জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার আঁওড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রকাশ পেয়েছে ভয়াবহ নিয়োগ জালিয়াতির কাহিনি। অভিযোগ, বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. মোস্তফা কামাল ফাজিল পরীক্ষায় পাস করার আগেই চাকরিতে যোগ দিয়েছেন, আর তার স্ত্রী উম্মে কুলছুম আক্তার জাল বিএড সনদ ব্যবহার করে স্কেলভুক্ত হয়েছেন। একই বিদ্যালয়ের নৈশ প্রহরীও ভুয়া সনদে এমপিওভুক্ত হয়ে দীর্ঘদিন সরকারি অর্থ ভোগ করছেন। এ ঘটনায় এলাকায় তুমুল আলোচনা ও ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।
সূত্র মতে, মো. মোস্তফা কামাল ১৯৯৮ সালে হাতিয়র কামিল মাদ্রাসা থেকে ফাজিল পরীক্ষা দেন। ফল প্রকাশের আগেই (৮ জুলাই ১৯৯৮) তিনি সহকারী শিক্ষক (ইসলাম ধর্ম) পদে নিয়োগ পান। ২০০১ সালের জুনে এমপিওভুক্ত হয়ে সরকারি বেতন ও সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে থাকেন।
তার স্ত্রী উম্মে কুলছুম আক্তার ২০০২ সালের ২৪ মে সহকারী শিক্ষক (জীববিজ্ঞান) পদে নিয়োগ পান। পরবর্তীতে ২০২১ সালে ভৌতবিজ্ঞান পদে এমপিওভুক্ত হন, অথচ জীববিজ্ঞান থেকে ভৌতবিজ্ঞানে রূপান্তরের জন্য অনুমোদন নেই। তিনি স্থানীয় একটি কম্পিউটার দোকান থেকে “রয়েল ইউনিভার্সিটি” নামে জাল বিএড সনদ তৈরি করেন এবং সেই সনদ ব্যবহার করে সরকারি অর্থ উত্তোলন করছেন।
নৈশ প্রহরী আফজাল হোসেনও ১৯৯৯ সালের ১৫ নভেম্বর আঁওড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে জাল সনদে নিয়োগ পান। তিনি ২০২১ সাল থেকে এমপিওভুক্ত হয়ে সরকারি অর্থ ভোগ করছেন।
বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক ও কর্মচারী জানান, স্বামী-স্ত্রী ও নৈশ প্রহরীর প্রভাবে বিদ্যালয়ের পরিবেশ নষ্ট হয়ে গেছে। তারা শিক্ষকদের গালমন্দ ও হুমকি দেন, ফলে কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পান না।
প্রধান শিক্ষক গোলাম মোস্তফা খান বলেন, “নিয়োগের মাত্র ১৫ দিন পরই মোস্তফা কামাল যোগ দিয়েছেন। পরে জানতে পেরেছি, তারা ফাজিল পাসের আগেই নিয়োগ পেয়েছেন এবং জাল সনদ ব্যবহার করেছেন। জেলা শিক্ষা অফিস থেকে এ বিষয়ে কাগজপত্র চেয়ে চিঠি এসেছে এবং অভিযুক্তদের তা অবহিত করেছি।”
স্থানীয় বাসিন্দা মফিকুল ইসলাম বলেন, “শিক্ষকরা নিজেই জালিয়াতি করে চাকরি করতে পারে, তাহলে শিক্ষার্থীরা কী শিখবে? প্রশাসন যদি এখনই ব্যবস্থা না নেয়, এই অনৈতিক চক্র পুরো বিদ্যালয় ধ্বংস করবে।”
জেলা শিক্ষা অফিসার মো. রুহুল আমিন বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, অভিযোগ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্টদের চাকরি থাকবে না এবং সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে বিভাগীয় মামলা করা হবে।
একুশে সংবাদ/এ.জে



একুশে সংবাদের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

