যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্কের মধ্যকার সম্পর্ক এখন টানাপোড়েনের কেন্দ্রে। সরকারি ব্যয় সংকোচন ও কর সংস্কারবিষয়ক একটি বিল ঘিরে প্রকাশ্যে এসেছে তাদের মতানৈক্য। ট্রাম্প সরাসরি বলেছেন, “ইলনের কার্যকলাপে আমি খুবই হতাশ”।
গতকাল বৃহস্পতিবার (৫ জুন) হোয়াইট হাউজের ওভাল অফিসে জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রেডরিশ মের্জের সঙ্গে বৈঠকের আগে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। সেখানে মাস্ক প্রসঙ্গে বলেন, “ইলনের সঙ্গে আমার ভালো সম্পর্ক ছিল। তবে ভবিষ্যতে সেটা থাকবে কি না, আমি নিশ্চিত নই।”
সম্প্রতি ট্রাম্প প্রশাসন একটি জনকল্যাণমূলক কর হ্রাস বিল অনুমোদন দেয়, যেটিকে প্রেসিডেন্ট অভিহিত করেন “ওয়ান বিগ বিউটিফুল বিল” নামে। তবে মাস্কের মতে, বিলটি তার নেতৃত্বাধীন ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সি (ডজ)-এর কাজকে পুরোপুরি ভেস্তে দেবে।
মাস্ক অভিযোগ করেন, বিলটি নিয়ে তাকে অবহিত করা হয়নি এবং কংগ্রেসে পাঠানোর আগেই ট্রাম্প অনুমোদন দিয়ে দিয়েছেন। এ নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে নিজের মালিকানাধীন প্ল্যাটফর্ম এক্স-এ সরব হন মাস্ক এবং জনগণকে বিলের বিরুদ্ধে “মাঠে নামার” আহ্বান জানান।
২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে থেকেই ট্রাম্প ও মাস্কের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। নির্বাচনী প্রচারণায় মাস্কের সরব উপস্থিতি ছিল। ক্ষমতায় আসার পর ট্রাম্প তাকে ডজের প্রধান করেন। সেই পদে থেকে মাস্ক হাজার হাজার সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ছাঁটাই, বিদেশি সহায়তা বন্ধ, গবেষণা খাতে ভর্তুকি কমানোসহ নানা কঠোর পদক্ষেপ নেন।
এই সব সিদ্ধান্ত শুরু থেকেই বিতর্কিত ছিল। ডজ এখনো কংগ্রেসের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পায়নি। রিপাবলিকান পার্টির ভেতরেও মাস্কের নিয়োগ নিয়ে ক্ষোভ ছিল। সরকারি কর্মকর্তা ছাঁটাই ও সহায়তা বন্ধের কারণে প্রশাসনের জনপ্রিয়তায় বড় ধস নামে।
মাস্কের অভিযোগ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে ট্রাম্প বলেন, “তিনি আমার সম্পর্কে সবচেয়ে সুন্দর কথা বলেছেন। তিনি এখনও ব্যক্তিগতভাবে আমার বিরুদ্ধে কিছু বলেননি।”
তবে যোগ করেন, “আমার মনে হয়, তিনি ব্যক্তিগত স্বার্থে এই বিলের বিরোধিতা করছেন। কারণ পর্যায়ক্রমে কর সংস্কার এই বিলের সরাসরি প্রভাব পড়বে টেসলার ওপর।”
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের ভেতরে মাস্কের বিরোধিতা এখন শুধুই ব্যক্তিগত নয়, এটি নীতিগত দ্বন্দ্বে রূপ নিয়েছে।
এখন দেখার বিষয়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনিক কাঠামোতে মাস্কের ভূমিকা থাকছে কি না এবং আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্প-মাস্ক সম্পর্ক কোন দিকে মোড় নেয়।
একুশে সংবাদ/ঢ.প/এ.কে