বর্ষার পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার রামনগর গ্রামের বিলজুড়ে বেড়ে যায় ছোট মাছ, ব্যাঙ, শামুক-ঝিনুকসহ নানা জলজ প্রাণীর আনাগোনা। এ সময়টি হয়ে ওঠে হাঁস পালনের উপযোগী মৌসুম। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে রামনগর গ্রামের কৃষক মোনাজাত আলী গড়ে তুলেছেন একটি হাঁসের খামার, যা আজ তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে।
২০২৩ সালে ছোট পরিসরে মাত্র ৬ হাজার হাঁসের বাচ্চা নিয়ে খামার শুরু করেছিলেন মোনাজাত আলী। ইউটিউব দেখে হাঁস পালনের কৌশল শিখে শুরু করা উদ্যোগটি এখন সফলতার প্রতীক। বর্তমানে তার খামারে হাঁসের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজারে।
দিনভর হাঁসগুলো বিলের পানিতে মুক্তভাবে বিচরণ করে প্রাকৃতিক খাবার খায়। সন্ধ্যায় সেগুলো শুকনো স্থানে এনে পরিচর্যা শেষে পুনরায় সকালে বিলে ছেড়ে দেওয়া হয়। পানি ও খাবারের প্রাপ্যতা অনুযায়ী সময়মতো স্থান পরিবর্তন করাই এই খামারের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
মোনাজাত আলী জানান, তার খামারে খাকি ক্যামবেল জাতের হাঁস রয়েছে। ৫ জন শ্রমিক হাঁসগুলোর দেখাশোনা করেন, যাদের মাসিক বেতন মোট ৫০ হাজার টাকা। এপ্রিলের শুরুতে কেনা হাঁসগুলো জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকে ডিম দেওয়া শুরু করে। বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে ৩ হাজার ডিম সংগ্রহ করা হয়। পাইকারি বাজারে প্রতিটি ডিম ১৩ টাকায় বিক্রি হয়। এতে প্রতিদিন আয় হচ্ছে প্রায় ৩৯ হাজার টাকা, যা মাসে দাঁড়ায় ১১ লাখ ৭০ হাজার টাকা। সব খরচ বাদে মাসিক গড় লাভ প্রায় ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
তিনি আরও জানান, হাঁসগুলো টানা ৬ মাস পর্যন্ত ডিম দেয়। পরবর্তীতে মাংস বিক্রির মাধ্যমে অতিরিক্ত লাভ পাওয়া যায়, যা প্রাথমিক বিনিয়োগের চেয়েও বেশি।
দামুড়হুদা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা নীলিমা আক্তার হ্যাপি বলেন, “হাঁস পালনে দেশে বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। মোনাজাত আলীর খামার একটি সফল উদাহরণ, যা অনেক বেকারের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হতে পারে। প্রাণিসম্পদ বিভাগ খামারিদের সরকারি মূল্যে ভ্যাকসিন, চিকিৎসা ও পরামর্শ সেবা দিয়ে আসছে।”
রামনগরের এই সফল উদ্যোক্তা মোনাজাত আলী এখন এলাকার তরুণদের জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছেন। তার হাঁসের খামার শুধু তাকে স্বাবলম্বী করেনি, বরং অনেককেই নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছে।
একুশে সংবাদ//র.ন