AB Bank
  • ঢাকা
  • শনিবার, ০৮ নভেম্বর, ২০২৫, ২৩ কার্তিক ১৪৩২

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

উপমহাদেশের অন্যতম বৃহৎ হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদ



উপমহাদেশের অন্যতম বৃহৎ হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদ

দেশের বৃহত্তম মুসলিম স্থাপত্য নিদর্শনগুলোর অন্যতম চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ বড় মসজিদ। প্রায় শত বছরেরও বেশি পুরনো এই স্থাপনাটি শুধু একটি উপাসনালয় নয়—এটি যেন স্থাপত্যশিল্পের এক অনন্য ব্যাকরণ ফুটিয়ে তুলেছে। বিশেষ করে এর নির্মাণে ব্যবহৃত স্থাপত্যশৈলী ও দৃষ্টিনন্দন কারুকাজ মসজিদটিকে এক ঐতিহাসিক নিদর্শনে পরিণত করেছে, যা আজও কালের সাক্ষ্য বহন করছে।

ঐতিহ্যবাহী এই মসজিদটির নির্মাণ শুরু হয় ১৩২৫ থেকে ১৩৩০ বঙ্গাব্দের মধ্যে। শুরুতে আল্লাহর ওলিদের উত্তরাধিকারী হজরত মনিরুদ্দিন মনাই হাজী (রহ.)-এর দৌহিত্র আহমদ আলী পাটোয়ারী (রহ.) ও হজরত মকিম উদ্দিন (রহ.) তাঁদের নিজ বাসস্থানের বাগানবাড়িতে একটি একচালা খড়ের ইবাদতখানা নির্মাণ করেন। পরবর্তীতে তা খড় ও গোলপাতায় তৈরি দোচালা মসজিদে রূপ নেয়।

মসজিদটিকে পাকাপোক্ত করার চূড়ান্ত স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেন আহমদ আলী পাটোয়ারী (রহ.)। তাঁর ঐকান্তিক ইচ্ছায় ১৩৩৭ বঙ্গাব্দের ১৭ আশ্বিন হজরত মাওলানা আবুল ফারাহ জৈনপুরী (রহ.)-এর পুণ্য হাতে এই পাকা মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। বৃহৎ এই মসজিদটির পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তিনি নিজেই ইটভাটা তৈরি করেন এবং ৭৭টি আকর্ষণীয় পিলারের ওপর নির্মাণকাজ শুরু করেন।

পাথরের নিখুঁত সাজে সজ্জিত তিনটি বৃহৎ গম্বুজ ও তারকাখচিত অলংকরণ দর্শনার্থীদের প্রধান আকর্ষণ। এছাড়া ১২৮ ফুট উচ্চতার একটি সুউচ্চ মিনার রয়েছে, যেখান থেকে হাজীগঞ্জের চারপাশের মনোরম দৃশ্য দেখা যায়। মসজিদের ভেতর ও বাইরের দেয়ালগুলো ঝিনুকের মোজাইক-বেষ্টিত পিলার এবং সূক্ষ্ম নকশার কারুকার্যে সজ্জিত। মেহরাবটিও নানা রকম নকশা ও কারুকার্যে অলংকৃত।

২৮ হাজার ৪০৫ বর্গফুট আয়তনের এই মসজিদে একসঙ্গে প্রায় ১০ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। এটি শুধু চাঁদপুর নয়, বরং বাংলাদেশের জুমাতুল বিদার সবচেয়ে বড় জামাত আয়োজনের জন্যও সুপরিচিত। নারীদের জন্যও এখানে পৃথক নামাজের ব্যবস্থা রয়েছে।

ঐতিহাসিকভাবেও মসজিদটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। জুমার নামাজের আজান ও ইকামতের উদ্বোধনী দিনে অবিভক্ত বাংলার তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী শেরেবাংলা এ. কে. ফজলুল হক ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীসহ চারজন প্রখ্যাত মন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীসহ বহু বরেণ্য আউলিয়া বিভিন্ন সময়ে এখানে নামাজ আদায় করেছেন।

মসজিদের পূর্ব পাশে ধর্মীয় শিক্ষার উদ্দেশ্যে একটি কামিল মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। মিনারের উঁচু প্ল্যাটফর্ম থেকে বহু মুসল্লি ও পর্যটক হাজীগঞ্জের বিস্তীর্ণ দৃশ্য অবলোকন করার সুযোগ পান।

মসজিদটির সুষ্ঠু পরিচালনার জন্য নয় সদস্যবিশিষ্ট একটি উপদেষ্টা পরিষদ রয়েছে, যার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)। প্রতিষ্ঠাতা পরিবারের উত্তরসূরি ড. মোহাম্মদ আলমগীর কবির পাটোয়ারী বর্তমানে মোতাওয়াল্লির দায়িত্বে আছেন।

ঐতিহ্যবাহী এই মসজিদটি চাঁদপুর জেলা সদর থেকে প্রায় ২২ কিলোমিটার পূর্বে হাজীগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত। এটি হাজীগঞ্জ বাজারের পাশে চাঁদপুর-কুমিল্লা মহাসড়কের ধারে সহজেই দৃশ্যমান। দেশের যেকোনো স্থান থেকে সড়ক, নৌ বা রেলপথে চাঁদপুর এসে সহজেই এখানে পৌঁছানো যায়।

রেলপথে ভ্রমণের জন্য লাকসাম রেলওয়ে জংশন থেকে ছেড়ে আসা আন্তঃনগর মেঘনা এক্সপ্রেস (রাত ৮টা) অথবা সাগরিকা ট্রেন (সকাল ১১:৩০টা) ধরে হাজীগঞ্জ রেলস্টেশনে নামা যায়। সেখান থেকে ইজিবাইক বা সিএনজিযোগে স্বল্প খরচে মসজিদের সামনে পৌঁছানো সম্ভব।

 

একুশে সংবাদ/এ.জে

সর্বোচ্চ পঠিত - সারাবাংলা

Link copied!