AB Bank
ঢাকা মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad
ekusheysangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

চলন্ত ট্রামে পিছুটানের গল্প


Ekushey Sangbad
বিনোদন ডেস্ক
০৭:৩৬ পিএম, ১৭ অক্টোবর, ২০২২
চলন্ত ট্রামে পিছুটানের গল্প

কলকাতাকে রোমান্টিকতার আদুরে মোড়কে সুন্দর করে সাজানোর নেশা বাঙালির অনেক কালের। তার সঙ্গে খুব সহজেই তারা টেনে নেয় ঐতিহ্যকে, টেনে নেয় পুরনো দিনের প্রতি এই অদম্য হাতছানিটাকে। বাঙালি যেন প্রত্যেক বছর নতুন করে পুরনোকে আবার খুঁজতে চায়। বলিউডি জাঁকজমকের আড়ম্বরে না, কলকাতার নিজস্বতায় মোড়া এক সৌন্দর্যের যাপনে। আবার তার সঙ্গে যদি কিছু দিন পরেই পুজো আসে, শরতের আকাশ, মেঘদলের ফুরফুরে গানের অসম্ভব মন ভাল করা দ্যোতনায় শহরটাকে প্রতি বছর নতুন করে খুঁজে পায় সকলেই। বহু বছর আগে আমজাদ আলি খান, ‘ক্যালকাটা সিটি’ বলে একটি অসম্ভব সুন্দর কম্পোজিশন করেছিলেন। সেই সুরের মূর্ছনায় যেন ভীষণ সরল, পাহাড়ি ঝর্নার মতো একটি মিষ্টত্ব খুঁজে পাওয়া যেত কলকাতার বুকে। একটি আনন্দময় কলকাতা, একটি প্রাণবন্ত কলকাতা, যে সব কিছুর শেষে একটি যৌথতার কথা বলে। কিছু কিছু খুব পরিচিত সুর বৃত্তাকারে ঘুরে চলে শহুরে মনে, পুজোর সন্ধ্যাবেলায় তাই ইচ্ছা করে হঠাৎ প্রেমিকার সঙ্গে ট্রামে উঠে পড়তে। সেই পিছুটানের সংস্কৃতি যেন কোনও না কোনও ভাবে ঠিক জানান দিয়ে যায়, যে সে এখনও আছে।

 

ট্রাম চলছে শহরের বুকে, বাইরে তখন প্রবল কোলাহল, পুজো চলে আসার আগে শেষ কেনাকাটার ব্যস্ততা। আর কয়েক দিন কাটলেই পুজো। রাসবিহারী থেকে বালিগঞ্জ ভয়ঙ্কর ভিড়, ফুটপাথ থেকে লোক উপচে পড়ছে রাস্তায়। ব্যস্ত কলকাতার বুকের উপর ধীর গতিতে ট্রাম চলছে টালিগঞ্জ থেকে বালিগঞ্জ। বাইরের লোকজন অবাক হয়ে দেখছে ট্রামকে। পোস্টকার্ডে প্রায় ছবি হয়ে থেকে যাওয়া কলকাতার পতাকাবাহক হয়ে রয়ে গিয়েছে ট্রামটা। তার ভিতরে একটি গল্প বলে চলেন কিছু ছেলেমেয়ে। ছবিটা খুব অদ্ভুত। চলন্ত ট্রামের মধ্যে আলো লাগিয়ে, রকমারি বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করে গল্প বলতে নেমে পড়েছেন একদল অত্যুৎসাহী ছেলেমেয়ে। তাঁরা গল্প বলছেন কোনও এক অরণ্যের, কোনও এক সুচেতনার। কী হল, কী হতে পারত, তা নিয়েই তাঁদের প্রেমের গল্প ‘উড়োচিঠি’। ‘সম্পর্ক’ নাট্যদল প্রযোজিত এই দেড় ঘণ্টার নাটকটির পরপর দু’টি শো হল ২২৩ নম্বর ট্রামে।

 

একটি চলন্ত ট্রামের মধ্যে থিয়েটার করা সহজ নয়। অনেক ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। তার মধ্যেই একটি ট্রামকে অন্তরঙ্গ থিয়েটারের একটি ক্ষেত্র হিসাবে গড়ে তুলতে বেশ কিছুটা সফল হয়েছে ‘সম্পর্ক’। একটি চলন্ত গাড়িতে নাটক করতে গেলে কিছু যান্ত্রিক সমস্যা থাকা প্রত্যাশিতই। এ ক্ষেত্রেও তার অন্যথা হয়নি। কিন্তু নাটকের অন্তরঙ্গতা কখনওই সেই যান্ত্রিক সমস্যাকে বেশি দূর বাড়তে দেয়নি। বরং দর্শকদের সঙ্গে সহজ-সরল ভঙ্গিতে মিশে যাওয়ার জন্য গোটা অভিজ্ঞতা দুই পক্ষের কাছেই অনেক বেশি সুন্দর হয়ে যায়। এই জন্য সবচেয়ে বেশি কৃতিত্ব প্রাপ্য আবহসঙ্গীতের। দু’টি গান ছাড়া বাকি প্রায় পুরো আবহসঙ্গীতই এই নাটকটির জন্য আলাদা করে তৈরি করা। যেই অন্তরঙ্গ অনুভূতি কোনও বড় জায়গায় পাওয়া সম্ভব নয়, এই সহজ সুরের ব্যবহারে অনায়াসেই এখানে করতে সক্ষম হয় ‘সম্পর্ক’।

 

