AB Bank
  • ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর, ২০২৫, ৪ কার্তিক ১৪৩২

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

ইলিশ শিকারে বৈষম্য: বাংলাদেশি উপকূলের জেলেদের ক্ষোভ



ইলিশ শিকারে বৈষম্য: বাংলাদেশি উপকূলের জেলেদের ক্ষোভ

কারো সর্বনাশ, কারো পৌষ মাস—বাংলাদেশের উপকূলীয় জেলেদের সর্বনাশ যেন এখন ভারতীয় জেলেদের পৌষ মাস। বাংলাদেশে যেখানে মা ইলিশ রক্ষায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা চলছে, সেখানে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে তা মাত্র ১১ দিন। ফলে এক দেশের জেলেরা যখন জালে ধুলো জমাচ্ছে, অন্য দেশের জেলেরা তখন সাগরে নামছেন ইলিশ ধরতে।

ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুম চলছে। এ সময়ে সাগরের নোনা পানি থেকে নদীর মিঠা পানিতে এসে ডিম ছাড়ে মা ইলিশ, তারপর আবার সাগরে ফিরে যায়। এই প্রজনন চক্র যেন বাধাগ্রস্ত না হয়, সে জন্য সাগর, নদী ও মোহনায় মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ কারণে উপকূলের অন্যান্য এলাকার মতো পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীর মৎস্যঘাটগুলোতেও সারি সারি ট্রলার এখন নোঙর অবস্থায়।

তবে স্থানীয় জেলেদের উদ্বেগ—একই বঙ্গোপসাগরে দুই দেশের নিষেধাজ্ঞার সময় এক নয়। বাংলাদেশের নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকার ১৩ দিন আগেই ভারতের নিষেধাজ্ঞা শেষ হচ্ছে।

বাংলাদেশ সরকার মা ইলিশ সংরক্ষণে ৪ থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গে তা মাত্র ২ থেকে ১২ অক্টোবর পর্যন্ত ১১ দিন। একই সাগরে পাশাপাশি দুই দেশের এই ভিন্নতা নিয়ে উপকূলের জেলেদের মনে এখন ক্ষোভ ও অনিশ্চয়তা।

রাঙ্গাবালী উপজেলার ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের কোড়ালিয়া মৎস্যঘাটে গিয়ে দেখা যায়, সারি সারি ট্রলার ঘাটে নোঙর করা। ট্রলারের জেলেরা বলেন, “আমাদের দেশে নিষেধাজ্ঞা ২২ দিন, আর ভারতে ১১ দিন। আমাদের নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার দুই সপ্তাহ আগেই তারা মাছ ধরতে পারবে। তখন তারা যেন আমাদের জলসীমায় ঢুকে মাছ না ধরে—এটা দেখভাল করা জরুরি। না হলে নিষেধাজ্ঞা শেষে আমরা সাগরে গিয়ে কাঙ্ক্ষিত মাছ পাব না।”

একই এলাকার ট্রলার মালিক বলেন, “আমরা নিষেধাজ্ঞা মানছি, ট্রলার বেঁধে রেখেছি। কিন্তু ওপাশে যদি মাছ ধরা শুরু হয়, ইলিশ তো আর পাসপোর্ট-ভিসা নিয়ে সাঁতরে চলে না! তখন ক্ষতি হবে আমাদেরই।”

জেলেদের দাবি, নিষেধাজ্ঞার সময় কোস্ট গার্ড ও নৌবাহিনীর কঠোর নজরদারি দরকার। কারণ, আগেও ভারত ও মিয়ানমারের জেলেদের বাংলাদেশের জলসীমায় ঢুকে মাছ ধরার নজির রয়েছে।

পটুয়াখালী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. কামরুল ইসলাম বলেন, “আমাদের জলসীমায় যদি কেউ প্রবেশ করতে না পারে, তাহলে কোনো সমস্যা নেই। পার্শ্ববর্তী দেশ কী করছে, তা নিয়ে আমাদের মাথাব্যথা নেই। কারণ, ৯০ ভাগ ইলিশই বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে এসে ডিম ছাড়ে। নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ড সাগর পাহারায় রয়েছে। এই ২২ দিন পাহারা সমুন্নত থাকলে ইলিশ নিরাপদে ডিম ছাড়তে পারবে।”

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুই দেশের নিষেধাজ্ঞার সময় আলাদা হওয়ায় ইলিশ সংরক্ষণ কার্যক্রমে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন সায়েন্স অনুষদের সহকারী অধ্যাপক ও গবেষক মীর মোহাম্মদ আলী বলেন, “সাগর এক, ইলিশের প্রজাতিও এক—তাহলে নিষেধাজ্ঞা কেন এক নয়? বাংলাদেশের ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা বিজ্ঞানসম্মত হলেও, ভারতের ১১ দিনের অবরোধ যথেষ্ট নয়। ইলিশ সংরক্ষণে প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে কূটনৈতিক ও প্রশাসনিক সমন্বয় জরুরি, যাতে এক দেশের শিথিলতা অন্য দেশের ক্ষতির কারণ না হয়।”

তিনি আরও বলেন, “ইলিশ বাংলাদেশের জাতীয় সম্পদ—আমাদের গর্ব, অর্থনীতি ও সংস্কৃতির প্রতীক। কিন্তু একই সাগরে দুই দেশের ভিন্ন সময়ের নিষেধাজ্ঞা এখন সংরক্ষণ কার্যক্রমে প্রশ্ন তুলছে। মা ইলিশের নিরাপদ প্রজননের জন্য দুই দেশের সময়সীমা এক করলে ফল আরও ইতিবাচক হবে।”

 

একুশে সংবাদ/এ.জে

সর্বোচ্চ পঠিত - সারাবাংলা

Link copied!