জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার পুনট—পাঁচপাইকা এলাকায় গত এক সপ্তাহ ধরে একটি দলছুট হনুমান গ্রামজুড়ে ঘোরাফেরা করছে। কখনো চিকন গাছের ডালে, কখনো বাড়ির টিনের ছাউনি বা ছাদে বসে, আবার কখনো বাড়ি থেকে বাড়িতে ছুটে বেড়াচ্ছে এটি। হনুমানটিকে দেখতে আশপাশের গ্রামের লোকজন ভিড় করে জমাচ্ছে; এ কারণে গ্রামবাসীর মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা সৃষ্টি হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, হনুমানটি বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বেড়াচ্ছে—কখনো পৌরসভার সড়াইল মহল্লায় দেখা যায়, কিছুক্ষণ পর পুনট বা পাঁচপাইকা এলাকা হয়ে যায়। ধারণা করা হচ্ছে ক্ষুধার তাগিদে ইটেনি পথে ঘুরছে প্রাণীটি। কেউ কেউ খাবার ছুড়ে দিচ্ছেন; তবু অচেনা খাবারের ভয়ে বা ভয়ে হনুমানটি প্রায় খান না—ফলশ্রুতিতে অনাহারে ক্রমে দুর্বল হয়ে পড়েছে বলেও দেখা যায়।
পাঁচপাইকা গ্রামের মিঠু ফকির অভিযোগ করেন, শুধু খাদ্য নয়—মানুষের আচরণই হনুমানটিকে বিপদে ফেলছে। গ্রামে ঢুকলেই শত শত উৎসুক মানুষ জড়ো হচ্ছে, কেউ ঢিল ছুড়ছে, কেউ লাঠি নিয়ে তাড়া করছে। এক সপ্তাহ ধরে চললেও প্রশাসন ও বন বিভাগের পক্ষে তেমন কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
নান্দাইল দীঘি গ্রামের যুবক নিয়ামুল হক জানান, তাদের গ্রামেও একদিন হনুমানটি এসেছে। বন বিভাগে জানানো হলেও তারা উদ্ধারে আগ্রহ দেখায়নি এবং লোকবল স্বল্পতার কথা উল্লেখ করে স্থানীয়দের খাবার না দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিল।
বৃহস্পতিবার দুপুরে হনুমানটিকে পুনট—পাঁচপাইকা গ্রামের পশ্চিমপাড়া আমজাদ হোসেনের বাড়ির টিনের টুয়েতে বসে থাকতে দেখা যায়। প্রথমে পরিবারের সদস্যরা ভয়ে পালিয়ে গেলেও পরে লোকজন জড়ো হয়ে কেউ কেউ খাবার দিয়ার চেষ্টা করে; তবে হনুমানটি কিছু খায়নি। কিছু কিশোর ঢিল ছুড়ে মারলেও প্রাণীটি সেখান থেকে সরেনি। বাড়ির মালিক আমজাদ হোসেন বলেন, হনুমানটি সম্ভবত ভারতীয় সীমান্ত এলাকা থেকে ট্রাকযোগে চলে এসেছে। তিনি আরও বলেন, “ওটাকে বাঁচাতে হবে। প্রশাসন দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে মানুষের অত্যাচার আর অনাহারে সে মারা যেতে পারে।”
বগুড়া অঞ্চলের সামাজিক বন কর্মকর্তা মো. হারুনুর রশিদ জানান, এখনই জোর করে ধরার কোনো সমাধান নয়। তাঁদের পরামর্শ—প্রাণীটিকে খাবার না দিলে প্রাকৃতিকভাবেই এটি তার আবাসস্থলে ফিরে যাবে। জোর করে ধরলে চিড়িয়াখানায় পাঠাতে হবে, যা প্রাণীর স্বাধীনতা নষ্ট করবে। তিনি স্থানীয়দের প্রাণীটিকে বিরক্ত না করতে এবং নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে অনুরোধ করেছেন—তাহলে প্রাণীটি ইতোমধ্যে নিজের পথেই চলে যাবে এবং কারোর ক্ষতি করবে না।
রিপোর্ট পর্যন্ত পুলিশ বা বন বিভাগ থেকে ঘটনাস্থলে মাঠ পর্যায়ে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের খবর পাওয়া যায়নি।
একুশে সংবাদ/এ.জে



একুশে সংবাদের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

