AB Bank
ঢাকা বুধবার, ০৮ মে, ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

কালের সাক্ষী কবি চন্দ্রাবতীর শিব মন্দির


Ekushey Sangbad
জেলা প্রতিনিধি, কিশোরগঞ্জ
১১:০২ পিএম, ৩১ মে, ২০২৩
কালের সাক্ষী কবি চন্দ্রাবতীর শিব মন্দির

বাংলা সাহিত্য ভান্ডারের প্রথম মহিলা কবি চন্দ্রাবতী। তার জীবনকাহিনী নিয়ে রচিত লোকগাঁথা আজও মানুষের মুখে মুখে। প্রতিভাদীপ্ত কবি চন্দ্রাবতী। ১৫৫০ সালে কিশোরগঞ্জের কাচারি গ্রামে জন্ম। তাঁর পিতামহের নাম যাদবানন্দ, বাবা পন্ডিত দ্বিজ বংশীদাস ও মাতা সুলোচনা। কালের সাক্ষী হয়ে আজও কিশোরগঞ্জের পাতুইয়ার গ্রামে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে অন্যতম তীর্থস্থান কবি চন্দ্রাবতীর স্মৃতিধন্য একটি শিবমন্দির।

 

ইতিহাসপ্রিয় মানুষ এখানে ছুটে আসেন মন্দিরটি দেখতে। সেখানেই ফুটে ওঠে চন্দ্রাবতীর বিরহজীবনের গল্প, তার কবি হয়ে ওঠার কাহিনি।সাহিত্যের প্রতি চন্দ্রাবতীর অনুরাগ ছিলে কৈশোর থেকেই।দস্যু কেনারাম ও ‘মলুয়া’ রচনা করেছেন তিনি। এ ছাড়া তার অসমাপ্ত রচনা ‘রামায়ন । বাবা দ্বিজবংশী দাশ ‘মনসা মঙ্গল’ কাব্য লেখার সময় চন্দ্রাবতীর সহযোগিতা নিয়েছিলেন। এ দুটি পালাকাব্যই ‘ময়মনসিংহ গীতিকায় স্থান পেয়েছে।

 বাল্যকালে চন্দ্রাবতীর বন্ধু ও খেলার সাথী ছিলেন জয়ানন্দ নামের এক অনাথ বালক ৷ জয়ানন্দের নিবাস ছিল সুন্ধা গ্রামে৷ জয়ানন্দ তাঁর নানার বাড়িতে ছোটবেলা থেকে বেড়ে ওঠে ৷ দ্বিজ বংশীদাসের অনেক রচনায় এই দুজনার রচিত ছোট ছোট অনেক পদ রয়েছে ৷ কৈশোর উত্তীর্ন হলে দুজনে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবেন বলে স্থির করেন ৷ বিয়ের দিনও ঠিক হয় ৷ ইতোমধ্যে জয়ানন্দ অন্য এক নারীর প্রেমে পড়ে যান৷ স্থানীয় মুসলিম শাসনকর্তা বা কাজীর মেয়ে আসমানীর অসামান্য রূপে মুগ্ধ হয়ে জয়ানন্দ আসমানীকে একাধিক প্রেমপত্র লেখেন ৷ এই ত্রিকোন প্রেমের ফলাফল হয় মারাত্মক ৷

 

জয়ানন্দের সাথে চন্দ্রাবতীর প্রেমের কথা জেনেও আসমানী তার পিতাকে জানান তিনি জয়ানন্দকে বিয়ে করতে চান ৷ কাজী জয়ানন্দকে বলপূর্ববক ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত করে আসমানীর সঙ্গে তার বিয়ে দেন ৷ ঘটনাটি যেদিন ঘটে সেদিন জয়ানন্দ ও চন্দ্রাবতীর বিয়ের দিন স্থির হয়েছিল ৷ সেদিন সন্ধ্যাবেলা চন্দ্রাবতী বিয়ের সাজে পিত্রালয়ে বসে ছিলেন ৷ তখনই সংবাদ পেলেন জয়ানন্দ ধর্মান্তরিত হয়ে অন্যত্র বিয়ে করেছেন ৷ এরপর শুরু হয় চন্দ্রাবতীর বিরহ বিধুর জীবন ৷ তিনি পিতার কাছে অনুমতি নেন যে সারা জীবন অবিবাহিত থেকে তিনি শিবের সাধনা করবেন ৷ তাই তাঁর পিতা তার জন্য একটি শিবের মন্দির নির্মাণ করিয়ে দেন ৷

 

সাহিত্যের প্রতি অনুরাগ চন্দ্রাবতীর কৈশোরকাল থেকেই ছিল ৷ তিনি বাকী জীবন শিবের উপাসনা ও সাহিত্যচর্চা করে কাটাবেন বলে স্থির করেন ৷ বেশ কিছুকাল পরে জয়ানন্দ বুঝতে পারেন যে, আসমানীর প্রতি তার টানটা ছিল মোহ মাত্র ৷ মনের থেকে তিনি চন্দ্রাবতীকেই প্রকৃত ভালবাসেন৷ জয়ানন্দ স্থির করেন যে চন্দ্রাবতীকে তাঁর মনের কথা জানাবেন ৷

