AB Bank
ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

শেখ হাসিনা মানুষ হিসেবে কেমন?


Ekushey Sangbad
ডা. এসএম বাদশা মিয়া
০৮:১৪ পিএম, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২২
শেখ হাসিনা মানুষ হিসেবে কেমন?

 

সমাজ বাস্তবতায় এইরকম সত্য সম্বোধন খুব একটা অস্বাভাবিক নয়। যে সমাজে বিনয়ের চেয়ে দম্ভের, জ্ঞানের চেয়ে বাড়ি-গাড়ি আর সততার চেয়ে চালাকির দাম বেশি, সেখানে এমন মূল্যায়নই স্বাভাবিক।

 

‘ক্ষমতার কেন্দ্র’ ছেড়ে আমি অনেক কিছু হারিয়েছি সত্য, আবার যা পেতে শুরু করেছি তার মূল্যও কোনো অংশে কম নয়। যা হারিয়েছি, তার মূল্য আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে আমি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার ধারে-কাছে থেকে তাঁকে তথ্যসেবা দেয়ার সুযোগ পেয়েছিলাম। বঙ্গবন্ধুকে কাছে থেকে দেখার বা শোনার দুঃখ আমার অনেকখানি প্রশমিত হয়েছে তাঁর কন্যাকে সেবা দেয়ার সুযোগ পেয়ে। আমি তাঁকে মা বলে সম্বোধন করি । জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ ধারণ করে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি মানুষের মাঝে জাগ্রত করার জন্য। যাতে বঙ্গবন্ধুর সম্পর্কে বাংলাদেশের সকল শ্রেণির পেশার মানুষকে অবগত করার জন্য এখন কাজ করে যাচ্ছি। সেই দারুণ, কিন্তু ব্যস্ত সময়ের কিছু ঘটনা, অভিজ্ঞতা আমি মানুষকে জানাতে চাই। এই জানার কিংবা অভিজ্ঞতার সাথে রাষ্ট্র-সরকার রাজনীতির সম্পর্ক বা মূল্যায়ন অন্তত আজকের আলোচনায় মুখ্য নয়। একজন প্রধানমন্ত্রী এখানে মুখ্য নন। ব্যক্তি এখানে প্রধান, ব্যক্তি এখানে আধার। আবার সেই ব্যক্তিই এখানে জাতীয় কিংবা বৈশ্বিক

 

আওয়ামী লীগ করেন, এমনকি বিএনপি সাপোর্ট করেন, এমন অনেকে আমাকে প্রশ্ন করতেন, এখনো করেন- “শেখ হাসিনা মানুষ হিসেবে কেমন?” আমি কোনো সূচনায় না গিয়ে বলেছি, এখানো বলি ‘উনি একজন সহজ ও ভালো মানুষ এবং নতুন বাংলাদেশের নেতা’। বঙ্গবন্ধু এবং জাতীয় চারনেতার হত্যাকাণ্ডের পরবর্তী সময় থেকে অদ্যাবধি শেখ হাসিনা। আমাদের যোগ্যতম নেতা। এটা আমার অন্ধ বিশ্বাস নয়, দেশের অর্থনীতি, মানুষের জীবনমান বিচার করে প্রাপ্ত সিদ্ধান্ত। প্রধানমন্ত্রী কিংবা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী কিংবা বঙ্গবন্ধুর সন্তান হিসেবে তাঁর মূল্যায়ন যেমন সহজ নয়, আবার ব্যক্তি শেখ হাসিনার মূল্যায়নও সহজ নয় এই কঠিন কাজটি করার ঝুঁকি আমি নিতে পারি, কারণ আমি তাঁকে দেখেছি, তাঁর সাথে এ বিষয় কথা হয়েছে অনেক। তাঁর নির্দেশ শুনে কাজ করে সকলের প্রশংসা অর্জন করেছি, নিন্দা বা গালমন্দ অর্জন করিনি, সেটা বলতে পারি। ২০০৮ সালে জাতীয় নির্বাচন পূর্ববর্তী সময়। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচনের প্রতিটি মুহূর্তের আমি সাক্ষী। শেখ হাসিনার সাথে প্রায় কথা হতো ।

 

কখনো উচ্ছ্বল নদীর পাড়ে, কখনো ভোর বেলায় শতবর্ষী পাঠশালার মাঠে। সুবহে সাদিকের প্রশান্তি নিয়ে শুরু সেই শুভযাত্রা, শেষ হতো সন্ধ্যার ক্লান্তিতে। কিন্তু প্রশান্তি কিংবা ক্লান্তি আমার কাছে চমক নিয়ে হাজির হতো না। আমি ইঙ্গিত পেতাম আগামীর। মানুষের সে কী উচ্ছ্বাস! সেকী প্রত্যাশার ঝলক! কঠিন, চতুর চেহারার দলীয় নেতা-কর্মী শুধু নয়, সমাবেশস্থল, আশপাশ, খালের পাড়, রাজপথ, অলিগলিতে প্রবাহিত হতো সাধারণ মানুষের স্রোত। মসজিদের ইমাম, মাদ্রাসা শিক্ষার্থী, কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র-শিক্ষক, বেকার, বয়সরে ভারে নুয়ে পড়া বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, বাবার কাঁধে বসে থাকা কোনোমতে হাঁটতে শেখা ছোট শিশু, তরুণ স্বামীর হাত ধরে আসা সন্তা লাল শাড়ির বউ কী ছিল না সেই মানবসাগর সমগ্রে! তাঁদের সবর কিংবা নীরব উপস্থিতি ইশারা দিত ক্ষমতাসীন আগামীর। সেই ইশারার সত্যরূপ দেখলাম ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে। ২০০৬ সালে তখন বিএনপি সারা দেশে মহা সম্মেলন করছিল, প্রধানমন্ত্রীকে আমি বলেছিলাম।

