মেঘনার ভাঙ্গনে ভিটেমাটিসহ সব শেষ সিরাজের। জীবন ও জীবিকা নিয়েও শংকিত এখন তার পরিবার। সংসারেরর টানাপোড়েন, ক্ষুধা ও দারিদ্র নিয়ে অস্তিত্বের সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে সে।
৫৫ বছর বয়সী মো. সিরাজ। এক সময় তার সবই ছিল। হাসি-খুশি দিন কেটেছিল তার। তবে নদী ভাঙনে সবই বিলীন হয়ে গেছে সিরাজের। রাক্ষুসে মেঘনা তাকে পথে বসিয়েছে। যার জন্য বাধ্য হয়ে ২০ বছর আগে ভোলার লালমোহন উপজেলার কালমা ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের চরছকিনা এলাকায় অবস্থিত শ্বশুর বাড়িতে স্থানীয়দের সহযোগিতায় একটি টিনের ঘর তুলে বৃদ্ধা মাসহ স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে থাকতে শুরু করেন সিরাজ। এখানে আয়ের উৎস হিসেবে একটি অটোরিকশা ভাড়ায় চালান তিনি। সিরাজের সংসারে তার বৃদ্ধা মা, স্ত্রী, চার মেয়ে ও এক প্রতিবন্ধী ছেলে রয়েছেন। ২০ বছর আগে যে টিনের ঘরটি তুলেছিলেন, তা-ও এখন নড়বড়ে হয়ে পড়েছে। বৃষ্টি হলে ভেতরে পানি পড়ে। তাই টিনের চাউনির ওপর দিয়েছেন তেরপাল। ওই ঘরটিও শাশুড়ির জমিতে। নিজের বলতে বর্তমানে তার কোনো সম্পদ নেই। সিরাজ বলেন, বৃদ্ধা মা, স্ত্রী ও চার মেয়ে এবং এক ছেলে সন্তানকে নিয়ে আমার সংসার। তবে সন্তানদের মধ্যে দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। তাদের স্বামীর আর্থিক অবস্থা ভালো না হওয়ায় তারাও বিয়ের পর থেকে আমার কাছেই থাকে। সবাইকে নিয়ে সংসার চালাতে অনেক কষ্ট করতে হয়। আয়ের সম্বল বলতে কেবল একটি অটোরিকশা। ওই অটোরিকশাটিও আমার না, ভাড়ায় চালাই। অটোরিকশা দিনশেষে ওই অটোরিকশা ভাড়া দিতে হয় ৩০০ টাকা। এরপর বাকি যা থাকে তা দিয়েই সংসার চালাই। তাই সংসারে অভাব-অনটন লেগেই থাকে।
সবাইকে নিয়ে যেই ঘরটিতে থাকি, সেটিরও এখন বেহাল দশা। নতুন করে ঘরটি মেরামতের সাধ্য নেই আমার। তাই তেরপাল দিয়েছি টিনের চাউনির ওপর। আর ঘরটি যে জমিতে, সেই জমিটিও আমার না। শাশুড়ি দয়া করে সেখানে থাকতে দিয়েছেন। এ ছাড়া শরীরে এখন নানান রোগ বাসা বেঁধেছে। বৃদ্ধা মা-ও অসুস্থ। নিয়মিত মাকে ওষুধ কিনে দিতে হয়, নিজের জন্যও কিনতে হয় ওষুধ।
তিনি আরো বলেন, আমার নিজের কোনো স¤পদও নেই। শাশুড়ির জমিতে ঘর তুলে থাকছি। অথচ কত মানুষকে সরকারি ঘর দেওয়া হয়েছে। আমি এতো অসহায় হওয়ার পরেও ঘরের জন্য আবেদন করে কোনো ঘর পাইনি। এ ছাড়া কত মানুষ সরকারি চালও পান। আমি সেই চাল সুবিধা থেকেও বঞ্চিত। আমার মায়ের বয়স ৭০-এর চেয়েও বেশি, তিনিও কোনো ভাতা পান না। আসলে গরীবের খোঁজ কেউ রাখে না! তাই সরকারের কাছে আমার দাবি; শিগগিরই যেন আমাকে জমিসহ আশ্রয়ণের একটি ঘর এবং সরকারি চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। একইসঙ্গে আমার বৃদ্ধা মাকে যেন একটি বয়স্ক বা বিধবা ভাতা করে দেওয়া হয়। লালমোহন উপজেলা প্রশাসন থেকে সাহায্যের আশ্বাস পেলেও এখনো কিছুই মিলেনি তার ভাগ্যে।
একুেশ সংবাদ/ এমএইচ



একুশে সংবাদের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