 

 আবার অনেক গবেষকের মতে জয়ানন্দ এসেছিলেন চন্দ্রাবতীর কাছে দীক্ষা নেবার জন্য ৷ এক সন্ধ্যায় জয়ানন্দ ও চন্দ্রাবতীর বিচ্ছেদ হয়েছিল ৷ অপর সন্ধ্যায় সেই বিচ্ছেদ মুছে গিয়ে মিলন হবে দুজনার এই আশায় জয়ানন্দ রওনা দিলেন পাটোয়ারী গ্রামে ৷ জয়ানন্দ যখন গন্তব্যস্থলে পৌঁছলেন তখন সূর্য্যাস্ত হয়ে গেছে, তখন দিন ও রাত্রির সন্ধিক্ষণ ৷ শিব মন্দিরের ভেতর দরজা বন্ধ করে সন্ধ্যারতি ও তপজপে মগ্ন ছিলেন চন্দ্রাবতী ৷ জয়ানন্দ মন্দিরের দরজায় এসে কয়েকবার ডাকলেন চন্দ্রাবতীকে ৷ কিন্তু দরজা বন্ধ থাকায় এবং একাগ্র মনে ধ্যানে নিমগ্ন থাকায় সেই শব্দ প্রবেশ করল না চন্দ্রাবতীর কানে ৷ ব্যর্থ প্রেমিক জয়ানন্দ তখন লালবর্ণের সন্ধ্যামালতী ফুল দিয়ে মন্দিরের দরজায় চারছত্রের একটি পদে চন্দ্রাবতী ও ধরাধামকে চিরবিদায় জানিয়ে সেখান থেকে ফিরে যান ৷ অনেক পরে মন্দির থেকে বেরিয়ে চন্দ্রাবতী বুঝতে পারেন যে দেবালয় কলুসিত হয়েছে ৷

 

 দ্বার পরিষ্কার করার জন্য তিনি কলসী নিয়ে জল আনতে যান পার্শ্ববর্তী ফুলেশ্বরী (স্থানীয় নাম ফুলিয়া) নদীতে ৷ ঘাটে পৌঁছেই চন্দ্রাবতী বুঝলেন সব শেষ ৷ ফুলেশ্বরীর জলে নিজেকে নিমগ্ন করে প্রাণত্যাগ করেছেন জয়ানন্দ ৷ প্রাণহীন দেহ ভাসছে ফুলেশ্বরীর জলে ৷ এই অবস্থায় নিজের আবেগ ধরে রাখতে পারলেন না চন্দ্রাবতী ৷ তিনিও প্রেমিকের সাথে পরলোকে চিরমিলনের কামনায় ফুলেশ্বরীর জলে ডুবে প্রাণত্যাগ করেন।

 

 জয়ানন্দের গ্রাম সুন্ধা খুঁজে পাওয়া যায়নি ৷ তবে ইতিহাসের স্মৃতি বিজড়িত পাটোয়ারী গ্রাম আজও আছে ৷ কিশোরগঞ্জ শহর থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে চন্দ্রাবতী গ্রামে ফুলেশ্বরী নদীর তীরে চন্দ্রাবতীর পূজিত দুটি শিবমন্দির রয়েছে। এই দুটি মন্দিরের মধ্যে একটি অপেক্ষাকৃত ছোট। কবি চন্দ্রাবতী এবং তাঁর জীবনের অনেক ঘটনার সাথে এই মন্দিরগুলোর সম্পৃক্ততা রয়েছে।

 

 ধারনা করা হয়ে থাকে যে এই মন্দিরগুলো ১৬শ শতকে নির্মাণ করা হয়েছিল, যেসময়টিতে কবি জন্ম নিয়েছিলেন। মন্দিরগুলোর কাছে দর্শনার্থীদের জন্য বসার ব্যবস্থা রয়েছে। প্রতিনিয়ত বা ছুটির দিনে এখানে, কাছে কিংবা দূরের অনেক পর্যটকের সমাগম হয়ে থাকে।

 

যেভাবে যাবেন কবি চন্দ্রাবতীর শিব মন্দিরেঃ ঢাকার কমলাপুর থেকে ট্রেনে অথবা মহাখালি বা সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ড থেকে বাসে কিশোরগঞ্জে যেতে হবে। কিশোরগঞ্জ থেকে অটোরিকশা বা রিকশায় নীলগঞ্জ হয়ে পৌঁছতে হবে পাতুইয়ার গ্রামে। এ গ্রামেই কবি চন্দ্রাবতীর শিব মন্দির দেখতে পাবেন।

 

একুশে সংবাদ.কম/আ.র.ভ/বিএস

Link copied!