বোয়ালখালীতে দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে কৃষকের ঐতিহ্যবাহী কালোজিরা ধানের আবাদ। একসময় কৃষকরা বিভিন্ন ধানের পাশাপাশি কালোজিরা ধানের চাষ করতেন। কিন্তু অন্যান্য ধানের তুলনায় বেশি খরচ, কম ফলন এবং বীজের সংকটের কারণে কৃষকেরা কালোজিরা ধান চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন। ফলে এর জায়গা দখল করে নিয়েছে বিভিন্ন উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান। কৃষকদের দাবি, সরকারিভাবে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা ও প্রদর্শনী প্লট মিললে এই বিলুপ্তপ্রায় ধান পুনরায় ফিরে আসতে পারে।
বুধবার বিকেলে বোয়ালখালীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, আমন মৌসুমে সর্বত্রই উচ্চ ফলনশীল ধানের চাষ হয়েছে। কালোজিরা ধানের আবাদ প্রায় বিলুপ্তপ্রায়। হাতে গোনা কয়েকজন সীমিত আকারে চাষ করলেও পরিমাণ খুবই কম। তবুও আশার কথা হলো—বিচ্ছিন্নভাবে হলেও সারোয়াতলীর কৃষক নুরুল আলম, করলডেঙ্গার কৃষক কাওসার এবং পোপাদিয়ার কৃষক আনোয়ার কালোজিরা ধানের চাষ ধরে রেখেছেন।
তারা বলেন, একসময় কৃষক পরিবারের ঐতিহ্যের অন্যতম অংশ ছিল সুগন্ধিযুক্ত কালোজিরা, বিন্নী, কাশিয়া-বিন্নি, সরুসহ নানা জাতের ধান। এ ধান ওঠার মৌসুমেই গ্রামবাংলা মাতত নবান্নের উৎসবে। এই চিকন চাল দিয়ে পিঠা–পুলি, পোলাও, বিরিয়ানি, খিচুড়ি, ক্ষীর, পায়েস, ফিরনি, জর্দাসহ নানা সুস্বাদু খাবার তৈরি করে আপ্যায়ন করা হতো প্রতিবেশীদের। জামাই এলে সেও পেত বিশেষ আপ্যায়ন। এখন এসবই অতীত স্মৃতি। খাদ্যের চাহিদা বাড়ায় সারাদেশ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে প্রকৃতিবান্ধব দেশি ধানের এসব ঐতিহ্যবাহী জাত।
কৃষকেরা জানান, কালোজিরা ধানের ফলন খুবই কম। যেখানে অন্য জাতের ধানে প্রতি কানিতে ৮০ থেকে ১০০ আড়ি ফলন হয়, সেখানে কালোজিরা ধানে মেলে সর্বোচ্চ ৩০ আড়ি ফলন। তবে বাজারে এর দাম দ্বিগুণ—প্রতি কেজি চাল ৮০ থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত। ফলন কম হলেও গ্রামের গৃহস্থ পরিবারে এই চালের কদর এখনও রয়েছে। হাট–বাজারে এখন প্রায় পাওয়া যায় না বললেই চলে— ফলে এটি বিলুপ্তির পথে ধাবিত হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, ৫ বছর আগে বোয়ালখালীতে ২৫ হেক্টর জমিতে কালোজিরা ধান চাষ হতো। বর্তমানে তা কমে মাত্র ৫ হেক্টরে দাঁড়িয়েছে।
‘কালোজিরা ধানের আবাদ কমে যাওয়ার কারণ’ সম্পর্কে কৃষি কর্মকর্তা মো. শাহানুর ইসলাম বলেন,
“বর্তমানে আমন ধানের অনেক উচ্চ ফলনশীল জাত রয়েছে, যেগুলোর ফলন বেশি এবং রোগ–পোকামাকড়ের আক্রমণ কম। এ কারণে কৃষকেরা এসব জাতের দিকে ঝুঁকছেন। কালোজিরা ধানের ফলন কম হওয়ায় এবং উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় কৃষকের আগ্রহ ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে।”
একুশে সংবাদ/এ.জে



একুশে সংবাদের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

