শরতের আগমন মানেই সাদা মেঘ, নীল আকাশ আর কাশফুলের সারি—বাংলা প্রকৃতির এক অনুপম দৃশ্যপট। মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার পথের ধারে, মাঠে-ঘাটে, নদীর তীরে ও পুকুরপারে এখন শোভা পাচ্ছে সাদা কাশফুল।
শরতের আগমনের বার্তা নিয়ে এই ফুল প্রকৃতিকে সাজিয়েছে আপন রূপে। বাংলা সংস্কৃতিতে কাশফুল শুধু ঋতুর প্রতীক নয়, এটি সৌন্দর্য, শান্তি ও নান্দনিকতারও প্রতিচ্ছবি। মৃদুমন্দ বাতাসে কাশফুলের দোল যেন শরতের সঙ্গীত হয়ে বাজে।
বাংলা বর্ষপঞ্জির ভাদ্র ও আশ্বিন মাস জুড়ে চলে শরৎকাল, যা বর্ষার পরবর্তী এবং হেমন্তের পূর্ববর্তী তৃতীয় ঋতু। কবি-সাহিত্যিকরা একে ‘ঋতুর রানী’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। বর্ষার বিরামহীন বর্ষণের সমাপ্তি ঘটলে শরতের নতুন রূপ প্রকৃতিকে সাজায়। শুভ্র মেঘ ভেসে চলে নীল আকাশে, দীপ্তোজ্জ্বল হয় সূর্যের কিরণ, আর নির্মল হয় বাতাস। পৃথিবীর চারটি প্রধান ঋতুর একটি এই শরৎকাল, আর ছয় ঋতুর দেশ বাংলাদেশে প্রতিটি ঋতুই আলাদা বৈচিত্র্যে ভরপুর। শরতের শিউলি আর কাশফুল সেই বৈচিত্র্যের অন্যতম সৌন্দর্য।

কাশগাছ ছন গোত্রীয় ঘাসজাতীয় উদ্ভিদ। পালকের মতো নরম, ধবধবে সাদা ফুল মন জুড়িয়ে দেয় সবার। পাতাগুলো খসখসে ও ধারালো। গ্রামবাংলায় এই গাছ একসময় বহুল ব্যবহৃত ছিল—জ্বালানি, ঘর-বাড়ির ছাউনি, ঝাড়ু তৈরি ও পানের বরজ ঢাকতে। কালের বিবর্তনে কাশফুল অনেকটাই বিলুপ্ত হলেও এখনও কমলগঞ্জের শমশেরনগর, আদমপুর, ইসলামপুর, মাধবপুর, আলীনগরসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে কাশফুল দেখা যায়।
কাশবাগানে ঘুরতে আসা সালাউদ্দিন ও কামাল বলেন, “কাশফুল দেখতে অনেকটা ময়ূরের পালকের মতো, তবে রং একেবারেই ধবধবে সাদা। আগে গ্রামবাংলায় এর ব্যবহার ছিল ব্যাপক। এখানে এসে মন ভরে গেল।”
আরেক দর্শনার্থী আহমেদুজ্জামান আলম ও রাজন আবেদীন জানান, “কাশফুল শুধু শরতের প্রকৃতির সৌন্দর্য বাড়ায় না, ঝরে যাওয়ার পর এর ডগা ব্যবহার করে ঝাড়ুসহ নানা জিনিস তৈরি করা হয়। বাংলার ছয় ঋতুর সৌন্দর্যের মধ্যে শরতের কাশফুল এক অনন্য বিস্ময়। যেন প্রকৃতির প্রাকৃতিক ক্যানভাসে সাদা রঙে আঁকা তুলির আঁচড়।”
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাখন চন্দ্র সূত্রধর বলেন, “উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় নদীর ধারে, রাস্তার পাশে ও ফাঁকা জমিতে কাশফুলের অপরূপ দৃশ্য সত্যিই মনোমুগ্ধকর। এটি সবার মনকে ছুঁয়ে যাবে।”
একুশে সংবাদ/এ.জে