তেহরানে ইসরায়েলি হামলার আগেই যুক্তরাষ্ট্র গোপনে ইসরায়েলকে প্রায় ৩০০টি হেলফায়ার ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করেছে বলে জানাচ্ছে মিডল ইস্ট আই-এর এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গতকাল শুক্রবার ইরানের রাজধানী তেহরানে চালানো বিস্ময়কর হামলার কয়েকদিন আগে, গত মঙ্গলবার, মার্কিন প্রশাসন এই ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করে। একইসঙ্গে হামলার জন্য দীর্ঘদিন ধরেই ইসরায়েল বড় পরিসরে অস্ত্র ও গোলাবারুদ সংগ্রহ করে আসছিল।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুই মার্কিন নিরাপত্তা কর্মকর্তার বরাতে মিডল ইস্ট আই জানায়, এই ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহের ঘটনা থেকেই বোঝা যায় যে, ট্রাম্প প্রশাসন আগেভাগেই ইরান হামলার পরিকল্পনা সম্পর্কে অবগত ছিল এবং সম্ভবত একে সমর্থনও করেছিল।
হেলফায়ার একটি আকাশ থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য লেজার-নিয়ন্ত্রিত ক্ষেপণাস্ত্র, যা লক্ষ্যবস্তুকে নিখুঁতভাবে আঘাত হানতে সক্ষম। যদিও এটি পরমাণু স্থাপনায় বিস্ফোরণের জন্য যথাযথ নয়, তবে ক্ষুদ্র ও নির্দিষ্ট লক্ষ্যে আঘাত হানার জন্য এটি কার্যকর।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, ‘‘হেলফায়ার ব্যবহারের জন্য নির্দিষ্ট পরিস্থিতি প্রয়োজন। ইসরায়েল সেই পরিস্থিতি তৈরি করেছিল।’’
ইসরায়েলি হামলায় নিহত হন ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ডের (আইআরজিসি) প্রধান মেজর জেনারেল হোসেইন সালামি, সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেল মোহাম্মদ বাকেরি এবং ইরানের সর্বোচ্চ নেতা খামেনেয়ির ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা আলি শামখানি। হামলার মূল লক্ষ্য ছিল শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা, পরমাণু বিজ্ঞানী ও গুরুত্বপূর্ণ কমান্ড ঘাঁটিগুলো।
এর আগেই মিডল ইস্ট আই জানায়, গত এপ্রিল ও মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ-কে ইসরায়েল একতরফা হামলার পরিকল্পনার বিষয়ে অবহিত করে। সেই পরিকল্পনায় ছিল নিশানা নির্ধারণ, সাইবার হামলার প্রস্তুতি এবং নিখুঁত আঘাত নিশ্চিত করার কৌশল। ট্রাম্প প্রশাসন এই পরিকল্পনায় ব্যাপক আগ্রহ দেখায়।
অথচ বাইরের দৃষ্টিতে ট্রাম্প প্রশাসন যেন ইসরায়েলের আগ্রাসন ঠেকাতে চাচ্ছে—এমন ইঙ্গিত দিয়েছিল। কিন্তু মার্কিন সংবাদমাধ্যম অ্যাক্সিওস জানায়, বাস্তবে তারা কোনো বাধা দেয়নি; কেবল লোকদেখানো আপত্তির ভান করেছিল।
এর আগে ইরানকে পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনায় বসার জন্য ৬০ দিনের সময়সীমা দিয়েছিল ট্রাম্প প্রশাসন। আলোচনার সেই সময়সীমা শেষ হওয়ার একদিন পরই তেহরানে হামলা চালায় ইসরায়েল।
আলোচনার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র একাধিকবার ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ পুরোপুরি বন্ধের শর্ত রাখে। কিন্তু ইরান জানিয়ে দেয়, তারা এই শর্তে কোনো ধরনের সমঝোতায় যাবে না।
মার্কিন কর্মকর্তাদের বরাতে আরও জানা যায়, আলোচনার পুরো সময়জুড়েই ওয়াশিংটন থেকে তেলআবিবে অস্ত্র ও গোলাবারুদ সরবরাহ অব্যাহত ছিল। ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহের বিষয়টি জনসমক্ষে প্রকাশ করতে হয়নি, কারণ এটি আগেই অনুমোদিত ৭৪০ কোটি ডলারের একটি অস্ত্র চুক্তির আওতায় ছিল।
একুশে সংবাদ/ চ.ট/এ.জে