বাঙালির সংস্কৃতির শিকড়ের গভীরে প্রোথিত এক অনন্য শিল্পরূপ, যাত্রা। একসময় এই যাত্রাই ছিল গ্রামের রাতের বিনোদন, মানুষের হাসি-কান্না, প্রেম-বিরহ আর সমাজচিত্রের প্রতিচ্ছবি। কিন্তু আধুনিক প্রযুক্তি, টেলিভিশন ও ডিজিটাল বিনোদনের ঢেউয়ে যাত্রাশিল্প যখন প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে, তখন মুকসুদপুরের একদল সংস্কৃতিপ্রেমী মানুষ এই ঐতিহ্য রক্ষায় নিয়েছেন দীপ্ত শপথ।
শনিবার(২৫ অক্টোবর) রাতে মুকসুদপুর শিল্পকলা একাডেমির উদ্যোগে শুরু হয় যাত্রা মহড়া। স্থানীয় যাত্রাশিল্পীরা নতুন উদ্যমে অংশ নেন এই মহড়ায়, যেন দীর্ঘদিনের নীরবতার পর মঞ্চে ফিরে এসেছে প্রাণের সুর, ঢোলের শব্দে আবারও মুখরিত হয়েছে মুকসুদপুরের আকাশ-বাতাস।
এই মহৎ উদ্যোগের নেতৃত্ব দিচ্ছেন একনিষ্ঠ সাংস্কৃতিক সংগঠক মোস্তাফিজুর রহমান সেলিম, মুকসুদপুর শিল্পকলা একাডেমির সদস্য-সচিব। তাঁর নেতৃত্বে স্থানীয় শিল্পীরা শুধু একটি শিল্পরূপ বাঁচানোর কাজই করছেন না, বরং এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে ঐতিহ্য হস্তান্তরের সেতুবন্ধন গড়ে তুলছেন।
স্থানীয় শিল্পী দ্বীজেন বালা কণ্ঠে মিশে আছে অনুভবের আবেগ, "অনেকদিন পর আবার যাত্রার মহড়া শুরু হলো। আমরা চাই, আমাদের সন্তানরাও যেন জানে যাত্রা কী, এই শিল্পের পেছনে কতটা শ্রম, ভালোবাসা আর আবেগ লুকিয়ে থাকে।"
মুকসুদপুর শিল্পকলা একাডেমির সদস্য-সচিব মোস্তাফিজুর রহমান সেলিম বলেন, "যাত্রা শুধু বিনোদন নয়, এটি আমাদের লোকজ সংস্কৃতির এক জীবন্ত দলিল। এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখাই আমাদের দায়িত্ব, আমাদের প্রজন্মের কাছে এটাই হবে উপহার।"
এই উদ্যোগ ঘিরে মুকসুদপুরে তৈরি হয়েছে এক উচ্ছ্বাসময় পরিবেশ। সংস্কৃতিপ্রেমী মানুষজন, স্থানীয় তরুণ-তরুণীরা প্রতিদিন সন্ধ্যায় ভিড় করছেন মহড়াস্থলে। একদিকে পুরনো সংলাপ ও সংগীতের রিহার্সেল, অন্যদিকে নবীন মুখেরা শিখছে যাত্রার সংলাপ উচ্চারণ, মঞ্চাভিনয়, পোশাক ও রীতিনীতির পাঠ।
এইসব প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে যেন আবারও জেগে উঠছে বাঙালির লোকসংস্কৃতির এক গৌরবময় অধ্যায়। সময়ের স্রোতে হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যকে ফিরে পাওয়ার এই চেষ্টা নিঃসন্দেহে এক মানবিক প্রতিরোধের গল্প—সংস্কৃতিকে টিকিয়ে রাখার গল্প।
মুকসুদপুরের যাত্রাশিল্পীরা দেখিয়ে দিচ্ছেন, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বাঁচে তখনই, যখন মানুষ তা হৃদয়ে ধারণ করে।
একুশে সংবাদ/এ.জে



একুশে সংবাদের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

