AB Bank
  • ঢাকা
  • সোমবার, ২৭ অক্টোবর, ২০২৫, ১১ কার্তিক ১৪৩২

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

সিটি ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসজুড়ে ধ্বংসস্তূপ, থমথমে পরিবেশ


Ekushey Sangbad
নাজমুল করিম, সাভার, ঢাকা
১২:৪৫ পিএম, ২৭ অক্টোবর, ২০২৫

সিটি ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসজুড়ে ধ্বংসস্তূপ, থমথমে পরিবেশ

সাভারের আশুলিয়ার খাগান এলাকায় ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির কয়েকজন শিক্ষার্থীর একটি বাসায় সিটি ইউনিভার্সিটির কিছু শিক্ষার্থীর হামলার অভিযোগকে কেন্দ্র করে দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় চলা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে সাভারের সিটি ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাস ও এর আশপাশের এলাকা।

রবিবার (২৬ অক্টোবর) দিবাগত রাতে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আশুলিয়ায় ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এ সময় দফায় দফায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ চালানো হয়। এতে আহত হয়েছেন দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী। তবে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো সহযোগিতা তারা পাননি।

সকালে সাভারের বিরুলিয়া এলাকায় সিটি ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসে প্রবেশের ফটকেই দেখা যায় আগুনে পোড়া চিহ্ন। বাইরে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে রয়েছে কাঁচ, কাঠসহ ভাঙা বিভিন্ন জিনিসপত্র। ভেঙে দেওয়া হয়েছে একটি প্রাইভেটকার, দুটি মাইক্রোবাস ও দুটি মোটরসাইকেল। ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে অন্তত তিনটি বাস, পাঁচটি মাইক্রোবাস ও একটি প্রাইভেটকারে। এর মধ্যে কোনো কোনো যানবাহনে সকালে ধোঁয়া উড়তেও দেখা গেছে।

একাডেমিক ভবনেও চালানো হয়েছে ধ্বংসযজ্ঞ। পুরো ভবনের জানালার থাইগ্লাস ভাঙা দেখা যায়—কোনোটি সম্পূর্ণ, কোনোটি আংশিক। ভেতরে ঢুকে প্রায় প্রতিটি ফ্লোরে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে থাকতে দেখা যায় ফাইলের কাগজপত্র, ভাঙা কাচ ও আসবাবপত্র। প্রায় প্রতিটি কক্ষের চেয়ার, টেবিল, কম্পিউটার, বাথরুমের কমোড, বেসিন, দরজা, এসি, ফটোকপি মেশিন, প্রিন্টার, অফিসকক্ষ, অভ্যর্থনাকক্ষ ও কর্মকর্তাদের ডেস্ক গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া চালানো হয়েছে ব্যাপক লুটপাট—ল্যাপটপ, টাকা ও বিভিন্ন মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করা হয়েছে।

শিক্ষার্থীরা জানান, রবিবার সন্ধ্যার পর ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের ভাড়া বাসা ‘ব্যাচেলর প্যারাডাইস হোস্টেল’-এর পাশে বসে ছিলেন সিটি ইউনিভার্সিটির কিছু শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে এক শিক্ষার্থী থুতু ফেললে অসর্তকতাবশত সেটি মোটরসাইকেলযোগে যাওয়া ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির এক শিক্ষার্থীর শরীরে লাগে। এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে কথা–কাটাকাটি হয়। পরে রাত ৯টার দিকে সিটি ইউনিভার্সিটির প্রায় অর্ধশত শিক্ষার্থী দেশীয় অস্ত্র ও ইটপাটকেল নিয়ে ড্যাফোডিল শিক্ষার্থীদের ভাড়া করা ওই বাসায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেন।

ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা ঘটনাস্থলে জড়ো হন। একপর্যায়ে তারা সিটি ইউনিভার্সিটির দিকে অগ্রসর হন। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্যরা সেখানে উপস্থিত হয়ে সিটি ইউনিভার্সিটি প্রশাসনকে বিষয়টি জানিয়ে সমাধানের আহ্বান জানান। এরই মধ্যে সিটি ইউনিভার্সিটি সংলগ্ন এলাকায় পৃথক একটি স্থানে সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা ড্যাফোডিলের এক শিক্ষার্থীকে মারধর করেন। পরে ড্যাফোডিলের শিক্ষার্থীরা সিটি ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন। এ সময় ক্যাম্পাসে দাঁড়িয়ে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি বাস, দুটি মাইক্রোবাস ও একটি প্রাইভেটকারে আগুন ধরিয়ে দেন তারা। একটি বাস, দুটি প্রাইভেটকার, একটি মোটরসাইকেল ও প্রশাসনিক ভবন ভাঙচুর করা হয়। পরে ড্যাফোডিলের শিক্ষার্থীরা এলাকা ত্যাগ করেন।

