রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার খেতুর গ্রামে তিন দিনব্যাপী ঠাকুর নরোত্তম দাসের তিরোভাব তিথি মহোৎসব সমাপ্ত হয়েছে রবিবার (১২ অক্টোবর)। খেতুরীধাম সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বখ্যাত ছয়টি ধামের মধ্যে একটি এবং বাংলাদেশে একমাত্র ধাম হিসেবে পরিচিত।
মহোৎসবটি বাংলা কার্তিক মাসের প্রথম তিন দিনে অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম দিন থেকে ভক্তরা নাম-প্রার্থনা ও ধর্মীয় অনুশীলনের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু করেন। দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিনে অনুষ্ঠিত হয় অষ্টপ্রহর কীর্তন, গঙ্গাস্নান, প্রসাদ বিতরণ ও বিভিন্ন ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান। শেষ দিনে, অর্থাৎ ৩ কার্তিক, দীর্ঘ প্রার্থনা ও মহান্ত বিদায়ের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানসমূহ সমাপ্ত হয়।
মহোৎসবকে ঘিরে দেশ-বিদেশ থেকে লাখো ভক্ত খেতুরীধামে আগমন করেন। খেতুর, প্রেমতলী, ডুমুরিয়া, ফরাদপুর ও বসন্তপুরসহ পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোতে ভক্তদের অবস্থান পরিণত হয় এক মহামিলনমেলায়।
উৎসবকালে দেশে ও বিদেশ থেকে আগত ভক্তরা অধিবাসে অংশ নেন। অরুণোদয় থেকে অষ্ট প্রহরব্যাপী চলে তারক ব্রহ্মনাম সংকীর্তন। এতে অংশগ্রহণ করেন ভারতের, নেপালের ও ভুটানের বহু ভক্ত।
খেতুরীধাম ট্রাস্টি বোর্ডের সম্পাদক শ্যামাপদ সান্যাল বলেন, শত শত বছর ধরে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে উৎসবটি অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পাশাপাশি মুসলিম ও অন্যান্য ধর্মের মানুষও এতে অংশগ্রহণ করেন।
গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফয়সাল আহমেদ বলেন, “ঐতিহ্যবাহী এই উৎসবটি যেন যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে, সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়, সে জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। জেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশের সহযোগিতায় এবারও মহোৎসব সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে।”
উল্লেখ্য, হিংসা ও মানবপ্রেমের মহান সাধক নরোত্তম দাস ঠাকুর ১৫৩১ খ্রিস্টাব্দে গোপালপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৬১১ খ্রিস্টাব্দে খেতুরধামে মৃত্যুবরণ করেন। ধনী পরিবারের সন্তান হলেও তিনি বিলাসবহুল জীবন পরিহার করে ছোটবেলা থেকেই ধর্মপরায়ণ হয়ে উঠেন। সমঅধিকার ও মানবসেবার মাধ্যমে তিনি সনাতন বৈষ্ণব ধর্মের প্রচারে অসাধারণ ভূমিকা রেখেছেন। তার অন্যতম অবদান হলো বৈষ্ণব সমাজে পদাবলি কীর্তন বা লীলা রসকীর্তন প্রবর্তন। নরোত্তম দাস ঠাকুরের পদাবলি কীর্তন বাংলা সংগীত ও সাহিত্য ইতিহাসে আজও এক অনন্য সম্পদ হিসেবে বিবেচিত।
একুশে সংবাদ/এ.জে