AB Bank
  • ঢাকা
  • সোমবার, ২০ অক্টোবর, ২০২৫, ৪ কার্তিক ১৪৩২

সরকার নিবন্ধিত নিউজ পোর্টাল

Ekushey Sangbad QR Code
BBS Cables
Janata Bank
  1. জাতীয়
  2. রাজনীতি
  3. সারাবাংলা
  4. আন্তর্জাতিক
  5. অর্থ-বাণিজ্য
  6. খেলাধুলা
  7. বিনোদন
  8. শিক্ষা
  9. তথ্য-প্রযুক্তি
  10. অপরাধ
  11. প্রবাস
  12. রাজধানী

ইসলামপুরে শরীরে প্রাণীদের মত লোম নিয়ে তিনটি পরিবারের মানবেতর জীবন-যাপন



ইসলামপুরে শরীরে প্রাণীদের মত লোম নিয়ে তিনটি পরিবারের মানবেতর জীবন-যাপন

জামালপুরের ইসলামপুরে তিনটি পরিবারের নারী-পুরুষ মিলিয়ে ১২ জন সদস্যই মুখজুড়ে লম্বা লোম নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কষ্ট ও বিড়ম্বনার মধ্যে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বংশগতভাবে শরীর ও মুখে অস্বাভাবিক লোম নিয়ে জন্ম নেওয়া এসব মানুষ আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে চিকিৎসা করাতে পারছেন না। প্রতিদিনই তারা সামাজিক অবহেলা ও কটাক্ষের শিকার হচ্ছেন।

প্রায় দুই শতাব্দী ধরে একই বংশের সদস্যরা এই অস্বাভাবিক শারীরিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে বেঁচে আছেন। সমাজে অবহেলিত জীবন কাটালেও আর্থিক অক্ষমতার কারণে চিকিৎসা করানো সম্ভব হয়নি তাদের। স্থানীয়ভাবে মানুষ তাদের ‘লোমমানব’ বলে উপহাস করে থাকে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ইসলামপুর পৌর এলাকার উত্তর দরিয়াবাদ ফকিরপাড়া গ্রামের ৩২ বছরের শিরিনা আক্তার বয়সে প্রাপ্তবয়স্ক হলেও উচ্চতায় মাত্র আড়াই ফুট। বাঁকা মেরুদণ্ডে বিশাল কুঁজ আর মুখজুড়ে লম্বা দাড়ি—প্রথম দেখায় তাকে নারী বলে বুঝে ওঠা কঠিন। জন্ম থেকেই মুখে লোম নিয়ে বড় হয়েছেন শিরিনা। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মুখের লোম আরও বেড়ে এখন দাড়িতে পরিণত হয়েছে।

তিনি জানান, স্কুলে পড়ার সময় সহপাঠীরা উপহাস করত। বাবা সিরাজ শেখ মারা যাওয়ার পর বন্ধ হয়ে যায় পড়াশোনা। অভাবের সংসারে চিকিৎসা তো দূরের কথা, দুবেলা খাবারই জোটে না অনেক সময়।

শিরিনা একা নন; তার মা কমিলা বেওয়া (৬২), ভাই করিম শেখ (৪২), আত্মীয় জোনাব আলী মণ্ডল (৫৫), তার মেয়ে জুলেখা আক্তার (২৫), ছেলে আক্রাম (১৩), নজরুল (৮), ছোট দুই মেয়ে আলেয়া (৫) ও তাজমীন (৩), মমতাজ মণ্ডল (৩৬), তার ছেলে আকাশ মণ্ডল (১২) এবং আসাদ মণ্ডল (৭)—এই তিন পরিবারের মোট ১২ জন সদস্যই একই বংশের এবং শরীরে অস্বাভাবিক লোম নিয়ে জীবনযাপন করছেন। প্রজন্মের পর প্রজন্ম তারা এভাবেই বেড়ে উঠেছেন।

কমিলা বেওয়া বলেন, “আমার এক ছেলে আর এক মেয়ের মুখেই অস্বাভাবিক লোম। ছেলের শরীরের চেয়ে মেয়ের মুখে লোম বেশি। মেয়েটা কুঁজো হওয়ায় ঠিকভাবে হাঁটতেও পারে না। প্রায় ২৫ বছর আগে স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে অন্যের বাড়িতে কাজ করে কোনোমতে ছেলে-মেয়ে নিয়ে বেঁচে আছি।”

জুলেখা আক্তার বলেন, “টাকার অভাবে বাবা চিকিৎসা করাতে পারেননি। নবম শ্রেণিতে থাকতেই লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়। মুখে দাড়ির মতো লোম হওয়ায় মানুষ আমাদের নিয়ে ঠাট্টা করে—তখন খুব কষ্ট হয়।”

তারা আরও জানান, সরকারের কোনো সহায়তা তারা এখনো পাননি। শুধুমাত্র শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারণে শিরিনা আক্তার প্রতিবন্ধী ভাতা পান।

উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আবির আহমেদ বিপুল মাস্টার ও সাবেক কাউন্সিলর জুলহাস মণ্ডল বলেন, “ছোটবেলা থেকেই তাদের এমন অবস্থায় দেখছি। তাদের বাপ-দাদারাও একইভাবে জীবন যাপন করতেন। অভাবের সংসারে দিন চলে যায় কষ্টে, আবার সমাজে তারা অবজ্ঞা ও বঞ্চনার শিকার।”

ইসলামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এ. এ. এম. আবু তাহের বলেন, “এটি হরমোনজনিত এক ধরনের জেনেটিক (বংশানুক্রমিক) সমস্যা। যেহেতু এটি বংশগত, তাই অতিরিক্ত উদ্বেগের কিছু নেই। প্রয়োজনে চিকিৎসা পরামর্শ দেওয়া সম্ভব।”

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তৌহিদুর রহমান বলেন, “ইসলামপুরে এমন লোমশ পরিবার আছে—বিষয়টি আমি জানতাম না। তবে তারা যোগাযোগ করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

 

একুশে সংবাদ/এ.জে

সর্বোচ্চ পঠিত - সারাবাংলা

Link copied!