AB Bank
  • ঢাকা
  • রবিবার, ০৮ জুন, ২০২৫, ২৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

দেশের উন্নয়ন ও অর্থনীতিতে খেলাপি ঋণের প্রভাব ও প্রতিকার


Ekushey Sangbad
তারিক আফজাল, অর্থনীতিবিদ
১০:৩৩ পিএম, ৭ জুন, ২০২৫

দেশের উন্নয়ন ও অর্থনীতিতে খেলাপি ঋণের প্রভাব ও প্রতিকার

সময়ের প্রান্তিকে, অর্থনীতি ও দেশের উন্নয়নের লক্ষ্যে ব্যাংক ঋণ একটি প্রচলিত বিষয়, যার সঠিক প্রয়োগ অর্থনীতিকে অগ্রগামী করে।
বিগত বছরগুলোতে অর্থনৈতিক উন্নয়ন, শিল্পায়ন, রপ্তানি আয় বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ব্যাংক ঋণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

দুঃখজনক হলেও সত্য, কতিপয় রাজনৈতিক নেতা, ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের সদস্যরা এর অপব্যবহার করেছেন। এর ধারাবাহিকতায় বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকিং খাতে মন্দ ঋণের পরিমাণ প্রায় ৪ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি।

বাস্তবতা হলো—রাজনৈতিক শক্তির অপপ্রয়োগ, দুর্নীতি ও ব্যক্তিস্বার্থের সমন্বয়, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপর চাপ সৃষ্টি, বিচার প্রক্রিয়ার ধীরগতি, নিম্ন আদালতের দুর্নীতি, ব্যাংকারদের প্রশিক্ষণের অভাব এবং অর্থঋণ আইনের যথাযথ প্রয়োগে ব্যর্থতা ক্রমাগত খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির পেছনে কাজ করেছে।

২০২০, ২০২১, ২০২২ সালের কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় অনেক ব্যবসায়ী সম্পূর্ণ ঋণ মওকুফ, পুনঃতফসিল কিংবা ছাড় পেয়েছেন এবং পরে আবারও ঋণ খেলাপিতে পরিণত হয়েছেন।

দুঃখজনকভাবে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক বারবার বিচার বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে কার্যকর উদ্যোগ নিতে ব্যর্থ হয়েছে। অথচ কেন্দ্রীয় ব্যাংক হল সব ব্যাংকের অভিভাবক এবং সর্বশেষ আস্থার প্রতীক। ব্যাংক কোম্পানি আইনের ধারা অনুযায়ী, এটির মামলা ও আইনি ক্ষমতা সংস্কার এবং বিচার বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় একান্ত প্রয়োজন।

অর্থঋণ আইন, ২০০৩-এর মামলা ও বিচার প্রক্রিয়ার সংস্কার এখন সময়ের দাবি।

প্রতিটি ব্যাংক তাদের নিজস্ব নীতিমালার আলোকে প্রচলিত পদ্ধতিতে খেলাপিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়—যেমন নেগোশিয়েবল ইনস্ট্রুমেন্ট আইন অনুসারে নিলাম, মামলা ইত্যাদি। কিন্তু খেলাপিরা পাল্টা মামলা, মানহানির অভিযোগ, ব্যবসায়িক ক্ষতির অজুহাত তুলে আদালত থেকে স্থগিতাদেশ পেয়ে যান। ফলে ঋণ পরিশোধ না করেও থাকেন দায়মুক্ত।

অন্যদিকে, ব্যাংকের লোকসান এবং আমানতকারীদের ক্ষোভ ক্রমশ বাড়ছে।

একদিকে দুর্নীতিগ্রস্ত পর্ষদ, অন্যদিকে অদক্ষ ব্যবস্থাপনা—সব মিলিয়ে খেলাপি ঋণ আজ বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে।

তবে দায় কার? ব্যাংকার, পর্ষদ, কেন্দ্রীয় ব্যাংক, বিচার বিভাগ না সরকারের? দুর্ভাগ্যজনকভাবে, সবাই আইনের জটিলতায় আবদ্ধ।

এই আইনগুলোর সংস্কার ও বাস্তবায়ন এখনই প্রয়োজন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নেতৃত্বে বিদ্যমান আইন অনুসারে কঠোর প্রয়োগ, আদালতের মাধ্যমে দ্রুত বিচার, খেলাপিদের জামিন না দেওয়ার বিধান এবং অন্তরীণের (carceration) ব্যবস্থা অর্থ ও ঋণ আদায়ে গতি আনবে।

পরবর্তীতে, ঋণের নীতি ও কাঠামো পুনর্বিন্যাস, ক্ষুদ্র ঋণ ও নারী উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে আইনের শিথিলতা ও সংস্কারও জরুরি। এই সিদ্ধান্তগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এককভাবে গ্রহণ করতে পারবে, যার ফলে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত হবে।

আমি আশা করি, এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশের অর্থনীতির সামগ্রিক উন্নয়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, যা বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের জন্য কল্যাণকর হবে।

বাংলাদেশের মাননীয় প্রধান বিচারপতি ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর অর্থঋণ মামলার কার্যক্রম দ্রুত সম্পন্ন করতে কার্যকর পদক্ষেপ নেবেন—এমনটিই প্রত্যাশা করি। এটি পরিবর্তিত বাস্তবতায় একটি নতুন সূচনা হবে।

সবার উপরে দেশ।

তারিক আফজাল
ব্যাংকার ও অর্থনীতিবিদ

 

একুশে সংবাদ/  এ.জে

Link copied!