গাজীপুরের শ্রীপুরে কাওরাইদ ইউনিয়নের কাওরাইদ-জৈনাবাজার সড়কের মাটিকাটা নদীর ওপর নির্মিত (চৌধুরী ঘাট) এলাকায় বেইলি সেতুর স্টিলের পাত ধসে পড়েছে। সেতুটির ওপর দিয়ে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে ওই ইউনিয়নসহ আশপাশের ১০ গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ দুর্ভোগে পড়েছে।
খবর পেয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) শ্রীপুর উপজেলা কার্যালয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী নাসরি উদ্দিনসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা সকালেই ওই সেতু পরিদর্শন করেন। শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) রাতে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় বাসিন্দাসহ এলাকাবাসী জানান, কমপক্ষে ৩০ বছর আগে ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়েছিল। এ সড়ক দিয়ে শ্রীপুর উপজেলার জৈনাবাজার, কাওরাইদ, বরমী, বলদীঘাট, গোলাঘাট, পাশের ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার পাইথল, ভালুকা উপজেলার উড়াহাটি এলাকার মানুষ শ্রীপুর সদর এবং জৈনাবাজার হয়ে ময়মনসিংহ শহরে যাতায়াত করে। প্রতিদিন ওই সড়কে ট্রাক, প্রাইভেট, মাইক্রোবাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ হাজার খানেক যান চলাচল করে। ওই সেতুটি ভেঙ্গে পড়ায় ওইসব এলাকার কয়েক হাজার মানুষ দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ প্রতিদিন সেতুটি দিয়ে চলাচল করেন। সেতুটি দিয়ে ১০ চাকার ট্রাকও চলাচল করতে দেখা গেছে। এর আগেও এই ব্রিজ অনেকবার ভেঙ্গেছে। এবার সেতুর স্টিলের পাত ধসে পড়েছে। দুবার গাড়ি নদীতে পড়েছে, তবে কি কারণে উপজেলা প্রশাসন স্থায়ী ব্রিজ নির্মাণে কাজ করছে না তা জানা যায়নি।
গফরগাঁও উপজেলার পাইথল থেকে পরিবার নিয়ে সিএনজিচালিত যানযোগে শ্রীপুরের জৈনাবাজার আসছিলেন জাহাঙ্গীর আলম। পথে বেলা ১১ টার দিকে সড়কের চৌধুরী ঘাট এলাকায় বেইলি সেতুতে আটকা পড়েন। তিনি বলেন, “কখন সেতু মেরামত হবে বলতে পারছেন না কেউ। পরিবার নিয়ে গরমের মধ্যে খুব ভোগান্তিতে পড়তে হলো।”
ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার উড়াহাটি এলাকা থেকে পণ্যবাহী ট্রাক নিয়ে আসন চালক জব্বার মিয়া বলেন, “এখানে এসে দেখি সেতু ভাঙা। বড় ট্রাক নিয়ে বিকল্প সড়কেও যেতে পারছি না। শ্রীপুরের এমসি বাজার এলাকার পণ্য মালিক বারবার কল করছে। দ্রæত পৌঁছাতে না পারলে বড় ধরনের লোকসানে পড়তে হবে।”
কাওরাইদ কালী নারায়ণ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাজমুল হাসান বলেন, “ব্রিজটি জরাজীর্ণ। শিগগিরই ওই ব্রিজটি নির্মাণ করা না হলে যেকোনো মুহূর্তে প্রাণহানির ঘটনা ঘটতে পারে।”
কাওরাইদ এলাকার বাসিন্দা রমা রানী রায় বলেন, “আমি প্রতিদিন ছেলেকে নিয়ে জৈনাবাজার এলাকার ব্রাইট স্কলার স্কুলে আসা-যাওয়া করি। সেতুটি দিয়ে কয়েকটি গ্রামের মানুষ চলাচল করেন। চার-পাঁচটি কারখানার গাড়ি এখান দিয়ে চলাচল করে। সেতু দিয়ে চলাচল বন্ধ হওয়ায় সবাই দুর্ভোগে পড়েছেন।”
কাওরাইদ ইউনিয়ন বিএনপির নেতা আফজাল হাসেন মন্ডল বলেন, “মাটিকাটা নদীর ওপর নির্মিত বেইলি সেতুর স্টিলের পাত ধসে পড়ায় পণ্যবাহী যানবাহন ও যাত্রীদেরকে বিকল্প পথ হিসেবে যাত্রী বলদীঘাট-ধামলই, কাওরাইদ-মাইজপাড়া অথবা কাওরাইদ-দেদুয়ার হয়ে প্রায় চার কিলোমিটার সড়ক ঘুরে চলাচল করতে হবে।”
শ্রীপুর উপজেলা প্রকৌশলী উপ-সহকারী প্রকৌশলী নাসরি উদ্দিন বলেন, “এরই মধ্যে তিনিসহ অন্য কর্মকর্তারা সেতুটি পরিদর্শন করেছেন। সেতুর স্টিলের পাত ধসে পড়ায় যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। লোহার কাঠামোর বেইলি সেতুটি দৈর্ঘ্য প্রায় ১৮০ ফুট এবং প্রস্থ ৮ ফুট। কাওরাইদ-জৈনাবাজার সড়কের মাটিকাটা নদীর ওপর নির্মিত সেতুর ওপর দিয়ে রাতে অতিরিক্ত ওজনের মালবাহী যানবাহন পার হচ্ছিল। একপর্যায়ে অতিরিক্ত চাপে সেতুর একটি স্টিলের পাত ধসে পড়ে। ঝুঁকি নিয়ে কেউ যাতে চলাচল না করেন, সে জন্য লাল পতাকা টানানো হয়েছে। এদিকে, সেতুর পাটাতন ভেঙ্গে পড়ায় এ সড়ক দিয়ে চলাচলকারী যাত্রী ও যানবাহন চালকদের বিকল্প পথে চলাচল করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।”
শ্রীপুর উপজেলা প্রকৌশলী তাওহীদ আহমেদ বলেন, “সেতুটি স্টিল বিট দিয়ে তৈরি। এই সেতুর উপাদানগুলো (ম্যাটারিয়ালস) সহজে পাওয়া যায় না। যদি আমরা গাজীপুরে উপাদানগুলো পাই তাহলে আনুমানিক তিন থেকে চারদিন সময় লাগতে পারে। আর যদি আমাদের গাজীপুর জেলা অফিসে না থাকে, তাহলে কোন জেলায় আছে খুঁজে এনে তারপর কাজ করতে হবে। সেতুটি দ্রæত সংস্কারের জন্য প্রতিবেদন তৈরি করে আগামীকাল রবিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে।”
শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সজীব আহমেদ বলেন, “দ্রæত মেরামত করে চলাচলের উপযোগী করতে উপজেলা প্রকৌশলীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শুধু মোটরসাইকেল ছাড়া অন্য কোন যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। নদীতে নতুন ব্রিজ নির্মাণের সব কার্যক্রম সম্পন্ন থাকলেও জমি অধিগ্রহণ জটিলতায় নির্মাণকাজ আটকে আছে।”
একুশে সংবাদ/এ.জে