আজ ৯ জিলহজ—পবিত্র হজের দিন। প্রেম, তওবা ও আত্মসমর্পণের অনন্য মহড়া চলছে ঐতিহাসিক আরাফাতের ময়দানে। সারা বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে আসা লাখো হাজি আজ জড়ো হয়েছেন এই পবিত্র ভূমিতে। সৃষ্টিকর্তার নিকট কান্নাভেজা চোখে দোয়া করছেন তারা—নিজের জন্য, পরিবার-পরিজনের জন্য, এবং সমগ্র মুসলিম উম্মাহর জন্য।
সকালে মিনা থেকে রওনা দিয়ে হাজিরা অবস্থান করছেন আরাফাতে। ইসলামি বিধান অনুসারে, আরাফায় অবস্থান ছাড়া হজ পূর্ণ হয় না। আজ জোহর ও আসরের নামাজ একসঙ্গে আদায় করে সূর্যাস্ত পর্যন্ত তাঁরা কাটাচ্ছেন ইবাদত, কান্না ও তাওবায়।
এই ময়দানে হজরত আদম (আ.) ও হাওয়া (আ.) পুনর্মিলিত হয়েছিলেন—তাই আরাফার দিনকে মনে করা হয় মানবতার ঐক্যের প্রতীক। এ ময়দানেই হিজরি দশম সালে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) দিয়েছিলেন তাঁর বিদায় হজের ভাষণ—যেখানে মানবাধিকার, নারী অধিকার, জীবন-মর্যাদা এবং ভ্রাতৃত্বের অমর বার্তা তুলে ধরা হয়।
হাদিসে এসেছে, আরাফার দিনেই আল্লাহ তাআলা জাহান্নাম থেকে সবচেয়ে বেশি বান্দাকে মুক্তি দেন। তাই কেউ দাঁড়িয়ে, কেউ বসে, আবার কেউ দুই হাত তুলে বিলীন হয়ে যাচ্ছেন প্রার্থনায়। আরাফার দিনের প্রতিটি মুহূর্ত হাজিদের জন্য অমূল্য।
চরম গরম থেকে হাজিদের রক্ষা করতে কৃত্রিম বৃষ্টি, বিশুদ্ধ পানির কল, নিরাপত্তা এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক ভিড় নিয়ন্ত্রণসহ নানা প্রযুক্তিগত ব্যবস্থার ব্যবস্থা নিয়েছে সৌদি সরকার। একইসাথে হজের খুতবা এবার অনূদিত হচ্ছে ৩৫টি ভাষায়, যাতে করে বিশ্ববাসী বুঝতে পারেন হজের মূল শিক্ষা।
সূর্যাস্তের পর হাজিরা রওনা হবেন মুযদালিফার উদ্দেশ্যে। খোলা আকাশের নিচে কাটবে তাঁদের রাত, যেখানে তাঁরা একসঙ্গে মাগরিব ও এশার নামাজ আদায় করবেন। এরপর ফজরের নামাজ শেষে রওনা হবেন জামারাতের দিকে, যেখানে পাথর নিক্ষেপ করবেন শয়তানের উদ্দেশে—প্রতীকীভাবে প্রত্যাখ্যান করবেন পাপ ও বিভ্রান্তিকে।
আজকের দিনটি শুধুই হজের কেন্দ্র নয়, বরং মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, তওবা ও আত্মশুদ্ধির অনন্য অধ্যায়। পৃথিবীর নানা প্রান্তে থাকা মুসলমানরাও এই দিনে রোজা রেখে প্রার্থনায় মগ্ন থাকেন, যেন তাঁদের অন্তরজগতও আরাফাতের অনুরণনে কেঁপে ওঠে।
একুশে সংবাদ/স.ট/এ.জে