ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের এক বছর পূর্ণ করেছে। ২০২৫ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ ১৬ বছরের শাসনের অবসান ঘটে এবং ৮ আগস্ট ড. ইউনূসের নেতৃত্বে নতুন অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। গত এক বছরে সরকার অর্থনীতি, রাজনৈতিক পরিবেশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর আচরণে কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সক্ষম হলেও আইনশৃঙ্খলা, প্রশাসনিক দক্ষতা ও গণহত্যার বিচার—এই তিন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে।
অর্থনৈতিক খাতে অন্তর্বর্তী সরকারের সাফল্য তুলনামূলকভাবে দৃশ্যমান। ব্যাংক ও আর্থিক খাতে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে অগ্রগতি হয়েছে, রেমিট্যান্স প্রবাহ ভালো রয়েছে, ডলারের বাজার ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতিশীল রাখা সম্ভব হয়েছে। পাশাপাশি দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখতে সরকার কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বাকস্বাধীনতা বৃদ্ধি, বিরোধী দলগুলোর অবাধ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং রাষ্ট্রীয় সংস্কার বিষয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক শক্তির মধ্যে আংশিক ঐকমত্য গড়ে তোলাও সরকারের সাফল্যের অংশ। নিরাপত্তা বাহিনীর আচরণেও পরিবর্তন এসেছে—গুম, খুন ও অবৈধ আটক কার্যত বন্ধ হয়েছে।
তবে ব্যর্থতার দিকও স্পষ্ট। অভ্যুত্থান-পরবর্তী সহিংসতা, মব জাস্টিস ও দখল-চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণে সরকার ব্যর্থ হয়েছে। হত্যা, ধর্ষণসহ সহিংস অপরাধের হার কমেনি, বরং কোথাও কোথাও বেড়েছে। প্রশাসনিক অভিজ্ঞতার অভাবে আন্দোলন ও দাবিদাওয়া দক্ষভাবে মোকাবিলা করা সম্ভব হয়নি। রাষ্ট্রীয় সেবা খাতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে পারেনি সরকার। জুলাই গণহত্যার বিচার ও শেখ হাসিনার বিচারের ক্ষেত্রে দৃশ্যমান অগ্রগতি সীমিত।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়াও মিশ্র। বিএনপির দাবি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নত হয়নি এবং দ্রুত নির্বাচিত সরকার প্রয়োজন। জামায়াত বলছে, কিছু ইস্যুতে অগ্রগতি হলেও সংস্কার ও বিচার এখনো অসম্পূর্ণ। গণসংহতি আন্দোলন নিরাপত্তা, জবাবদিহিতা ও গণহত্যার বিচার বিষয়ে ব্যর্থতার কথা উল্লেখ করেছে। অন্যদিকে এনসিপি স্বীকার করেছে কিছু উন্নতি হলেও রাষ্ট্রীয় সেবায় পরিবর্তন অপর্যাপ্ত।
ভবিষ্যতে অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করে নিরাপদ পরিবেশে নির্বাচন আয়োজন, প্রশাসনের নিরপেক্ষতা বজায় রাখা এবং জুলাই ঘোষণাপত্র ও সনদের বাস্তবায়ন। পাশাপাশি গণহত্যা ও শেখ হাসিনার বিচারে দৃশ্যমান অগ্রগতি এবং সম্ভাব্য ফ্যাসিবাদী ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করাও সরকারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে।
একুশে সংবাদ/এ.জে