সুন্দরগঞ্জ উপজেলা শহরের বাইরে আলীবাবা থিম পার্ক এবং সরোবর পার্ক গড়ে উঠলেও তেমন সাড়া ফেলতে পারেনি। কিন্তু মওলানা ভাসানী সেতু পয়েন্টে কোনো পার্ক না থাকলেও প্রতিদিন হাজার হাজার দর্শনার্থীর ভিড় চোখে পড়ার মতো।
মওলানা ভাসানী সেতু পয়েন্টটি বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তোলার সম্ভাবনাময় স্থান হিসেবে তৈরি হয়েছে। কিছুটা রাজশাহীর পদ্মা পাড়ের মতোই। কথাগুলো বলছিলেন সেতু পয়েন্টে ঘুরতে আসা স্কুল শিক্ষক মো. আব্দুল মান্নান। তার ভাষ্য, সেতু খুলে দেয়ার আগ থেকেই সেতু পয়েন্টে উৎসুক জনতার ভিড় ছিল। সেতু উদ্বোধনের দিন থেকে আজ পর্যন্ত প্রতিদিন যে হারে দর্শনার্থী আসছেন, তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। সেখানে কোন দোকানপাট নেই, এমনকি বসার জায়গাও নেই। তারপরও প্রতিদিন পরিবারসহ মানুষ তিস্তা নদীর মুক্ত বাতাস উপভোগ করতে এখানে আসছেন।

স্থানীয় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা এসএএস-এর নির্বাহী পরিচালক এ.বি.এম. নুরুল আক্তার মজনু বলেন, উপজেলা ছাড়াও গাইবান্ধা, রংপুর ও কুড়িগ্রাম জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন বিকাল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত হাজার হাজার দর্শক এখানে আসে। অনেকে ছোট নৌকা নিয়ে নদীতে ঘুরে বেড়ান, আবার অনেকে নদীর ধার ধরে পায়চারি করেন। দর্শণার্থীদের মধ্যে কিশোর-কিশোরীর সংখ্যা অনেক বেশি। তবে শিশুরাও বাবা-মার সঙ্গে প্রতিদিন আসে। এখানে তেমন কোন দোকানপাট নেই; ভাসমানসহ কয়েকটি মাঝারি মানের দোকান রয়েছে, যেখানে শুধুমাত্র বিস্কুট, চেনাচুর, কলা, রুটি ও পটেটো পাওয়া যায়।
ছোট নৌকার মাঝি ফুল মিয়া বলেন, “এখন নদীতে খুব বেশি পানি নেই, তারপরও নৌকা নিয়ে চলাচল সম্ভব। সারাদিন কম লোক থাকলেও পড়ন্ত বিকালে হাজার হাজার মানুষ ঘুরতে আসে। প্রতিদিন গড়ে এক হাজার টাকা রোজগার হয়।”
মওলানা ভাসানী সেতু বাস্তবায়ন আন্দোলনের নেতা, প্রবীণ অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আ.ব.ম. শরিওতুল্লাহ মাষ্টার জানান, ২০০০ সাল থেকে তিস্তা সেতু বাস্তবায়ন আন্দোলন শুরু হয়। ২০১২ সালে তিস্তা সেতু নির্মাণের কাজ আলোর মুখ দেখে। এরপর সাবেক প্রধান প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম প্রামানিকের সহযোগিতায় ২০১৪ সালে সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ২০২৫ সালের ২০ আগস্ট সেতুটি উদ্বোধন করা হয়। এটি শুধুমাত্র একটি সেতু নয়, বরং একটি বিনোদন কেন্দ্র এবং ব্যবসায়িক জোন হিসেবে গড়ে উঠেছে।
উপজেলা প্রকৌশলী তপন কুমার চক্রবর্তী বলেন, “সেতু পয়েন্টটি এখন চমৎকার বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছে। সেতুর দুইধারে ব্লক দিয়ে নদীরক্ষা সড়ক নির্মাণের কারণে এটি আরও সুন্দরভাবে দৃশ্যমান। কিছু দিনের মধ্যে সেতুর দুই পাশেই ব্যবসায়িক জোন এবং বিনোদন কেন্দ্র গড়ে উঠবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। সম্ভাবনাময় এই পয়েন্টে শিল্পপতির সুদৃষ্টি একান্ত প্রয়োজন। এটি এখানকার মানুষের জন্য অর্থনৈতিক জোনে পরিণত হবে।”
একুশে সংবাদ/এ.জে



একুশে সংবাদের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

