ঝড়-বৃষ্টি, কাদা কিংবা গভীর রাত—যে সময়ই হোক, ডাক পেলেই লাশ নিয়ে ছুটে যেতে হয় থানায়, মর্গে বা দুর্ঘটনাস্থলে। এমনই এক ভিন্নধর্মী পেশায় দুই দশক ধরে যুক্ত রয়েছেন বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার বারইখালী গ্রামের বেল্লাল মল্লিক।
অস্বাভাবিক মৃত্যু, দুর্ঘটনা বা হত্যা—যে কোনো ঘটনার খবর এলেই সবাই জানে, লাশটি নিয়ে যাবে বেল্লাল মল্লিক। ২০ বছর ধরে এই কাজ করেই তিনি চালাচ্ছেন সংসার।
লাশ টানার জন্য তার একমাত্র বাহন একটি পুরনো ভ্যান। সেই ভ্যানেই তিনি লাশ নিয়ে যান বাগেরহাট সদর হাসপাতালের মর্গে। ময়নাতদন্ত শেষে সেই নিথর দেহ ফেরত দেন স্বজনদের হাতে। শত শত লাশের ভার তিনি টেনেছেন নিরবে, দিনরাত পরিশ্রম করে।
জরাজীর্ণ ঘরে স্ত্রী জোৎস্না বেগম ও সন্তানদের নিয়ে তার বসবাস। দারিদ্র্যই যেন তার জীবনের নিত্যসঙ্গী। প্রতিমাসে গড়ে ৪-৫টি লাশ বহন করতে হয় তাকে। এই টাকাতেই কোনোভাবে চলে সংসার।
বেল্লাল মল্লিক বলেন, “প্রথম প্রথম খুব ভয় লাগত। নির্জন জায়গায় লাশ টানতে গিয়ে গা ছমছম করত। এখন আর ভয় পাই না। লাশ যত গলিতই হোক না কেন, আমি তাকে আমানত মনে করি।”
তিনি আরও জানান, শিশুর লাশ বহন করতে গিয়ে অনেক সময় চোখে পানি চলে আসে। “কখনও কখনও লাশের পাশে বসেই রাত কাটাতে হয়। ক্ষুধা পেলে সেখানেই বসে খেয়ে নিই,” বলেন বেল্লাল।
ভ্যানটিকে সবাই ‘লাশবাহী ভ্যান’ বলেই চেনে। তাই অন্য সময় কেউ তাতে উঠতে চায় না। ফলে কাজ না থাকলে তিনি বসেই থাকেন।
বেল্লালের ভাষায়, “লাশ টানা আমার বাপ-দাদার পেশা না। কিন্তু জীবিকার তাগিদে এ কাজ নিয়েছি। সমাজে কেউ তেমন মূল্য না দিলেও আমি মনে করি, এটি মানবসেবারই একটি অংশ।”
মৃতদেহ নিয়ে নানা কুসংস্কার ও ভয়ের মধ্যেও নির্ভিকভাবে এ কাজ করছেন তিনি। তবে পরিবারের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত বেল্লাল সরকারের কাছে একটি ঘর ও সামান্য জমি চেয়েছেন।
তার প্রত্যাশা—“যদি একটু জায়গা পেতাম, একটা ঘর তুলতে পারতাম, তাহলে এই সমাজের দরকারি এই কাজটা আরও ভালোভাবে করতে পারতাম।”
একুশে সংবাদ/এ.জে



একুশে সংবাদের সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

