AB Bank
  • ঢাকা
  • শুক্রবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৫, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

বাণিজ্যিকভাবে চাষ করলে সম্ভাবনাময় একটি খাতে পরিণত হতে পারে টকপাতা


Ekushey Sangbad
আবু রাসেল সুমন, খাগড়াছড়ি
০৫:২১ পিএম, ২১ নভেম্বর, ২০২৫

বাণিজ্যিকভাবে চাষ করলে সম্ভাবনাময় একটি খাতে পরিণত হতে পারে টকপাতা

পাহাড়ের আনাচে–কানাচে সবজি ক্ষেত কিংবা বসতবাড়ির পাশে একসময় প্রায়ই দেখা যেত বিলুপ্তপ্রায় ফলগুলোর একটি—টকপাতা। পাতা ও ফল টক স্বাদযুক্ত গাঢ় লাল বর্ণের উপগুল্মজাতীয় এই উদ্ভিদের ইংরেজি নাম Rosella বা Sorrel, আর বৈজ্ঞানিক নাম Hibiscus sabdariffa। বাংলাদেশের মানুষের কাছে এটি টকপাতা, চুকাই বা হরপাতা নামে পরিচিত।

বৈজ্ঞানিকভাবে এটিকে ফল বা ফুল বলা হলেও এটি মূলত অপ্রকৃত ফল। বৃতি এর ভক্ষ্য অংশ, যা পাতলা এবং পরিমাণে অল্প; গর্ভাশয় বড় এবং ছোট ছোট কাঁটাযুক্ত। ভক্ষ্য অংশটি গর্ভাশয়কে ঘিরে থাকে। পরিপক্ব গর্ভাশয়ে বহু বীজ থাকে, যা বিদারী ফল—অর্থাৎ পাকলে ফেটে বীজ ছড়িয়ে পড়ে।

একসময় গ্রামাঞ্চলে টকপাতা বা চুকাই ফলের গাছ সহজেই দেখা যেত। কিন্তু কালের বিবর্তনে জনপ্রিয় এই ফলগাছটি এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে। বাণিজ্যিকভাবে চাষ না হলেও খাগড়াছড়ির পাহাড়ি এলাকার বহু বাড়িতে এখনো এই গাছ পাওয়া যায়।

বাংলাদেশে বিভিন্ন সবজি চাষের পাশাপাশি টকপাতা বাণিজ্যিকভাবে চাষ করে এটি সম্ভাবনাময় ফসলে পরিণত করা সম্ভব। স্বল্প পরিশ্রমে ভেষজ গুণের নিশ্চয়তার পাশাপাশি সবজি হিসেবেও এর উৎপাদন বেকার যুবক ও নারীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং বাড়তি মুনাফা অর্জনের সুযোগ তৈরি করতে পারে।

বিশ্বের অনেক দেশেই এই ফল বাণিজ্যিকভাবে চাষ হলেও বাংলাদেশে এখনো তেমনভাবে শুরু হয়নি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পৃষ্ঠপোষকতায় পতিত অনাবাদি জমি বা পরিত্যক্ত জায়গায় চুকাই চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা গেলে এটি একটি জনপ্রিয় সম্ভাবনাময় ফসলে পরিণত হতে পারে। বিদেশে টকপাতা বা চুকাইয়ের উল্লেখযোগ্য চাহিদা থাকায় এর শুকনা বীজ ও বিভিন্ন খাদ্যপণ্য রপ্তানি করেও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব।

পার্বত্য অঞ্চলের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই টকপাতা গাছ দেখা যায়। যদিও দেশের অন্য অনেক অঞ্চলে এটি এখন প্রায় বিলুপ্ত। তবে খাগড়াছড়ির দীঘিনালা, মহালছড়ি, লক্ষ্মীছড়ি, পানছড়ি, গুইমারা ও মাটিরাঙা এলাকায় এখনো টকপাতা বা চুকাই গাছ পাওয়া যায়।

দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এটি ভিন্ন নামে পরিচিত—চট্টগ্রামে খরঅগুলা,সিলেটে হইলফা,খুলনায় অম্বলমধু,ঢাকায় চুকুল,কুমিল্লায় মেডস।

উদ্ভিদ বিশেষজ্ঞদের মতে, সমতল ভূমির চেয়ে পার্বত্য এলাকায় এই গাছ বেশি জন্মে। পাহাড়িদের কাছে এটি জনপ্রিয় খাদ্য হওয়ায় বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী নিজেদের আঙ্গিনা বা বাড়ির পাশে এই গাছ রোপণ করেন। পাটজাতীয় এই ফল দিয়ে পাহাড়ি জনগোষ্ঠী বহু সুস্বাদু খাবার প্রস্তুত করে থাকেন।

টকপাতার জনপ্রিয়তাও এর ফলের মতোই সমান। এটি খেতে যেমন সুস্বাদু, তেমনি রয়েছে বহু ভেষজ গুণ। টকপাতা বা চুকাই পাতা ও ফলে রয়েছে প্রচুর প্রোটিন, ক্যারোটিন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিনসহ প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান। এর পাতার ভেষজ চা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, মূত্রবর্ধক হিসেবে কার্যকর, মৃদু কুষ্ঠ নরমকারী এবং হৃদরোগ, ক্যান্সার ও স্নায়ুরোগের চিকিৎসায় দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

এ ছাড়াও টক স্বাদের কারণে জ্যাম, জেলি ও আচার তৈরিতে এই ফল ব্যবহৃত হয়। গাছের আঁশ পাটের আঁশের বিকল্প হিসেবেও ব্যবহার করা হয়। বাণিজ্যিকভাবে চাষ করলে টকপাতা বা চুকাই একটি সম্ভাবনাময় শিল্পে পরিণত হতে পারে। এর থেকে উৎপাদিত চা, মেস্তাস্বত্ব, জ্যাম, জেলি, জুস, আচার এমনকি বীজ থেকে ২০% ভোজ্যতেল বাজারজাত করা গেলে দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। বিশেষ করে খাগড়াছড়ির পার্বত্য অঞ্চলে এ শিল্পের অপার সম্ভাবনা রয়েছে।

খাগড়াছড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক নাসির উদ্দীন চৌধুরী বলেন, “বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাণিজ্যিকভাবে এর চাষ হলেও বাংলাদেশে টকপাতার চাষ এখনো শুরু হয়নি। তবে এটি অত্যন্ত ঔষধিগুণ সম্পন্ন। আমাদের দেশে প্রায় বিলুপ্তির পথে থাকা এই গাছটি সংরক্ষণ প্রয়োজন।”

 

একুশে সংবাদ//এ.জে

Link copied!