মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার কলমা ইউনিয়ন ভৌগোলিকভাবে সমৃদ্ধ হলেও একটি সেতুর অভাবে আজও উন্নয়ন ও মৌলিক সেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে এখানকার মানুষ। স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, ব্যবসা-বাণিজ্য ও প্রশাসনিক কার্যক্রম—সব ক্ষেত্রেই ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে ইউনিয়নবাসীকে।
জানা গেছে, ডহরি-তালতলা খালের ওপর সেতু না থাকায় কলমা ইউনিয়ন লৌহজং উপজেলার মূল সড়ক যোগাযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে। ফলে উপজেলা পরিষদ, থানা, হাসপাতালসহ বিভিন্ন প্রশাসনিক সেবা নিতে কলমা ইউনিয়নের বাসিন্দাদের পার্শ্ববর্তী টঙ্গীবাড়ি উপজেলার সড়ক ব্যবহার করতে হয়। এতে প্রায় ৮ থেকে ১০ কিলোমিটার বাড়তি পথ ঘুরে যেতে হয়, যার ফলে সময় ও খরচ উভয়ই বেড়ে যায়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ঝুঁকিপূর্ণ খেয়া নৌকাই এখন একমাত্র পারাপারের মাধ্যম। শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, রোগীসহ সাধারণ মানুষ প্রতিদিনই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন এই নৌপথে। বর্ষাকালে খালের স্রোত বেড়ে গেলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে প্রবল। আবার ঝড়-তুফানের সময় নৌকা চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে শিক্ষার্থী ও চাকরিজীবীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েন।
এ ছাড়া টঙ্গীবাড়ি উপজেলা ঘুরে যে বিকল্প সড়কটি ব্যবহার করা হয়, সেটিও সরু ও জরাজীর্ণ। বড় যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হওয়ায় ব্যবসায়ীরা মালামাল পরিবহনে নিয়মিত ঝামেলায় পড়েন।
শরীফাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আতিকুর রহিম বলেন, “ডহরি এলাকায় সেতু না থাকায় কলমা ইউনিয়ন অন্যান্য ইউনিয়নের তুলনায় পুরোপুরি পিছিয়ে পড়েছে। একটি সেতু হলে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা অনেকটা সহজলভ্য হবে।”
বড়মোকাম বাজারের ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান জানান, “খেয়া নৌকা রাত ১০টার পর বন্ধ হয়ে গেলে বাড়ি ফিরতে হলে আমাদের ৮-১০ কিলোমিটার ঘুরে যেতে হয়। এতে সময়, খরচ ও জানমালের ঝুঁকি—সবই বাড়ে।”
লৌহজং উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব হাবিবুর রহমান অপু চাকলাদার বলেন, “ডহরীতে একটি সেতু হলে শুধু কলমাই নয়, আশপাশের ইউনিয়নের মানুষও উপকৃত হবে। পদ্মা নদীর তীর ধরে সড়ক তৈরি হলে মাওয়া পর্যন্ত সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন সম্ভব হবে, যা পর্যটনের নতুন দুয়ার খুলে দেবে।”
স্থানীয়দের দাবি, উপজেলার অন্যান্য নয়টি ইউনিয়ন উন্নয়নের সুফল পেলেও কলমা ইউনিয়ন পিছিয়ে আছে শুধু একটি সেতুর অভাবে। তাঁদের প্রত্যাশা—ডহরি এলাকায় দ্রুত একটি সেতু নির্মিত হলে অন্তত ৫০ হাজার মানুষের যাতায়াত সহজ হবে, অর্থনীতি চাঙা হবে এবং ইউনিয়নটি উন্নয়নের মূলধারায় ফিরে আসবে।
একুশে সংবাদ/এ.জে