বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) কৃষিবিদ সমিতির ২০২৬-২৭ মেয়াদে দ্বি-বার্ষিক নির্বাচনে সভাপতি পদে কৃষিবিদ মোঃ হুমায়ুন কবির ও সাধারণ সম্পাদক পদে কৃষিবিদ ডঃ মোঃ আকিকুল ইসলাম আকিক বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। নির্বাচনে ২৯টি পদে দুইটি প্যানেলে মোট ৬২ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এই নির্বাচনে হুমায়ুন-আকিক প্যানেল সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ১৯টি পদে জয়লাভ করে বিএডিসিতে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে।
হুমায়ুন-আকিক প্যানেলটি বিএনপি সমর্থিত এবং মাহমুদুল আলম-শফিকুল প্যানেল বিএনপি-জামাত সমর্থিত সম্মিলিত প্যানেল হিসেবে পরিচিত ছিল। গত শনিবার ৪ অক্টোবর সারা দেশে ৫টি কেন্দ্রে (ঢাকা, ময়মনসিংহ, রাজশাহী, রংপুর ও যশোর) সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত নির্বাচনে বীজ ও উদ্যান এবং সার ব্যবস্থাপনা বিভাগে কর্মরত ৩০০ জন প্রথম শ্রেনীর কর্মকর্তাগণ (সহকারী পরিচালক, সিনিয়র সহকারী পরিচালক, উপ পরিচালক, যুগ্ম পরিচালক, ব্যবস্থাপক, অতিরিক্ত মহাব্যবস্থাপক ও মহাব্যবস্থাপক) ভোটার হিসেবে তাদের মূল্যবান ভোট প্রদান করেন। ২০০৯ সালের পর সরাসরি ভোটের মাধ্যমে এই নির্বাচনকে ঘিরে ভোটারদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দিপনা ও উৎসব মূখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। প্রার্থীগণ সারা বাংলাদেশে উক্ত ভোটারদের সাথে সরাসরি ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ব্যাপক প্রচার প্রচারণা চালান।
বিএডিসি কৃষিবিদ সমিতির নির্বাচন কমিশন ও বিএডিসি কর্তৃপক্ষ সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ন ও অংশগ্রহণ মূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান করেন।
বিএডিসি কৃষিবিদ সমিতির এ নির্বাচনে হুমায়ুন-আতিকুল প্যানেলে সভাপতি পদে কৃষিবিদ মোঃ হুমায়ুন কবির ২০২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বিতা কৃষিবিদ মোহাম্মদ মাহমুদুল আলম পেয়েছেন ৮৯ ভোট। সাধারণ সম্পাদক পদে কৃষিবিদ ডঃ মোঃ আকিকুল ইসলাম আকিক ১৯১ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি কৃষিবিদ ডঃ মোঃ শফিকুল ইসলাম পেয়েছেন ১০৩ ভোট।
হুমায়ুন-আতিকুল প্যানেলে নির্বাচিত অন্যান্যরা হলেন- যুগ্ম সম্পাদক কৃষিবিদ মীর এনামুল হক (মুন্না) ও কৃষিবিদ মোঃ ফারুক হোসেন, দপ্তর সম্পাদক কৃষিবিদ মোঃ নেয়ামুল নাসির, সাংগঠনিক সম্পাদক কৃষিবিদ কে এম আবুল কালাম (আজাদ), কোষাধ্যক্ষ কৃষিবিদ মোঃ আব্দুর রহমান চৌধুরী (দুলাল), সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পাদক কৃষিবিদ লায়লা আক্তার, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক কৃষিবিদ শাহীনুর ইসলাম (সুমন)। এছাড়াও সদস্য পদে কৃষিবিদ ডঃ মোঃ নাজমুল ইসলাম মানিক, কৃষিবিদ মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ, কৃষিবিদ এ কে এম কামরুজ্জামান (শাহীন), কৃষিবিদ মোঃ এনামুল হক, কৃষিবিদ এ এফ এম শফিকুল ইসলাম, কৃষিবিদ মোঃ শহীদুল ইসলাম (শিপন), কৃষিবিদ মোঃ হারুন অর রশীদ, কৃষিবিদ মোঃ আশরাফুল আলম, কৃষিবিদ মোঃ আওলাদ হাসান সিদ্দিকী ও কৃষিবিদ মো: মাফিউল জান্নাত (সিয়াম)।