থিয়েটারের দর্শক এমন পরিবেশে অনভিজ্ঞ, তাই ট্রাম চলতে শুরু করলেই উৎসাহ বাড়ে সকলের মধ্যে। এখানেই থিয়েটারের প্রথম সার্থকতা। একটি ভালবাসার যোগ স্থাপন করা হল দর্শক আর শিল্পীর মধ্যে। এই ভাবেই বেশ একটি মিষ্টি অনুভূতির সঙ্গে শুরু হয়ে গল্প। পটভূমি খুব একটা অপরিচিত নয়। সেই পাড়ার প্রেম, সেখান থেকে একসঙ্গে বড় হয়ে ওঠা, তার পর নানা জটিলতা, ইত্যাদি ইত্যাদি। এর মধ্যে কোনওটিই দর্শকদের কাছে অচেনা নয়। ঝোলা কাঁধে ঘুরে বেড়ানো প্রেমিক, জয় গোস্বামীর কবিতা পড়তে পছন্দ করা প্রেমিকা, ট্রাম, বইমেলা, সরস্বতী পুজো, চিঠি— এই পুরোটাই দেখে দেখে অভ্যস্ত কলকাতা শহর। তা হলে ‘সম্পর্ক’-র এই চেষ্টাটি আলাদা হয়ে যায় কোথায়?

 

উত্তরটাও সকলের জানা। সেই ট্রামটিই। একটি চলন্ত ট্রাম যে একটি বিকল্প থিয়েটারের ক্ষেত্র হিসাবে সেজে উঠতে পারে, সেটিই ‘উড়োচিঠি’ চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। ‘সম্পর্ক’ এর আগেও এ রকম বিকল্প থিয়েটারের ক্ষেত্র তৈরি করেছে নিজেদের চেষ্টায়। গরিয়াহাটের ‘ট্রেডার্স অ্যাসেম্বলি’র ছাদে হয়েছিল তাদের আর একটি প্রযোজনা ‘যুদ্ধ শেষে’। ছাদের চিলেকোঠা, ট্যাঙ্ক, সব কিছুকে কাজে লাগিয়ে একটি অদ্ভুত নতুন থিয়েটার স্পেস তৈরি করেছে তারা। সেখানেও একাধিক পপুলার কালচারের নানা অত্যন্ত পরিচিত লেখা বা গানের ব্যবহার করে গল্প বলার চেষ্টা করে তারা। এখানেও একই ছকে বাজিমাত করেছে ‘সম্পর্ক’। জিতাদিত্য চক্রবর্তীর নির্দেশনায় ‘উড়ো চিঠি’ খুব সহজেই ট্রামকে আপন করে নেয়। দর্শক, থুড়ি, যাত্রীদের সঙ্গে একটি নিবিড় যোগাযোগ তৈরি করে তারা। তা খুব সহজেই প্রকাশ পায় দর্শকের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে। খুব সূক্ষ্ম কিছু আচরণে অভিনেতারা বুঝিয়ে দেন যে, তাঁরা দর্শকদের সঙ্গে নিয়েই গল্প বলতে ইচ্ছুক।

 

একটি প্রশ্ন থেকেই যায়, যে ট্রাম কি আদতে কোনও থিয়েটার চর্চার ক্ষেত্র হয়ে উঠতে পারে? নাকি একটি নাটকের কয়েকটি শো করেই থামিয়ে দিতে হবে। তা হলে ট্রাম কি শুধুমাত্র সে কালের প্রতীক হয়েই থেকে যাবে? ট্রাম যে সাধারণ পরিবহণের অংশ, সেখান থেকে বিচ্ছিন্ন করে একটি রোমান্টিকতার মোড়কে সাজিয়ে রাখা ‘ভিন্টেজ’ বস্তু হিসাবেই কি থেকে যাবে? এই প্রশ্নগুলির উত্তর ভবিষ্যতে হয়তো পাওয়া যাবে। কিন্তু সব প্রশ্নের মধ্যেও কোথাও গিয়ে খুব কাছের হয়ে থেকে যেতে পারে ‘উড়োচিঠি’।

 

‘কী যে হল কী যে ভেবেছিলেম, ভাবছ কেউ আর দেখছে না।’ এই গানটি বার বার ফিরে আসে ‘উড়োচিঠি’-তে। এই কী হল, কী হল না, বলা না-বলা কথার একটি শহুরে মিষ্টি গল্প হিসাবে দর্শকদের মনে দানা বাঁধে এই প্রযোজনা। ফেলে আসা কলকাতার একটি প্রতীক হিসাবে, ট্রামের মধ্যে ‘সম্পর্ক’ গল্প বলতে বলতে যায়, মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকেন যাত্রীরা। যদিও অনেক প্রশ্ন থেকে যায় শহরে ট্রামের উপস্থিতি নিয়ে। সেই অর্থনৈতিক রাজনৈতিক সামাজিক অনিশ্চয়তার কথা হয়তো নিজেদের অজান্তেই সকলকে মনে করিয়ে দেয় ‘সম্পর্ক’। ট্রাম এখনও শহুরে প্রেক্ষাপটে প্রাসঙ্গিক কি না, যেন ধন্দের উদ্রেক ঘটায় ‘উড়োচিঠি’। কিন্তু সেই আলোচনার ক্ষেত্র এই মিষ্টি গল্পের থেকে অনেক দূরে। কলকাতার বুকে কলকাতারই সেই স্বভাবসিদ্ধ প্রেমের গল্পকে নতুন একটি মাধ্যমে ব্যক্ত করেছে ‘সম্পর্ক’। তার সারল্য, সহজাত শিশুসুলভ হাসিমুখে গল্প বলে চলা মনে ধরতে পারে যে কোনও মানুষের।

একুশে সংবাদ/ আ.বা/ রখ

Link copied!