নানা আয়োজন, ধর্মীয় আবহ ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যে শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে গারো সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী বৃহৎ সামাজিক উৎসব ‘ওয়ানগালা’র তিনদিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা শেষ হয়েছে। রবিবার (২৩ নভেম্বর) সকালে মরিয়মনগর উচ্চবিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা মহাধর্মপ্রদেশের কার্ডিনাল বিশপ প্যাট্রিক ডি. রোজারিও সিএসসি।
অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন মরিয়মনগর মিশনের পাল পুরোহিত ফাদার লরেন্স রিবেরু।
তিন দিনব্যাপী উৎসবে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, মান্দি ছড়া, নৃত্য, মিস ওয়ানগালা প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, মেলা, খেলাধুলা, বাণী পাঠ, থক্কা প্রদান, পবিত্র খ্রিস্টযাগ, প্রার্থনা ও নকগাথাসহ ছিল নানা আয়োজন।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন মরিয়মনগর ধর্মপল্লীর প্যারিস কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান অনার্শন চাম্বুগং।
প্রধান অতিথি কার্ডিনাল বিশপ প্যাট্রিক ডি. রোজারিও সিএসসি বলেন,“ওয়ানগালা শুধু একটি উৎসব নয়—এটি গারোদের কৃতজ্ঞতা, ঐতিহ্য ও সামাজিক মিলনের বিশেষ উদযাপন। নতুন প্রজন্মকে নিজস্ব সংস্কৃতি ধারণে এমন আয়োজন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
আয়োজক কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান অনার্শন চাম্বুগং বলেন,“গারো সম্প্রদায়ের এ উৎসব আমাদের পরিচয়, ঐতিহ্য ও বিশ্বাসকে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে পৌঁছে দেয়। শান্তি, সৌহার্দ্য ও মিলনমেলার বার্তাই বহন করে ওয়ানগালা।”
উৎসব কমিটির চেয়ারম্যান ও মরিয়মনগর মিশনের পাল পুরোহিত ফাদার লরেন্স রিবেরু সিএসসি বলেন,
“১৯২৫ সালে ওয়ানগালা উৎসবের সূচনা হলেও ১৯৮৫ সাল থেকে মরিয়মনগর সাধু জর্জের ধর্মপল্লীর উদ্যোগে নিয়মিতভাবে আয়োজন করা হচ্ছে। গারোদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি বৃহত্তর সমাজের কাছে তুলে ধরা এবং নতুন প্রজন্মকে শেকড়ের সঙ্গে পরিচিত রাখাই আমাদের লক্ষ্য।”
আয়োজক সূত্রে জানা যায়, গারোদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উৎসব ‘ওয়ানগালা’। ‘ওয়ানা’ অর্থ দেবদেবীর দানের দ্রব্যসামগ্রী এবং ‘গালা’ অর্থ উৎসর্গ করা। বর্ষা শেষে ও শীতের আগে নতুন ফসল ঘরে তোলার পর দেবদেবীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে আয়োজন করা হয় এ উৎসবের। এর আগে নতুন খাদ্যশস্য ভোজন গারোদের জন্য নিষিদ্ধ থাকে।
এ উৎসবকে অনেকেই নবান্ন বা ধন্যবাদের উৎসবও বলে থাকেন। ‘একশ ঢোলের উৎসব’ নামেও পরিচিত ওয়ানগালা। গারোদের বিশ্বাস—‘মিসি সালজং’ বা শস্যদেবতার কৃপায়ই ভালো ফলন হয়। তাই নতুন শস্য ভোগের আগে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে নৃত্য–গীতের মাধ্যমে উদযাপন করা হয় ওয়ানগালা। একই সঙ্গে পরিবারের শান্তি, সমাজের আনন্দ এবং সকলের মঙ্গল কামনা করা হয়।
রবিবার বিকেলে বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে তিন দিনব্যাপী উৎসবের বর্ণিল পরিসমাপ্তি ঘটে।
একুশে সংবাদ//এ.জে



একুশে সংবাদের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