পরে উভয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ আলোচনা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও ওই এলাকায় উপস্থিত ছিলেন।

সিটি ইউনিভার্সিটির এক শিক্ষার্থী বলেন, “ড্যাফোডিলের এক ছাত্রের গায়ে থুতু লাগা থেকে ঘটনার শুরু। পরে সে সরিও বলেছে। কিন্তু তারা বিষয়টিকে সেভাবে নেয়নি, তাকে মারধর করে ও আটকে রাখে। বিষয়টি আমাদের জানা গেলে আমরা এগিয়ে যাই। এরপর তারা আমাদের ক্যাম্পাসে ঢুকে সব ভেঙে ফেলে—অ্যাকাউন্টস অফিসে কোনো টাকা নেই, পাঁচটা গাড়ি ভেঙেছে, প্রতিটি রুমে সব ভাঙচুর করেছে। এটা কি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর আচরণ হতে পারে?”

একই বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নারী শিক্ষার্থী বলেন, “ঘুমন্ত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করা হয়েছে। তারা অস্ত্র নিয়ে এসেছে। মেয়েদের হলের কলাপসিবল গেটে ভাঙচুরের চেষ্টা করে, ইট ছুড়ে মারে। আমাদের গায়েও ইট লেগেছে। পুরো ক্যাম্পাস ভাঙচুর করেছে।”

সিটি ইউনিভার্সিটির টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. আরিফুজ্জামান বলেন, “রাত ১২টা থেকে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত আমরা প্রশাসনের অনেক সহযোগিতা চেয়েছি। ওরা এসে পুরো ক্যাম্পাসে আগুন দিয়ে ধ্বংস করেছে। শত শত ছাত্রকে আহত করেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা পাইনি। আমরা খুব অসহায় অবস্থায় পড়েছি।”

সিটি ইউনিভার্সিটির প্রক্টর অধ্যাপক আবু জায়েদ বলেন, “ঘটনার সূত্রপাত কীভাবে হয়েছে, আমরা এখনো নিশ্চিত নই। ছাত্রদের মারামারি থেকে ক্যাম্পাস পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা হতে পারে না। এটি পরিকল্পিত। আমাদের শিক্ষার্থীদের মধ্যে আহতের সংখ্যা আনুমানিক অর্ধশতাধিক।”

ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির এক্সটার্নাল অ্যাফেয়ার্সের পরিচালক সৈয়দ মিজানুর রহমান বলেন, “অসর্তকতাবশত সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীর ফেলা থুতু ড্যাফোডিলের শিক্ষার্থীর শরীরে লাগে। ‘সরি’ বলার পর বিষয়টি মিটেও যায়। কিন্তু রাতে এসে ড্যাফোডিল শিক্ষার্থীদের মেসে ভাঙচুরের ঘটনাটি দুঃখজনক। উভয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই আমাদের সন্তান, আমরা চেষ্টা করছি বিষয়টি সমাধানের।”

সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির প্রক্টর শেখ মুহাম্মদ আলিয়া বলেন, “এখনো আমাদের নয়জন শিক্ষার্থীকে সিটি ইউনিভার্সিটিতে আটকে রাখা হয়েছে। আমরা বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছি। এ ঘটনায় ড্যাফোডিলের প্রায় দেড়শ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।”

ঢাকা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মো. আরাফাতুল ইসলাম বলেন, “শিক্ষার্থীদের মধ্যে মারামারি হয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থলে রয়েছে। ঝগড়া-বিবাদ ও ভাঙচুর রাতেই হয়েছে। কেন এই ঘটনা ঘটল, সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে, তবে পরিবেশ কিছুটা থমথমে।”

 

একুশে সংবাদ/এ.জে

সর্বোচ্চ পঠিত - সারাবাংলা

Link copied!