গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিভিন্ন অনিয়মের বিষয়ে জনৈক ব্যক্তি দুদকের হট লাইন (১০৬) নাম্বারে ফোন করে অভিযোগ করেন। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে প্রধান কার্যালয়ের কর্মকর্তার পরামর্শে ও নির্দেশে এ হাসপাতালে অভিযান পরিচালনা করা হয়।
বুধবার (১০ ডিসেম্বের) সকালে থেকে দুপুর পর্যন্ত দুর্নীতি দমন কমিশনের গাজীপুর জেলা সমন্বিত কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক এনামুল হাসানের নেতৃত্বে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অভিযান পরিচালনা করা হয়।দুদকের তদন্তকারী দলের সদস্যরা দ্বিতীয় তলায় ভর্তিকৃত রোগীদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় তারা অভিযোগ করেন, হাসপাতাল থেকে সরকারি ওষুধ না দেওয়ায় তাঁরা বেশির ভাগ ওষুধ বাইরের ফার্মেসি থেকে কিনে নিয়ে আসেন।
অভিযানের সময় দুদকের কর্মকর্তারা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিভিন্ন বিভাগ পরিদর্শন করে রোগী ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন। তারা চিকিৎসা ও প্রশাসনিক নথিপত্র যাচাই করেন। আনুষ্ঠানিক প্রতিবেদন এখনো না দেওয়া হলেও প্রাথমিকভাবে বেশ কিছু অনিয়মের প্রমাণ পাওয়ার কথা স্বীকার করেন।
দুদকের গাজীপুর কার্যালয়ে সহকারী পরিচালক এনামুল হাসান বলেন, জনৈক ব্যক্তি দুদকের হট লাইনে ফোন করে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিভিন্ন অনিয়মের বিষয়ে অভিযোগ করেন। অভিযান পরিচালনার সময় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আউটডোর, রান্নাঘর ও জরুরী বিভাগে পর্যবেক্ষণ করি। পর্যবেক্ষণে বেশ কিছু অনিয়ম ধরা পড়ে। সেগুলো হলো স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎকদের অনুপস্থিতি, পরিবেশ অপরিচ্ছন্ন, সেবার মান অনেক নি¤œ, ঔষধ বিতরণে সমস্যা, রোগীদেরকে হাসপাতাল থেকে ঔষধ না দিয়ে বাহির থেকে ক্রয় করাপর পরামর্শ দেওয়া, ভর্তি রোগীদেরকে নি¤œমানের খাবার পরিবশেন, রোগীদেরকে নির্ধারীত পরিমানের কম খাবার পরিবশেন করাসহ আরো কিছু অনিয়ম পাওয়া যায়। পরে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্তকর্তাসহ আমরা আমাদের পরিচয় প্রকাশ করি এবং দুদকের নির্ধারীত ইউনিফর্ম পড়ে হাসপাতালের অন্যান্য কক্ষ ভিজিট করে অনিয়ম ধরা পড়ে।
পরে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্তকর্তাকে সাথে নিয়ে রান্না ঘরে অভিযান চালালে যেসব অনিয়ম পাওয়া যায় সেগুলো হলো ৫০ জন রোগীর জন্য মাছ প্রয়োজন ৮ কেজি ২০০ গ্রাম, সেখানে রান্না ঘরে মাছ পেয়েছি মাত্র ৫ কেজি, দেড় কেজি ডাল থাকার কথা থাকলেও দেয়া হয়েছে মাত্র ৫০০ গ্রাম, দেড় লিটার তেল দেয়ার কথা থাকলেও দেয়া হয়েছে মাত্র ৫০০ গ্রাম, ৫০জন রোগীর জন্য ৫০টি দেয়ার কথা থাকলেও অদ্য বাজারের তালিকায় ৪০টি লিখা রয়েছে। বাস্তবে গণনা করে মাত্র ৩৪ পিছ ডিম পাওয়া গেছে।
এছাড়াও হাসপাতালের রোগীর আসনে সিট নাম্বার লেখা না থাকাসহ নানা ধরনের অসঙ্গতি পাওয়া যায়। একজন রোগী ৮টি ঔষধ লেখা থাকলেও ৩টা, ৪টা, পাঁচটি ঔষধ বাহির থেকে আনা হয়েছে। বিষয়টি জানতে চাইলে ঔষধ গুলো সাপ্লাই নেই বলে হাসপাতাল থেকে আমাদেরকে জানানো হয়। কিছু ঔষধ আছে চিকিৎসক লিখেই নাই, অথচ ইনচার্জ বা নার্সরা রেজিষ্টারে বিতরণ দেখিয়েছে। আমরা যে অভিযোগের প্রেক্ষিত্রে এসেছিলাম সেগুলোর সত্যতা পেয়েছি। যে সমস্যাগুলো পেয়েছি তা রিপোর্ট আকারে আমরা কমিশনে জমা দিবো। কমিশন নিয়ম অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্তকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, সারা দেশে এখন ওষুধের ঘাটতি রয়েছে, যার কারণে হাসপাতালে পর্যাপ্ত ওষুধ নেই। এই শীত মৌসুমে প্রচুর রোগী আসে চিকিৎসাসেবা নিতে। হিমশিম খেতে হয় চিকিৎসকদের। তারপরও সবাইকে চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করছেন তারা।
একুেশ সংবাদ/ এমএইচ



একুশে সংবাদের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

