মানিকগঞ্জের হরিরামপুরের চরাঞ্চলে ক্ষুধার্ত শিয়ালের উপদ্রব বেড়ে গেছে। সম্প্রতি প্রতিদিনই শিয়াল লোকালয়ে ঢুকে হাঁস-মুরগি ধরে খাওয়ার পাশাপাশি শিশুসহ পথচারীকে কামড়াচ্ছে। মাত্র সাত দিনের ব্যবধানে লেছড়াগঞ্জ ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে ৪ শিশুসহ আরও অনেক মানুষকে কামড়ে আহত করেছে এই বন্যপ্রাণী। এতে করে প্রত্যন্ত এলাকার মানুষের মধ্যে শিয়াল আতঙ্ক বিরাজ করছে।
মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) সরজমিনে উপজেলার লেছড়াগঞ্জ চরে গিয়ে কথা হয় স্থানীয়দের সঙ্গে। তারা জানান, পাঠানকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪ শিশু শিক্ষার্থীসহ আরও কয়েকজন শিয়ালের কামড়ে আহত হয়। পরে তাদের ডাকচিৎকারে লোকজন এগিয়ে এসে আহতদের উদ্ধার করে হরিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও ফরিদপুরে নিয়ে যায়।
আহতরা হলেন: গঙ্গাধরদী এলাকার আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে আব্দুল্লাহ (৭), একই এলাকার ইদ্রিসের মেয়ে ইভা আক্তার (৬), পাটগ্রাম এলাকার রাজু বিশ্বাসের ছেলে রাকিব (৫) এবং একই এলাকার শেখ জহিরুলের ছেলে বিপ্লব (৯)।
ইভা আক্তারের বাবা ইদ্রিস জানান, “আমার মেয়ে ঘরের বারান্দায় বসে পড়ছিল। তখন ১টি শিয়াল এসে কামড় দিয়ে চলে যায়। একই দিনে আমাদের এলাকায় শিয়ালের কামড়ে আরও ১০–১২ জন আহত হয়। আমি মেয়েকে ফরিদপুর থেকে ভ্যাকসিন দিয়ে চিকিৎসা করছি। এছাড়াও আরও একজনকে শিয়াল কামড়েছে; তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে ঢাকা নিয়ে চিকিৎসা করা হচ্ছে।”
আহত রাকিবের মা বলেন, “আমার ছেলেকে শিয়াল অনেক কামড়িয়েছে। হরিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা শেষে আমরা তাকে ঢাকায় নিয়ে আসছি। এখন সে একটু ভালো আছে।”
পাঠানকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. হাবিব খান বলেন, “একই দিনে আমার বিদ্যালয়ের ৪ শিক্ষার্থীসহ আরও অনেককে শিয়াল কামড়িয়েছে। এখনো বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ স্থানীয় সবাই শিয়াল আতঙ্কে রয়েছে।”
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কাজী একেএম রাসেল বলেন, “শিয়ালের কামড়ে আহত কয়েকজনকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে এক শিশুর অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাকে ঢাকা নিয়ে যাই।”
হরিরামপুর উপজেলা বন কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম বলেন, “বিষয়টি আমাদের বন্যপ্রাণী বিভাগে জানানো হয়েছে।”
ঢাকা বন্যপ্রাণী ব্যবস্থা ও প্রকৃতি সংরক্ষক বিভাগের বন্যপ্রাণী পরিদর্শক নিগার সুলতানা বলেন, “দিন দিন জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে বন্যপ্রাণীর খাবার ও বাসস্থান সংকট হচ্ছে, যার ফলে শিয়ালগুলো লোকালয়ে প্রবেশ করছে। বন্যপ্রাণী প্রকৃতির অংশ, আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম ও প্রকৃতিকে রক্ষা করতে হলে বন ও বন্যপ্রাণীদের সংরক্ষণ করতে হবে। এ বিষয়ে স্থানীয় জনসাধারণের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য উদ্যোগ নেওয়া হবে।”
একুশে সংবাদ//এ.জে



একুশে সংবাদের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

