দীর্ঘদিনের দুই মিত্রকে ক্ষমতার কাছাকাছি এনে দিয়েছে ছাত্র-জনতা।
বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) বঙ্গভবনে শান্তিতে নোবেলজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে শপথ বাক্য পাঠ করানো হয়। সেখানে বেশ খোশ মেজাজে দেখা যায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও সন্ত্রাসবিরোধী আইনে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমানসহ বিরোধী জোটে থাকা নেতাদের।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের নাম করে ছাত্র-নাগরিকের ৩৫ দিনের আন্দোলনের মুখে গত ৫ অগাস্ট পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার মাত্র ৪দিন আগে তার রাজনীতির প্রধান নিশানা জামায়াত ইসলামীকে নির্বাহী আদেশে ‘সন্ত্রাসী সত্তা’ হিসাবে নিষিদ্ধ করেছিলেন। তবে সরকার বিরোধী তীব্র আন্দোলন চলতে থাকলেও জামায়াতও রাজপথে সক্রিয় হয়।
এই পরিস্থিতিতেও বঙ্গভবনে আওয়ামী লীগ বিরোধী রাজনৈতিক দল ও জোটগুলোর মুখে ছিল বাঁধভাঙা আনন্দ আর উচ্ছ্বাস। অন্যদিকে দলীয় রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত শপথে সদ্য ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের কোনো প্রতিনিধিই উপস্থিত ছিলেন না। অভ্যুত্থান পরবর্তী অরাজকতা ও প্রতিশোধমূলক আক্রমণের ভয়ে আওয়ামী লীগের প্রায় সব নেতাই গেছেন আত্মগোপনে। মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের অনেকেই গোপনে দেশ ছেড়েছেন।
রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান আগেভাগেই বঙ্গভবনের দরবার হলে প্রবেশে করেন। দলটি যে নিষিদ্ধ, সেই প্রশ্ন কেউ আওয়ামী লীগের পতনের পর থেকে তুলছে না। এর কিছু সময় আগেই নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) সভাপতি মোস্তফা জামাল হায়দার দরবার হলে আসেন। শফিকুর রহমান এসে তাদের সঙ্গে করমর্দন করেন।
এরপরে ছাত্রনেতারা প্রবেশ করলে দরবার হল সরগরম হয়ে উঠে। তারা রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে হাত মেলান এবং কুশল বিনিময় করেন। প্রবীণ রাজনীতিকরাই সাগ্রহে এগিয়ে এসে অভ্যুত্থানকারী তরুণ ছাত্রনেতাদের সঙ্গে খোশ গল্প করেন। আলোকচিত্রী ও অধিকারকর্মী শহীদুল আলমও গিয়েছিলেন নতুন সরকারের শপথ অনুষ্ঠানে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বেশ সরব ছিলেন তিনি।
এদিকে সদ্য কারামুক্ত বিজেপির চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ ও বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান এসেছিলেন অনুষ্ঠানে। তারা প্রবেশ করেই হাসিমুখে সবার সঙ্গে হাত মেলান, কোলাকুলি করেন।
নাগরিক সমাজ থেকে বেছে নেয়া উপদেষ্টারা আসেন শপথ অনুষ্ঠান শুরুর কিছুক্ষণ আগে। তারা এসেই আগে থেকে বসে থাকা শিক্ষার্থীদের দিকে এগিয়ে তাদের বুকে টেনে নেন।
জামায়াত নেতা এটিএম মাসুম বলেন, ১৭ বছর পর বঙ্গভবনে এসেছি। নতুন পরিবেশে ভালোই লাগছে।
বিএনপি নেতা হাবিবুন নবী সোহেল বলেন, দুই যুগ পর এখানে আসা। অনেক মানুষের রক্ত, জীবনের বিনিময়ে নতুন স্বাধীন দেশে স্বাদ উপভোগ করছি। তবে এখনও আমাদের গণতন্ত্র ফিরে আসেনি। সেই অপেক্ষায় আমাদের থাকতে হবে। আজকে আমাদের বিজয়ের প্রথম ধাপ, পূর্ণ বিজয় হবে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধির সরকার গঠন হলে।
একুশে সংবাদ/বিএইচ
আপনার মতামত লিখুন :