AB Bank
  • ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৯ মে, ২০২৫, ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

কোরবানির ইতিহাস ও তাৎপর্য: আত্মত্যাগের এক চিরন্তন শিক্ষা


Ekushey Sangbad
মুফতি আবু সাঈদ
১০:৪০ এএম, ২৭ মে, ২০২৫

কোরবানির ইতিহাস ও তাৎপর্য: আত্মত্যাগের এক চিরন্তন শিক্ষা

ইসলাম ধর্মে কোরবানি শুধু একটি ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং এটি আত্মত্যাগ, আল্লাহর প্রতি নিঃশর্ত আনুগত্য এবং মানবতার এক মহান শিক্ষার প্রতীক। এর পেছনে রয়েছে হাজার বছরের পুরোনো এক তাৎপর্যপূর্ণ ইতিহাস, যা আজও মুসলমানদের জীবনে গভীরভাবে প্রভাব ফেলে।

কোরবানির ঐতিহাসিক ভিত্তি

কোরবানির ইতিহাস আমাদের নিয়ে যায় মহান নবী হজরত ইব্রাহিম (আঃ) ও তাঁর পুত্র হজরত ইসমাঈল (আঃ)-এর যুগে। আল্লাহ তাআলা যখন হজরত ইব্রাহিম (আঃ)-কে স্বপ্নে তাঁর প্রিয় পুত্রকে কোরবানি করার নির্দেশ দেন, তখন তিনি বিনা দ্বিধায় সেই আদেশ পালনের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। আর ইসমাঈল (আঃ) পিতার সিদ্ধান্তে নিজেকে সঁপে দেন। এই আত্মত্যাগ ও আনুগত্যের পরীক্ষায় উভয়েই উত্তীর্ণ হন। তখন আল্লাহ তাআলা ইসমাঈলের পরিবর্তে একটি জান্নাতি দুম্বা পাঠিয়ে কোরবানি করার নির্দেশ দেন।

এই ঘটনা সূরা আস-সাফফাতে (৩৭:১০২–১০৭) বিশদভাবে বর্ণিত হয়েছে এবং প্রতিটি হজ পালনকারী ও ঈদুল আযহার উদযাপনকারী মুসলমানদের জন্য তা এক মহান অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করে।

কোরবানির তাৎপর্য

আজকের বিশ্বে, যেখানে ব্যক্তিস্বার্থ, লোভ ও ভোগবাদের আধিপত্য বিস্তার করেছে, সেখানে কোরবানির তাৎপর্য শুধু পশু জবাইয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। বরং এটি অন্তরকে শুদ্ধ করা, পার্থিব মোহ কাটিয়ে আল্লাহর পথে নিবেদিত হওয়ার একটি প্রশিক্ষণ। আল্লাহ তাআলা কুরআনে ইরশাদ করেন: “তোমাদের কোরবানিকৃত পশুর গোশত ও রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না; বরং পৌঁছে তোমাদের তাকওয়া।”(সূরা হজ: ২২:৩৭)

এই আয়াতের মাধ্যমে বোঝা যায়—কোরবানির মূল উদ্দেশ্য বাহ্যিক আনুষ্ঠানিকতা নয়; বরং আত্মিক পরিশুদ্ধি, আন্তরিকতা ও আল্লাহভীতি অর্জন।

কোরবানির ফজিলত ও উপকারিতা

ইসলামি শিক্ষা অনুযায়ী, কোরবানি পালনকারীদের জন্য রয়েছে অসংখ্য ফজিলত ও পুরস্কার। নিচে তা তুলে ধরা হলো:

১. আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের শ্রেষ্ঠ মাধ্যম:

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: “কোরবানির দিনে আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় আমল হলো কোরবানি করা।"(তিরমিযি, ইবনে মাজাহ)

২. পাপ মোচনের উপায়:

নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন: “কোরবানির পশুর রক্ত মাটিতে পড়ার আগেই তা আল্লাহর কাছে পৌঁছে যায় এবং তা দ্বারা আল্লাহ বান্দার গুনাহ মাফ করে দেন।” (তিরমিযি)

৩. প্রতিটি পশুর লোমের জন্য সওয়াব:

আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবীজি (সা.) বলেন: “প্রত্যেকটি পশুর পশমের বিনিময়ে তোমরা সওয়াব পাবে।” (মিশকাতুল মাসাবিহ)

৪. ঈমান মজবুত করার অনুশীলন:

ইব্রাহিম (আঃ)-এর আদর্শ অনুসরণ করে একজন মুসলমান যখন তাঁর প্রিয় কিছু আল্লাহর রাস্তায় উৎসর্গ করেন, তখন তাঁর ঈমান দৃঢ় হয়, তাকওয়া বৃদ্ধি পায়।

৫. সামাজিক সাম্য প্রতিষ্ঠা:

কোরবানির মাংস সমাজের দরিদ্র ও প্রান্তিক মানুষের মাঝে পৌঁছে দিয়ে মুসলিমদের মাঝে ভ্রাতৃত্ব, সহানুভূতি ও মানবিকতাবোধ সৃষ্টি করে।

সমকালীন প্রেক্ষাপটে ভাবনার অবকাশ

বর্তমানে কোরবানি অনেক ক্ষেত্রেই বাহ্যিকতা ও সামাজিক প্রতিযোগিতার প্রতীক হয়ে উঠছে। কে বেশি দামি পশু আনল, কার পশু বড়—এই সব কৃত্রিমতা আসল শিক্ষাকে আড়াল করে দিচ্ছে। অথচ কোরবানির মূল শিক্ষা হচ্ছে আত্মত্যাগ, বিনয় ও সংযম। একজন প্রকৃত মুসলমানের উচিত—এই শিক্ষাকে অন্তরে ধারণ করে কোরবানিকে ইবাদত হিসেবে পালন করা।

উপসংহার

কোরবানি শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, বরং এটি একটি আত্মিক জাগরণ। এটি আত্মত্যাগ, আল্লাহর প্রতি ভালবাসা, সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধ এবং মানবিক চেতনাকে জাগ্রত করার সুযোগ। হজরত ইব্রাহিম (আঃ) ও ইসমাঈল (আঃ)-এর সেই ঐতিহাসিক ত্যাগের গল্প আমাদের শেখায়—আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নিজের প্রিয় জিনিসও ত্যাগ করতে পিছপা হওয়া যাবে না।

আসুন, এই কোরবানির মৌসুমে আমরা বাহ্যিকতা নয়, বরং আত্মিক পরিশুদ্ধিকে অগ্রাধিকার দিই—আর সেই শিক্ষাকেই ছড়িয়ে দিই পরিবার, সমাজ ও পুরো উম্মাহর মধ্যে।

 

লেখক- মুফতি আবু সাঈদ, ইমাম ও খতিব
গুনহার উওরপাড়া জামে মসজিদ,মুকসুদপুর,  গোপালগঞ্জ ।

 

একুশে সংবাদ//এ.জে

Link copied!