AB Bank
  • ঢাকা
  • শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর, ২০২৫, ১৫ কার্তিক ১৪৩২

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

জয়পুরহাটে প্রাথমিক শিক্ষায় বৈষম্য বাড়ছে শহরে শিক্ষার্থীর ভিড়, গ্রামে ফাঁকা শ্রেণিকক্ষ


Ekushey Sangbad
আব্দুল্লাহ সউদ, কালাই, জয়পুরহাট
০৩:৩৯ পিএম, ৩০ অক্টোবর, ২০২৫

জয়পুরহাটে প্রাথমিক শিক্ষায় বৈষম্য বাড়ছে  শহরে শিক্ষার্থীর ভিড়, গ্রামে ফাঁকা শ্রেণিকক্ষ

জয়পুরহাট জেলার প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থায় শহর ও গ্রামের মধ্যে বৈষম্য দিন দিন বেড়েই চলছে। শহরের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীর ঢল নামছে; শ্রেণিকক্ষে জায়গা না পেয়ে শিক্ষার্থীরা গাদাগাদি করে বসছে। অন্যদিকে, গ্রামীণ বিদ্যালয়গুলোতে দেখা যাচ্ছে শ্রেণিকক্ষ প্রায় ফাঁকা— কোথাও শিক্ষকরা শ্রেণিকক্ষে বসে সময় কাটাচ্ছেন, আবার কোথাও শিক্ষার্থী না থাকায় পাঠদান বন্ধ। এই বৈষম্য জেলার সার্বিক শিক্ষার মানকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, জয়পুরহাটে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৩৭১টি। মঞ্জুরিকৃত ৩৭১ জন প্রধান শিক্ষকের বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র ২৪৪ জন। সহকারী শিক্ষক পদ রয়েছে ২ হাজার ৭৬টি, কিন্তু কর্মরত আছেন ১ হাজার ৮৮০ জন। অর্থাৎ, ১২৭টি প্রধান শিক্ষক ও ১৯৬টি সহকারী শিক্ষক পদ এখনো শূন্য। তবে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কোনো শিক্ষা কর্মকর্তার পদ শূন্য নেই।

সরেজমিনে দেখা গেছে, জয়পুরহাট শহরের মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থীর অতিরিক্ত চাপে গাদাগাদি হয়ে পড়েছে। জয়পুরহাট মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বর্তমানে শিক্ষার্থী সংখ্যা ১ হাজার ৫৫১ জন। প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত প্রতিটি শ্রেণিতে তিনটি শাখা থাকলেও শ্রেণিকক্ষ মাত্র ১৬টি। ফলে প্রতিটি শ্রেণিকক্ষে শতাধিক শিক্ষার্থী গাদাগাদি করে বসতে বাধ্য হচ্ছে। শুধু পঞ্চম শ্রেণিতেই শিক্ষার্থী সংখ্যা ৩৫১ জন।

বিদ্যালয়টির দুই শিক্ষার্থী জানায়, তিনজনের বেঞ্চে কখনো চারজন, কখনো পাঁচজন বসতে হয়। এতে মনোযোগ দিয়ে ক্লাস করা যায় না; শিক্ষকের কথাও স্পষ্ট শোনা যায় না। অভিভাবকরা অভিযোগ করেন, শিক্ষার্থীর গাদাগাদির কারণে সন্তানদের পাঠে মনোযোগ নষ্ট হচ্ছে, ফলে প্রাইভেট টিউশনের ওপর নির্ভরতা বাড়ছে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, “শিক্ষার্থীর উপস্থিতি সন্তোষজনক হলেও শ্রেণিকক্ষ ও বেঞ্চের তীব্র সংকটে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। বিদ্যালয়ে মাত্র একটি ওয়াশব্লক থাকায় শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা বিড়ম্বনায় পড়েন।”
সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মাসুদুল হাসান জানান, বেঞ্চ ও শৌচাগার সংকটের বিষয়ে দপ্তরে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে।

