বাংলাদেশের সংগীতাঙ্গনে একসময় ছিলেন এক পরিচিত ও সক্রিয় মুখ—মো. আবু জুবায়ের ইবনে আবুল, সবার কাছে ‘জিকো’ নামে পরিচিত। আন্তর্জাতিক মঞ্চেও যিনি বাংলাদেশকে গানে তুলে ধরেছেন। অথচ সেই প্রতিভাবান শিল্পী আজ অনেকটাই নীরব। কেন এই নীরবতা—তা নিয়ে শ্রোতা-দর্শকের মনে প্রশ্নের শেষ নেই।
১৯৮৯ সালের ১ আগস্ট জন্ম জিকোর। শৈশব কেটেছে মিরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এরপর পড়েন কওমি জুট মিলস হাই স্কুলে। সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি হন পাবনা ক্যাডেট কলেজে—যা তার ব্যক্তিত্ব, সংস্কৃতিবোধ ও শৃঙ্খলা গঠনে গভীর প্রভাব ফেলে।
ক্যাডেট কলেজের পর ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটিতে ইংরেজি বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করেন তিনি। তবে উচ্চশিক্ষার পরেও সংগীতই হয়ে ওঠে তার মূল পরিচয়।
এক ছোট ঘটনায় তার সংগীতযাত্রার সূচনা। স্কুলের এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে হারমোনিয়াম বাজাতে না জানায় গান গাওয়ার সুযোগ পাননি। সেই আক্ষেপই তাকে সংগীত শেখার প্রেরণা দেয়।
ওস্তাদ বানছারাম সরকারের কাছে হাতে খড়ি। পরে ওস্তাদ সাত্তার, মিলন মণ্ডল, প্রদ্বীপ কুমার সূত্রধর এবং শেষ পর্যন্ত ওস্তাদ আমিনুল ইসলামের কাছে দীর্ঘদিন শাস্ত্রীয় সংগীতে তালিম নেন।
ছোটবেলা থেকেই নানা প্রতিযোগিতায় ছিলেন নিয়মিত।
১৯৯৯: হামদ–নাতে রাসুল প্রতিযোগিতায় স্বর্ণপদক
২০০০: নজরুল সংগীতে স্বর্ণপদক
পাবনা ক্যাডেট কলেজেও নিয়মিত পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
জিকোর সংগীতজীবনে বড় বাঁক আসে ২০০৮ সালে।
সে বছর তিনি অংশ নেন জি বাংলা সা রে গা মা পা বিশ্বসেরা প্রতিযোগিতায়। আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে তার সুরেলা কণ্ঠ বিচারক ও দর্শকের প্রশংসা কুড়ায়। এই মঞ্চ থেকেই শুরু তার বিশ্বভ্রমণ।
এরপর বিশ্বের ১৭টি দেশে প্রবাসীদের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করেন তিনি। টেলিভিশন, স্টেজ শো, বিশেষ দিবসের আয়োজনে পরিণত হন একজন আলোচিত পারফর্মার হিসেবে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জিকোর সংগীতজীবনে আসে স্থবিরতা।
টেলিভিশনে উপস্থিতি কমে যায়, স্টেজ শোও হয় না আগের মতো। নিয়মিত যিনি দেশ–বিদেশের বড় বড় মঞ্চে গান করেছেন, তিনি এখন অনেকটাই নেপথ্যে।
তবে থেমে নেই তার সাধনা।
জিকো জানান—তিনি নিয়মিত রেওয়াজ করেন, ওস্তাদ আমিনুল ইসলামের কাছে তালিম নিচ্ছেন, ব্যায়াম এবং নিজের শিল্পীসত্তা উন্নত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
জিকোর ভাষায়—“সংগীত আমার কাছে পেশা নয়, সাধনা। শুদ্ধ সংগীত কখনো মানুষের ভাগ্য থেকে মুছে যায় না। সময়ের অপেক্ষা করতে জানলেই আবার সুযোগ আসে।”
সংগীতবোদ্ধাদের মতে, জিকো একজন আধুনিক এবং প্রশিক্ষিত শিল্পী, যিনি ধ্রুপদী, আধুনিক, নজরুলসহ বিভিন্ন ধারার গান আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে পরিবেশন করতে পারেন। এমন শিল্পীর পুনরায় মঞ্চে ফেরা সময়ের দাবি।
জিকো জানান, তিনি নতুন কিছু প্রজেক্টে কাজ করছেন—যদিও এখনো প্রকাশ করেননি। লক্ষ্য একটাই—আবারো নিয়মিত হওয়া, আবারো শ্রোতাদের কাছে ফিরে যাওয়া।
তিনি বলেন—“আমি হারিয়ে যাইনি। আমি সময় নিচ্ছি। মানুষ যখন আবার ডাকবে, আমি আরও শক্ত হয়ে ফিরব—এটাই আমার প্রতিশ্রুতি।”
একুশে সংবাদ//এ.জে



একুশে সংবাদের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