 

আমাদের সম্মেলন করবেন না? তিনি প্রতি উত্তরে বললেন সম্মেলন করে কা হবে। তখন আমি বলেছিলাম এবার আমরা ইনশাআল্লাহ ক্ষমতায় আসব। আওয়ামী লীগ জিতে গেল। বিপুল, বিশাল ব্যবধানে বিজয়। তাও আবার যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াত-সংশ্লিষ্ট জোটকে পরাজিত করে। যেন আরেক ১৬ ডিসেম্বর। বয়সের জন্য ৭১ এ থাকা আমার হাতে ছিল না। কিন্তু ডিসেম্বর বিজয় লগ্ন আমার যুবক চোখের সামনেই মহাকালে প্রবেশ করেছে।

 

শেখ হাসিনা সরকার ৬ ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব নিলেন। কিন্তু ষড়যন্ত্রকারীরাও যে নিষ্ক্রিয় ছিলেন না, তার প্রমাণ তারা রাখলেন ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায়। ২৪ ফেব্রুয়ারি তারিখে। ব্যস্ত সকালেই শেখ হাসিনা তাঁর সরকারি, রাজনৈতিক সঙ্গীদের নিয়ে পিলখানায় গিয়েছিলেন। বাংলাদেশের স্মার্ট সীমান্তরক্ষীদের দৃষ্টিনন্দন, বীরোচিত কুচকাওয়াজ দেখে রাজকীয় খানাপিনা করে যখন দেশের প্রধানমন্ত্রী তাঁর গাড়িবহর নিয়ে বের হয়ে যাচ্ছিলেন, তখন কেউ কি ভেবেছিল কী কঠিন আঘাত আসছে আর কিছুক্ষণ পরেই! রাজদরবারে থাকার সুবাদে সেই সময়কার ভয়ঙ্কর সামরিক-বেসামরিক-রাজনৈতিক চাপের কিছুটা আমিও শেয়ার করেছিলাম। যমুনার ভেতরে-বাইরে, ক্যান্টনমেন্টগুলোতে, সংলগ্ন জনপদে কী পরিমাণ উত্তেজনা, ঝুঁকি ও স্নায়ু চাপ ছিল— প্রত্যক্ষদর্শী ছাড়া কেউ এর অনুভূতি বা স্মৃতি বর্ণনা করতে পারবে না। এ যেন স্বপ্নের ঠিক উল্টো পিঠেই দুঃস্বপ্নের চোখ রাঙানি।

 

সেই ভয়ংকর কঠিন সময়ে শেখ হাসিনা দেশকে একটি দীর্ঘস্থায়ী রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধের কবল থেকে বাঁচিয়ে অগ্রযাত্রার শুরু করেছিলেন। সেই অগ্রযাত্রায় আমার কিংবা অনেকের অংশীদারিত্ব একেবারে সামান্যতম, কিন্তু প্রত্যক্ষ। শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ তখন কানাডায়, শারীরিক সংকট এবং চিকিৎসাধীন। আবার দিকে কানাডার সরকারের বিশেষ আমন্ত্রণ। এই দুই মিলে সরকারি সফরে প্রধানমন্ত্রী বোডা যাবেন বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হলো। বিমানে ভ্রমণ, তাও আবার কানাডার মতো দেশে পাওয়ার সম্ভাবনায় এর মধ্যে একদিন শুনলাম শেখ হাসিনার স্বামী মরহুম ওয়াজেদ মিয়া স্যার

 

খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। স্বামীর বিপদে সন্তান-সান্নিধ্য, গুরুত্বপূর্ণ বিদেশ সফর বাদ দিলেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী। কানাডা সফর বাতিল হয়ে গেল। কয়েকদিন আগেই দেশকে বাঁচালেন গৃহযুদ্ধ থেকে; এবার স্ত্রী হিসেবে স্বামীকে বাঁচানোর লড়াই। দেশ বাঁচানোর কাজে সফল হলেন, কিন্তু ওয়াজেদ মিয়া সাহেবকে আল্লাহতায়ালা আর পৃথিবীতে রাখলেন না। উনি চলে গেলেন স্রষ্টার কাছে। ৭৫ র ১৫ই আগস্ট বাবা-মা-ভাইদের হারিয়েছেন; নতুন বাংলাদেশে স্বামী চলে গেলেন পরকালে।

 

লেখক: প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংসদ ও স্মৃতি পাঠাগার

 

 

একুশে সংবাদ.কম/জা.হা

Link copied!