মাহমুদ-শফিক প্যানেলের নির্বাচিতরা হলেন- জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি কৃষিবিদ ডঃ মোঃ মাহাবুবুর রহমান, সহ-সভাপতি কৃষিবিদ খালেদুম মনিরা, প্রচার সম্পাদক কৃষিবিদ মোঃ নাসির উদ্দিন, সমাজ কল্যান সম্পাদক কৃষিবিদ মো: হাফিজুর রহামান, কৃষি পরিবেশ ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক কৃষিবিদ ড. মো: সাইদুল ইসলাম এবং সদস্য পদে কৃষিবিদ ড. মো: ইসবাত, কৃষিবিদ মো: আল মামুন মেহেদী হাসান, কৃষিবিদ ড. মো: ইব্রাহীম খলিল, কৃষিবিদ ড. বশির আহম্মদ ও কৃষিবিদ ড. মো: আসিফ ইকবাল শাওন।
নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ ড. মোহাম্মদ আকিকুল ইসলাম আকিক প্রতিবেদককে জানান যে, ১৯৬১ সালে বিএডিসি প্রতিষ্ঠিত হয়ে কৃষকদের মাঝে মানসম্পন্ন বীজ, সার ও সেচ সুবিধাদি প্রদানের মাধ্যমে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে বিএডিসিতে কর্মরত কৃষিবিদগণ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। ১৯৯৯ সালে সরকারি গেজেটের মাধ্যমে জনবল সংখ্যা ৬৮০০ নির্ধারিত হয়। কিন্তু ক্রমবর্ধমান হারে বীজ, সার ও সেচ সুবিধা সেবার কলেবর বৃদ্ধির বিপরীতে বিগত সরকারের বিমাতা ও বৈষম্য মূলক আচরনের ফলে বিএডিসি’র জনবল বৃদ্ধি তথা এ সংস্থাকে সময়োপযোগী পুর্নগঠন করে নি এবং নানাবিধ জটিলতায় পদোন্নতি ও নতুন নিয়োগ সম্পূর্ন রুপে বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে বিএডিসি’র কর্মরত জনবল সংখ্যা মাত্র ২৭১০ জন। এই সীমিত জনবল নিয়ে কৃষকদের উল্লেখিত সুবিধাদি প্রদান একদিকে যেমন কঠিন হয়ে যাচ্ছে অন্যদিকে পদোন্নতি না হওয়ায় একজন কর্মকর্তা দুই-তিনটি দপ্তরের দায়িত্বে ও অন্যান্য জনবল সংকটে অতিরিক্ত কাজের চাপে কর্মকর্তা/কর্মচারীগণ মানসিক চাপে ও সময় সংকটে পারিবারিক চাপে তথা অস্থিরতা এবং হতাশায় নিমজ্জিত হচ্ছেন। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য দ্রুততার সহিত পদোন্নতি ও জনবল নিয়োগের সকল বাধা দূরীকরণ একান্ত জরুরী হয়ে পড়েছে।
নির্বাচিত সভাপতি কৃষিবিদ মোঃ হুমায়ুন কবির জানান যে, সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয় ৫২১৮ জন জনবলের ৩টি পৃথক প্রজ্ঞাপন জারী হলেও স্কেল ভেটিং সম্পন্ন না হওয়ায় পদোন্নতি ও জনবল নিয়োগ করা সম্ভব হচ্ছে না। এ বিষয়ে বিএডিসি কর্তৃপক্ষ ও মন্ত্রণালয়ের সাথে বারবার যোগাযোগ করা হলেও দৃশ্যমান কোন সমাধান এ পর্যন্ত হয়নি। ফলে কৃষির সেবায় নিয়োজিত কৃষি মন্ত্রনালয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিএডিসি আজ এক গভীর সংকটে নিমজ্জিত। দ্রুত এর সমাধান না করা হলে সংস্থার কার্যক্রম ও দেশের কৃষি তথা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে। নির্বাচিত অন্যান্য প্রতিনিধিগণও সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে দ্রুত বিএডিসিকে পুর্নগঠনের আহব্বান জানান।
একুশে সংবাদ/এ.জে