ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) এর গুলিতে জীবননগর উপজেলার মাধবখালী সীমান্তে নিহত বাংলাদেশী যুবক শহিদুল ইসলামের লাশ ৮ দিন পর ফেরত দেওয়া হয়েছে। শনিবার বিকেল সাড়ে ৪টায় জীবননগর উপজেলার চ্যাংখালী সীমান্তের শূন্য রেখায় উভয় দেশের সীমান্তরক্ষীদের মধ্যে পতাকা বৈঠকের পর শহিদুল ইসলামের লাশ বিজিবির কাছে হস্তান্তর করা হয়।
আনুষ্ঠানিকভাবে মরদেহ গ্রহণ করেন বিজিবি মহেশপুর-৫৮ ব্যাটালিয়নের সহকারী পরিচালক মুন্সী ইমদাদ হোসেন এবং জীবননগর থানার ওসি (ভারপ্রাপ্ত) রিপন কুমার দাস। সঙ্গে ছিলেন জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মকবুল হাসান।
এ সময় উভয় দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যদের ছাড়াও দু`দেশের পুলিশ এবং শহিদুল ইসলামের স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে ৩০ নভেম্বর একই সীমান্তে পতাকা বৈঠকে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিজিবির পক্ষ থেকে বিএসএফের কাছে কড়া প্রতিবাদ জানানো হয় এবং শহিদুল ইসলামের লাশ দ্রুত ফেরত দেওয়ার দাবি জানানো হয়।
প্রসঙ্গত, জীবননগর উপজেলার মাধবখালী সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে দু`সন্তানের জনক শহিদুল ইসলাম (৩৭) নিহত হন গত ২৯ নভেম্বর বিকাল সাড়ে ৪টার সময়। ওই দিন একদল মাদককারবারী ভারতের অভ্যন্তরে মাদক আনতে যাওয়ার সময় এই ঘটনা ঘটে। শহিদুল ইসলামের পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, বিএসএফের গুলিতে তিনি নিহত হয়েছেন।
শহিদুল ইসলাম জীবননগর উপজেলার গয়েশপুর গ্রামের উত্তরপাড়ার নস্কর আলীর ছেলে। তাঁর স্ত্রী নাসরিন আক্তার জানান, শনিবার বিকেলে মাধবখালী সীমান্তের দোয়ালের মাঠে শহিদুল ইসলাম গরুর জন্য ঘাস কাটতে গিয়েছিলেন। এসময় বিএসএফ সদস্যরা শহিদুল ইসলামকে ধরে খুব কাছ থেকে গুলি করে, ফলে তিনি ঘটনাস্থলেই নিহত হন। ভারতে তার পরিচিতজনরা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার বিএসএফের ৩২ ব্যাটালিয়নের কমান্ডেন্ট সুজিত কুমারের বরাত দিয়ে বিজিবির মহেশপুর-৫৮ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল রফিকুল আলম পিএসসি জানান, প্রথমে বিএসএফের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল শহিদুল ইসলাম আহত হয়েছেন। পরে ওই দিন রাত ৮টায় বিএসএফ বিজিবিকে জানায়, শহিদুল ইসলাম নিহত হয়েছেন।
স্থানীয়রা জানায়, জীবননগর উপজেলার সীমান্ত ইউনিয়নের গয়েশপুর গ্রামের শহিদুল ইসলামসহ ৬-৭ জন শনিবার বিকেলে ভারতে মাদক আনতে যান। তারা মাধবখালী সীমান্তের ৭০ নম্বর মেইন পিলার থেকে ২০০ গজ ভারতের অভ্যন্তরে পৌঁছালে ভারতের মাটিয়ারী ক্যাম্পের টহলরত বিএসএফ সদস্যদের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েন। শহিদুল ইসলাম এসময় তার হাতে থাকা হাসুয়া দিয়ে বিএসএফের উপর চড়াও হন। এক পর্যায়ে বিএসএফ সদস্যরা এক রাউন্ড গুলি ছোড়েন।
বিএসএফের গুলিতে শহিদুল ইসলাম আহত হলে তাকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়ার পথে মৃত্যু হয়। শহিদুল ইসলামের মৃতদেহ ওই রাতে কৃষ্ণগঞ্জ থানার হেফাজতে রাখা হয়। পরের দিন রোববার দুপুরে কৃষ্ণনগর জেলা হাসপাতালে শহিদুল ইসলামের মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয় এবং হাসপাতালের হিমঘরে লাশ রাখা হয়।
একুশে সংবাদ/এ.জে



একুশে সংবাদের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

