চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলায় চলতি আমন মৌসুমে মাঠ যেন সবুজে ভেসে গেছে। প্রান্তিক কৃষকরা বাম্পার ফলনের আশায় এখন উদ্দীপ্ত। ধান বাংলাদেশের প্রধান খাদ্য ও কৃষি খাত দেশের অর্থনীতির ভিত্তি, যেখানে মোট শ্রমশক্তির ৪০.৬০ শতাংশ নিয়োজিত। এছাড়া রপ্তানি আয়েও কৃষি খাতের উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে। তাই দেশের অর্থনীতি অনেকাংশে কৃষির ওপর নির্ভরশীল।
বোয়ালখালীতে আমন ধান চাষ তিনটি পর্যায়ে হয়—মাঝারি উঁচু, মাঝারি নিচু ও নিচু মাঠে। ক্ষেতজুড়ে সোনালি ধানের শীষ দোল খাচ্ছে। ধানের ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকদের মুখে হাসির ঝিলিক দেখা যাচ্ছে। “ধন ধান্যে পুষ্পে ভরা, আমাদের এই বসুন্ধরা” কথাটির স্বার্থকতা ফুটে উঠেছে উপজেলার বিস্তীর্ণ মাঠে।
উপজেলার সারোয়াতলী, আমুচিয়া, করলডেঙ্গা ও জৈষ্টপুরা এলাকায় দিগন্তজুড়ে আমন ধানের সোনালি রঙের অপরূপ সৌন্দর্য নজর কাড়া। বাতাসে ছড়িয়ে আছে আমনের মনোমুগ্ধকর গন্ধ। ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকরা খুশি।
এবার বোয়ালখালীতে আগাম জাতের ব্রি-ধান ৪৭, ৪৯, ৯৩, ৯৬, সাদা পাই জাম ও কাটারী ধান চাষ করেছেন কৃষকরা। আগাম জাতের ধান বিক্রি করে ভালো দাম পাওয়ার আশা করছেন তারা। প্রতি ৪০ শতকে ধান চাষে খরচ পড়েছে প্রায় ১৪–১৫ হাজার টাকা। ফলন ভালো হওয়ায় খরচ পূরণ করে লাভের আশা করছেন কৃষকরা।
কৃষকরা এখন ধান কাটা ও জমির পরিচর্যায় ব্যস্ত। ফসল ঘরে তোলার অপেক্ষায় তারা, আর প্রতিটি পরিবারে সোনালি স্বপ্নের ছাপ ফুটে উঠেছে।
উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী, এবার বোয়ালখালীতে আমনের লক্ষ্যমাত্রা ৪,৮০০ হেক্টর জমি। চলতি মৌসুমে প্রান্তিক কৃষকদের বিনামূল্যে বীজ ও সারসহ প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। ফলে কৃষকদের মধ্যে উৎসবের আনন্দ বিরাজ করছে।
উদাহরণ স্বরূপ, সারোয়াতলী ইমামুল্লার চর গ্রামের রাখাল দাশ ৪ একর জমিতে আমন ধান চাষ করেছেন। তিনি জানান, “বোরো ধানের ভালো দাম পেয়েছি, তাই এবার আমন ধান চাষ করেছি। আশা করছি বাজারে ধানের ভালো দাম পাব।”
ধলঘাটের কৃষক জামাল ২০ একর জমিতে ব্রি-ধান ৯৩, ৯৬, ৪৯ ও আগাম জাতের ১০৩ চাষ করেছেন। তিনি বলেন, “ফসল ভালো হয়েছে, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ধান কাটা শুরু হবে।” পোপাদিয়ার কৃষক মোহাম্মদ রফিক বলেন, আবহাওয়া অনুকূল থাকলে এবার ভালো ফলন আশা করা যায়।
বোয়ালখালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কল্পনা রহমান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) জানান, চলতি মৌসুমে ধান চাষের জন্য কৃষি বিভাগ থেকে চাষিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহযোগিতা প্রদান করা হয়েছে। ধানের রোগবালাইও কম। আগামী ১০–১৫ দিনের মধ্যে কৃষকরা পুরোদমে ধান কাটতে পারবেন। আগাম জাতের ধান কাটার পর শীতকালীন শাকসবজি ও ডাল জাতীয় ফসল আবাদে জমিও প্রস্তুত করা হচ্ছে।
একুশে সংবাদ/এ.জে



একুশে সংবাদের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

