/এ.জে



একুশে সংবাদের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

