গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এখন লাউ চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন স্থানীয় কৃষকরা। অনুকুল আবহাওয়া, উন্নত জাতের বীজ এবং কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে লাউ চাষের পরিধি দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। কম সময়ে বেশি ফলন, মজুরি খরচ কম এবং বাজারে ব্যাপক চাহিদার কারণে কৃষকরা ঝুঁকছেন লাউ চাষে। এতে ধীরে ধীরে বদলাচ্ছে গ্রামীণ অর্থনীতি, এবং লাউ চাষ কৃষকদের অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতার নতুন সম্ভাবনা তৈরি করছে।
সরেজমিনে উপজেলার নাগরী ইউনিয়নের বিরতুল গ্রামে দেখা গেছে, উফসী জাতের বারি-১,২,৩,৪ এবং উন্নত হাইব্রিড জাতের ‘ময়না’ চাষ হচ্ছে ব্যাপক পরিমাণে।
স্থানীয় কৃষক মো. জয়নাল মিয়া জানান, দুই বিঘা জমিতে লাউ চাষে তার খরচ হয়েছে প্রায় ২৫ হাজার টাকা, কিন্তু ইতোমধ্যে বিক্রি করেছেন ৫০ হাজার টাকারও বেশি লাউ। তিনি আরও বলেন, কৃত্রিম পরাগায়নের মাধ্যমে বেশি ফলন পাওয়া যায়। অন্য ফসলের তুলনায় লাউ চাষে ঝুঁকি কম এবং লাভ বেশি।
আরেক কৃষক রনি সরকার জানান, লাউ গরম ও আদ্র আবহাওয়ায় ভাল জন্মে। ফেব্রুয়ারী থেকে এপ্রিল এবং জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত লাউ চাষের উপযুক্ত সময়। লাউ চাষে পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ থাকা অত্যন্ত জরুরি। বর্তমানে স্থানীয় বাজারে প্রতি লাউ বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকায়।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, উপজেলার প্রায় ২১৫ হেক্টর জমিতে এবার লাউ চাষ করা হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে প্রতি বিঘায় গড়ে ১০ টন বা প্রতি হেক্টরে ৫০ টন ফলন পাওয়া সম্ভব। উন্নত পদ্ধতি ও সঠিক জাত নির্বাচন করলে ফলন আরও বাড়ানো সম্ভব। বারি লাউ-৪ এবং ময়না জাতকে উন্নত ফলনশীল জাত হিসেবে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, নাগরী ইউনিয়নের বিরতুল গ্রামে গড়ে উঠেছে ফসলের প্যাকেজিং হাউজ। এর মাধ্যমে দেশের সীমা পেরিয়ে বিদেশে সবজি রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। সরকারী সহায়তা থাকলে কৃষকরা আরও বেশি লাভবান হতেন এবং গ্রামীণ অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত হতো।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ মনির উদ্দিন মোল্লা বলেন, “অত্র অঞ্চলের মাটি লাউ চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। দো-আঁশ ও বেলে দোআঁশ ঝুরঝুরে মাটিতে লাউ ভালো জন্মায়। আমরা কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও মাঠ পর্যায়ে পরামর্শ দিয়ে ফলন ও আগ্রহ দুটোই বৃদ্ধি করেছি। রোগবালাই নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে কৃষকরা বছরে কয়েক গুণ বেশি লাভ করতে পারছে।”
গাজীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম খান বলেন, “মাচায় লাউ চাষ একটি লাভজনক কৃষি পদ্ধতি। সঠিক পরিকল্পনা ও পরিচর্যা থাকলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। উন্নত জাত ও সঠিক সময়ে চারা রোপণ, পরিচর্যা ও পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণ করলে খরচ কমে যায় এবং নিরাপদ সবজি উৎপাদন সম্ভব। লাউ এর চাহিদা সবসময় রয়েছে। গাজীপুরে ৪ হাজার ২০০ জন কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে সবজীর বীজ ও সার বিতরণ করা হয়েছে।”
একুশে সংবাদ/এ.জে
 
    
 
                        

 
                                         
                                             
                                                        
                             একুশে সংবাদের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
একুশে সংবাদের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন 
												 
												 
												 
												 
												 
												 
												 
												 
                                             
                                             
                                             
                                            
