জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতৃস্থানীয় দুই ব্যক্তি—মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ ও মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী—দলকে না জানিয়ে কক্সবাজার সফরের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছেন। শোকজ নোটিশের লিখিত জবাবে তারা জানান, ব্যক্তিগত প্রয়োজনে ঘুরতে যাওয়া কোনো অপরাধ নয়।
বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) এনসিপির মিডিয়া সেলের সদস্য এবং যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক খান মুহাম্মদ মুরসালীন এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
দলের সূত্রে জানা গেছে, হাসনাত ও নাসীরুদ্দীন পৃথকভাবে লিখিত জবাব জমা দিয়েছেন।
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী তার জবাবে বলেন, ৫ আগস্ট তার নির্ধারিত কোনো সাংগঠনিক বা রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব ছিল না এবং দল থেকেও সে বিষয়ে কোনো নির্দেশনা পাননি। ৪ আগস্ট রাতে দলের আরেক নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ তাকে জানায় যে, তিনি বন্ধুদের সঙ্গে ভ্রমণে যাচ্ছেন। ফোন হারিয়ে ফেলায় অন্যের ফোনে যোগাযোগ করেন এবং বলেন আহ্বায়ককে বিষয়টি অবহিত করবেন।
নাসীরুদ্দীন জানান, তিনি পার্টি অফিসে গিয়ে আহ্বায়ককে সফরের বিষয়টি জানান এবং সদস্য সচিবের সঙ্গেও ফোনে কথা বলেন। যেহেতু রাষ্ট্রীয় কোনো কর্মসূচিতে তার দায়িত্ব ছিল না, তাই ব্যক্তিগত মানসিক প্রস্তুতির অংশ হিসেবে তিনি ভ্রমণে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
তিনি আরও বলেন, “ঘুরতে যাওয়া আমার কাছে দায়িত্বজ্ঞানহীনতা নয় বরং রাজনৈতিক কর্মীর মানসিক অনুশীলনের একটি ধাপ।” সাগরের পাড়ে বসে তিনি দলীয় কাঠামো, গণপরিষদ এবং ভবিষ্যৎ সংবিধান নিয়ে ভাবার সুযোগ পেয়েছেন বলেও উল্লেখ করেন।
তবে কক্সবাজারে পৌঁছানোর পর একটি গুজব ছড়িয়ে পড়ে—তারা নাকি যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেছেন। নাসীরুদ্দীন বলেন, এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং পরিকল্পিত অপপ্রচার। তিনি গণমাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করেন। হোটেল কর্তৃপক্ষও নিশ্চিত করে যে, পিটার হাস সেখানে ছিলেন না। পরবর্তী অনুসন্ধানে জানা যায়, ওই সময় তিনি ওয়াশিংটনে অবস্থান করছিলেন।
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর ভাষায়, “এই গুজব আমাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করতে সাজানো নাটক।” তিনি আরও বলেন, অতীতেও ঘুরতে গেছেন, কিন্তু কখনোই দল থেকে জানানো হয়নি যে, এমন সফর বিধিবহির্ভূত।
তাই তিনি মনে করেন, তার এই সফর দলীয় শৃঙ্খলা বা আদর্শ পরিপন্থী ছিল না। “পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে শোকজের যৌক্তিকতা প্রশ্নবিদ্ধ। তবুও রাজনৈতিক শালীনতা বজায় রেখে আমি ব্যাখ্যা দিয়েছি। সভ্যতার নিদর্শন হিসেবে।”
জবাবের শেষে তিনি মন্তব্য করেন, “ঘুরতে যাওয়া অপরাধ নয়, কারণ অনেক সময় ইতিহাস জন্ম নেয় নির্জনে, সাগরের পাড়ে।”
উল্লেখ্য, ৫ আগস্ট ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস’-এর দিনে এনসিপির পাঁচ শীর্ষ নেতা কক্সবাজার সফর করেন। তারা বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে সকাল সাড়ে ১১টার দিকে পৌঁছান। এরপর সামাজিক মাধ্যমে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে, তারা পিটার হাসের সঙ্গে গোপন বৈঠকে মিলিত হতে গেছেন। এই খবরে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা এক পর্যায়ে হোটেল ঘিরে বিক্ষোভও করেন। যদিও অভিযোগের সত্যতা মেলেনি।
পরদিন ৬ আগস্ট এনসিপি থেকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হয় হাসনাত আবদুল্লাহ, নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, সারজিস আলম, ডা. তাসনিম জারা এবং খালেদ সাইফুল্লাহর কাছে। নোটিশে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ব্যাখ্যা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
একুশে সংবাদ/ঢ.প/এ.জে