চাঁদপুরে কিস্তির ঋণ শোধ করতে না পেরে মোঃ সুলতান মাহমুদ রুবেল (৩৮) নামে চার সন্তান জনক হতাশাগ্রস্থ হয়ে বিষপানে আত্মহত্যা করেছেন। বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) রাত আনুমানিক ৩টায় চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
রুবেল চাঁদপুর সদর উপজেলার শাহমাহমুদপুর ইউনিয়নের শাহতলী গ্ৰামের গাজী বাড়ির মৃত মোঃ দুলাল গাজীর ছেলে। তিনি পেশায় একজন রিকশাচালক এবং তার স্ত্রী হালিমা বেগম বিভিন্ন বাসা বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করেন।
খবর পেয়ে চাঁদপুর মডেল থানার উপ পরিদর্শক বিল্লাল হোসেন নিহত রুবেলের মরদেহ উদ্ধার করে সুরতহাল এবং ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেন।
হতভাগা সুলতান মাহমুদ রুবেলের স্ত্রী হালিমা বেগম জানান, আর স্বামী পেশায় একজন রিক্সা চালক। দাম্পত্য জীবনে তাদের দুই ছেলে ও দুই কন্যা সন্তান রয়েছে। কয়েক বছর আগে সে এক্সিডেন্টে আহত হওয়ার পর চিকিৎসার জন্য এলাকার বিভিন্ন মানুষ এবং এনজিও থেকে অনেক টাকা কিস্তিতে ঋণ করেন। সেই টাকা পরিশোধ করতে না পারায় এলাকার মানুষ এবং এনজিওর লোকদের কাছে নানাভাবে অপমানিত হন। এসব অপমান সহ্য করতে না পেরে রুবেল তার স্ত্রীকে নিয়ে চাঁদপুর শহরের ব্যাংক কলোনি এলাকায় মিজি বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। আর বড় সন্তানরা নানা বাড়িতে থেকে লেখাপড়া করতেন। কয়েকদিন আগে তার স্বামী নিজ বাড়িতে (শাহতলী গ্ৰামে) যান। সেখানে ৩০ ডিসেম্বর বিষ পান করেছে। খবর পেয়ে স্বামীকে উদ্ধার করে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে এসে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করান।
হালিমা বেগম বলেন, ‘মৃত্যুর আগে আমার স্বামী আমাকে বলেছিল বাড়িতে তার বড় ভাইয়ের ছেলে তাকে মারধর করেছে। তাছাড়া ঋণের টাকার জন্য মানুষ অপমান করেছে। সেই অপমানে তিনি বিষ পান করেছেন। এতদিন তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন, কিন্তু তার পরিবারের কেউ এসে খোঁজ নেয়নি। স্বামীর ঋণ পরিশোধ করতে আমি নিজেও বিভিন্ন বাসা বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করেছি। বর্তমানে চাঁদপুর স্পেশালাইজ হাসপাতালে আয়ার কাজ করছি। আমার পরিবারের কাছ থেকেও অনেক টাকা এনে স্বামীকে ঋণ পরিশোধ করতে দিয়েছি। চারটা সন্তান নিয়ে এখন আমি কিভাবে বাঁচবো।’
এদিকে মোঃ সুলতান মাহমুদ রুবেলের মৃত্যুর পর একটি গায়েবী চিরকুট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। রুবেলের হাতে লেখা দাবি করা ওই চিরকুটে তার মৃত্যুর জন্য শাশুড়ি, শালী এবং শ্যালোকে দায়ী করা হয়। নিরক্ষর রুবেলের সুন্দর হাতের লেখায় দাবি করা ওই চিরকুট নিয়ে নানান রহস্য এবং ধূম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে। রুবেলের স্ত্রী হালিমা বেগম চিঠির বিষয়ে বলেন, ‘আমার স্বামী লেখাপড়া জানতো না। আমি তাকে কোনরকম নিজের নাম লেখা শিখিয়েছি। তার ন্যাশনল আইডি কার্ডে তার হাতের একটি স্বাক্ষর রয়েছে। এই স্বাক্ষরের সাথে চিঠির হাতের লেখার কোন মিল নেই। এই চিঠ কোনভাবেই তার স্বামীর হাতের লেখা নয়।
মৃত রুবেলের হাতে লেখা দাবি করা ওই চিরকুটে উল্লেখ করা হয় (চিরকুটের লেখার একাংশ হুবহু তুলে ধরা হলো) ‘ আমার মৃত্যুর জন্য আমার শাশুরি দাই। আমার মৃত্যুর জন্য আমার শালি দই। আমার মৃত্যুর জন্য আমার শালা দাই। আমার পরিবার দাই নাই।’
স্থানীয়দের দাবি মৃত্যুর তিনদিন পরে এই চিরকুটটি কিভাবে প্রকাশ্যে এলো এবং কার মাধ্যমে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লো, সেটি তদন্ত করলে এর রহস্য বেরিয়ে আসবে। কারণ চিঠির হাতে লেখা দেখে বুঝা যায় এটি কোন উচ্চ শিক্ষিত মানুষের। তাছাড়া ইচ্ছাকৃতভাবে চিঠিতে অনেকগুলো শব্দ ভুল লেখা হয়েছে। যাতে করে কেউ বুঝতে না পারে, এটি রিকশা চালক রুবেলের হাতে লেখা নয়। নিহত রুবেলের ন্যাশনল আইডি কার্ডের স্বাক্ষর এবং চিরকুটের হাতের লেখা মিলিয়ে দেখলে প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবে।
এ বিষয়ে চাঁদপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বাহার মিয়া জানান, এই ঘটনায় নিহত রুবেলের পরিবার একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করেছে। সেখানে তার স্ত্রী, শাশুড়ি, শালী এবং শ্যালোককে আসামি করা হয়েছে। পরবর্তী আইনি কার্যক্রমের জন্য তার স্ত্রী হালিমা বেগম পুলিশ হেফাজতে থাকবে। চিরকুটের বিষয়টিও আমরা গুরুত্বের সাথে তদন্ত করব।
একুশে সংবাদ/এ.জে



একুশে সংবাদের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

