রাজশাহীর তানোর উপজেলার বিল কুমারী বিলে কিছুতেই থামছে না অবৈধ চায়না দুয়ারি (রিং) জাল দিয়ে বোয়ালসহ দেশীয় প্রজাতির ছোট মাছের বাচ্চা শিকার। বরং দিন দিন বেড়েই চলছে এসব অবৈধ জালে নির্বিচার মাছ ধরার ধুম।
সরকারি ভাবে চায়না দুয়ারি রিং জাল নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলেও প্রতিদিনই ওই বিলে এই জাল দিয়ে মাছ শিকার করছেন স্থানীয় জেলেরা। ফলে ধ্বংস হচ্ছে দেশীয় প্রজাতির মাছের রেণু-পোনা—বিশেষ করে বোয়াল, পাবদা, গুচি, ছেঁড়ি, ময়া, টেংরা, টাকি ও অন্যান্য ছোট মাছের বংশবিস্তার মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, উপজেলা মৎস্য দপ্তর মাঝে মাঝে লোকদেখানো অভিযান চালালেও কাউকে আটক বা জাল জব্দ করা হচ্ছে না। এতে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন জেলেরা। তারা দিনরাত সমানতালে অবৈধ চায়না জাল দিয়ে মাছ শিকার করে চলেছেন, ফলে বিলের প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে।
বিল কুমারী এলাকার মৎস্যজীবীরা জানান, জীবিকা নির্বাহের একমাত্র অবলম্বন এ বিল। প্রতিদিন এখানকার মাছ ধরেই তাদের সংসার চলে। কিন্তু জীবিকার তাগিদে ছোট বড় না দেখে বাধ্য হয়ে সবধরনের মাছই ধরতে হচ্ছে। তারা বলেন, “একসময় আমরা সুতি জাল বা কারেন্ট জাল ব্যবহার করতাম। এখন নতুন চায়না জাল এসেছে, যা দিয়ে সব বয়সী মাছ ধরা পড়ে। এতে মাছের বংশ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।”
তাদের দাবি, সরকার যদি বিল ভরার মৌসুমে বিকল্প জীবিকার সুযোগ বা আর্থিক সহায়তা দেয়, তবে অবৈধ জাল ব্যবহার বন্ধ করা সম্ভব হবে।
বিল কুমারী বিলের সাবেক সভাপতি ইব্রাহিম আলী বলেন, “পাঁচ বছর আগেও আমাদের বিলে প্রচুর রুই, কাতলা, বোয়াল, আইড়সহ নানা প্রজাতির মাছ পাওয়া যেত। তখন ডাকবাংলো মাঠে বড় বড় মাছের মেলা বসত। আশপাশের এলাকা থেকে মানুষ মাছ কিনতে আসত। এখন সেই দিনগুলো হারিয়ে গেছে। নতুন নতুন অবৈধ জালে মাছ ধরা হচ্ছে, যা ছোট মাছের জন্য ভয়াবহ হুমকি।”
এ বিষয়ে তানোর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা বাবুল হোসেন বলেন, “অবৈধ জালের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। পাশাপাশি জেলেদের সতর্ক করা হচ্ছে যেন তারা নিষিদ্ধ জাল ব্যবহার না করেন।”
তানোর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাঈমা খান বলেন, “আমি সম্প্রতি যোগদান করেছি। আমার দায়িত্বকালে কোনোভাবেই বিলে অবৈধ জাল দিয়ে মাছ শিকার করতে দেওয়া হবে না। দ্রুত অভিযান পরিচালনা করা হবে।”
একুশে সংবাদ/এ.জে