শুধু জয়পুরহাট মডেল নয়, কালাই মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবস্থাও প্রায় একই। সেখানে ৩৪৩ জন শিক্ষার্থীর পাঠদানে নিয়োজিত ৯ জন শিক্ষক আছেন। বিদ্যালয়ের মাঠ সংস্কার না হওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতেই পানি জমে থাকে, ফলে কোনো সাংস্কৃতিক বা ক্রীড়া অনুষ্ঠান আয়োজন করা যায় না।

অন্যদিকে, গ্রামের বিদ্যালয়গুলোতে চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। শিক্ষার্থী সংখ্যা এত কম যে, অনেক শ্রেণিকক্ষ ফাঁকা পড়ে থাকে। অধিকাংশ বেঞ্চ খালি, ভবনের দেয়াল ফেটে গেছে, কোথাও সীমানা প্রাচীরও নেই। অনেক বিদ্যালয়ের মাঠে স্থানীয়রা ফসল বা আলু-ধান মজুত করেন, ফলে পাঠদান ব্যাহত হয়।

কালাই উপজেলার কাশিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী মাত্র ৭৮ জন, কিন্তু উপস্থিত থাকে তারও কম। কাথাইল গোপীনাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থী ১২৯ জন, উপস্থিতি থাকে ৫০-৬০ জন। প্রধান শিক্ষক ওবায়দুল ইসলাম বলেন, “দীর্ঘ ছুটির পর অনেক শিক্ষার্থী এখনো বিদ্যালয়ে ফিরেনি।”

বড়তারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এক শ্রেণিকক্ষে দেখা গেছে মাত্র চারজন শিক্ষার্থী। প্রধান শিক্ষক মেহেদী হাসান বলেন, “মেলা শেষ হলেও শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসতে অনাগ্রহী।”

করিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবনও ঝুঁকিপূর্ণ। জানালার কাঁচ ভাঙা, ছাদের ফাটল থেকে পানি পড়ে, বেঞ্চ অপ্রতুল। প্রধান শিক্ষক মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, “বারবার আবেদন করেও ভবন সংস্কারের কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।”

বামুনগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক জানান, “আজ শ্রেণিকক্ষে মাত্র ছয়জন শিক্ষার্থী এসেছে। বাকিরা বাড়ির কাজে ব্যস্ত বা বাইরে গেছে। এমন অবস্থা প্রায়ই দেখা যায়।”

অনেক প্রধান শিক্ষক অভিযোগ করেন, প্রশাসনিক কাজে তাদের নিয়মিতভাবে শিক্ষা অফিসে ডেকে নেওয়া হয়, ফলে শ্রেণিকক্ষে সময় দেওয়া সম্ভব হয় না। এতে পাঠদানে মারাত্মক প্রভাব পড়ে। ডিজিটাল শিক্ষার ক্ষেত্রেও জয়পুরহাট এখনো পিছিয়ে। সরকারি উদ্যোগ থাকলেও বাস্তবে ডিজিটাল পদ্ধতিতে পাঠদান কার্যত অনুপস্থিত। শহর বা গ্রাম— কোথাও প্রোজেক্টর বা মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম ব্যবহার করা হয় না। অধিকাংশ বিদ্যালয়ে এখনো খাতা-কলম ও ব্ল্যাকবোর্ডের ওপরই নির্ভর করতে হয়।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, “যেখানে ভালো শিক্ষা পরিবেশ রয়েছে, সেখানে শিক্ষার্থী বাড়ছে; আর যেখানে গাফিলতি আছে, সেখানে কমছে। কার্যকর নজরদারি ও সমন্বিত উদ্যোগ না নিলে শহর-গ্রামের শিক্ষার বৈষম্য আরও বাড়বে।”

 

একুশে সংবাদ/এ.জে

সর্বোচ্চ পঠিত - সারাবাংলা

Link copied!