ইসরায়েলি আগ্রাসনে জর্জরিত গাজা উপত্যকায় সোমবার আরও অন্তত ৮০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। পাশাপাশি, খাদ্য সংকট চরমে ওঠায় অনাহারে নতুন করে মারা গেছেন আরও ১৪ জন, যাদের মধ্যে রয়েছে দুটি শিশু। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এই তথ্য জানিয়েছে বলে জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানায়, চলমান যুদ্ধ ও অবরোধের ফলে অপুষ্টিজনিত কারণে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪৭ জনে, যার মধ্যে অধিকাংশই শিশু।
খাদ্য সরবরাহে দীর্ঘদিনের বাধা এবং সীমিত ত্রাণ প্রবেশের সুযোগের কারণে গাজায় দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। চলতি বছরের মার্চ মাসে ইসরায়েল গাজায় সর্বাত্মক অবরোধ আরোপ করে। মে মাসে কিছুটা শিথিলতা আসলেও জরুরি সহায়তা এখনো প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।
জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের নিয়ে কাজ করা সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএর প্রধান ফিলিপ ল্যাজারিনি বলেন, তার সহকর্মীরা গাজায় এমন মানুষদের দেখতে পাচ্ছেন যারা "জীবিতও নয়, মৃতও নয়—হাঁটাচলা করা কঙ্কাল যেন।" তিনি আরও বলেন, “শুধু প্রতিক্রিয়া জানানো নয়, এখনই যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতে হবে, দুর্ভিক্ষ ঠেকাতে হবে, এবং বন্দিদের মুক্তির পথ খুঁজতে হবে।”
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্কটল্যান্ড সফরকালে সাংবাদিকদের জানান, গাজায় প্রকৃত দুর্ভিক্ষ চলছে এবং এ অবস্থার জন্য ইসরায়েলের বড় ধরনের দায় রয়েছে।
অন্যদিকে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু দাবি করেন, “গাজায় দুর্ভিক্ষ নেই।” তবে সোমবার এক্সে (সাবেক টুইটার) দেওয়া এক পোস্টে তিনিও স্বীকার করেন, গাজার পরিস্থিতি “কঠিন” এবং সেখানে মানবিক সহায়তা পাঠাতে তারা কাজ করছে।
ট্রাম্প জানান, গাজায় খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে “বাউন্ডারিবিহীন খাদ্য কেন্দ্র” গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে, যাতে সাধারণ মানুষ সহজে খাদ্য পেতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র এ কাজে অন্যান্য দেশের সঙ্গেও সমন্বয় করছে।
ইসরায়েল কিছু এলাকায় সাময়িক হামলা স্থগিত রাখার ঘোষণা দিয়েছে এবং নতুন ত্রাণ করিডোর চালুর কথাও জানিয়েছে। জাতিসংঘ এ উদ্যোগকে স্বাগত জানালেও সংস্থাটির মানবিক সহায়তা প্রধান বলেছেন, “সহায়তা প্রবাহ আরও অনেক গুণ বাড়াতে হবে।”
আল জাজিরার প্রতিবেদক তারেক আবু আজজুম জানান, ইসরায়েলের ঘোষিত ‘মানবিক বিরতি’ সাধারণত খুবই সীমিত সময়ের এবং নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় কার্যকর থাকে, তাও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণের বাইরে।
গাজার সর্ববৃহৎ হাসপাতাল আল-শিফায় কর্মরত এক চিকিৎসক জানান, শিশু মোহাম্মদ ইব্রাহিম আদাসের মৃত্যু হয়েছে অপুষ্টিজনিত কারণে, কারণ তার প্রয়োজনীয় ফর্মুলা দুধ পাওয়া যায়নি।
গাজা সরকারের গণমাধ্যম শাখা জানিয়েছে, প্রায় ৪০ হাজার শিশু বর্তমানে মৃত্যু ঝুঁকিতে রয়েছে, কারণ বিগত ১৫০ দিনে ইসরায়েল গাজায় শিশু খাদ্য প্রবেশে বাধা দিয়েছে।
সরকার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “সব সীমান্ত পয়েন্ট অবিলম্বে ও শর্তহীনভাবে খুলে দিতে হবে, যাতে শিশু খাদ্য ও জরুরি সহায়তা সহজে প্রবেশ করতে পারে।”
একুশে সংবাদ/ঢ.প/এ.জে