চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপনির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর প্রচারণায় হামলার ঘটনায় সাড়ে ৫ বছর পর মামলা দায়ের করেছেন চিহ্নিত এক মাদক ব্যবসায়ী। মামলায় আওয়ামী লীগের ৬৩ জন নেতাকর্মীর সঙ্গে এক সাংবাদিককেও আসামি করা হয়েছে। এই মাদক ব্যবসায়ী নিজেকে বোয়ালখালী যুবদলকর্মী পরিচয় দিলেও স্থানীয় বিএনপি ও উপজেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দ তা অস্বীকার করেছেন।
তবে স্থানীয়রা বলেন, মামলায় উল্লেখিত সময়ে কোনো হামলার ঘটনা ঘটেনি।
১৪ সেপ্টেম্বর মামলাটি দায়ের করেছেন মোঃ তৌহিদুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি। কিন্তু তিনি নিজেই মাদক মামলার আসামি এবং অতীতে জেলও ভোগ করেছেন। তাকে মাদকসহ গ্রেপ্তারের বেশ কয়েকটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
মামলায় বলা হয়েছে, ২০২০ সালের ৯ জানুয়ারি সকাল আনুমানিক ১১টার সময় মনছুর আউলিয়া মাজার গেট এলাকায় চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপনির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর প্রচারণার সময় আসামিরা ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে গুলি চালায়। লোহার রড়, হকিস্টিক, এসএস পাইপ, লাঠিসোটা দিয়ে হামলা চালিয়ে মারধর করা হয়। এসময় ২টি মোটরসাইকেলও জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। আহতরা উপজেলা হাসপাতালে গেলে সেখানে ঢুকে মারধর করা হয়।
স্থানীয়রা জানান, বোয়ালখালীতে ২০২০ সালের ৯ জানুয়ারি এমন কোনো হামলার ঘটনা ঘটেনি। তবে ৩ জানুয়ারি বিএনপির প্রচারণার সময় হামলা সংক্রান্ত খবর বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছিল।
এজাহারে উল্লেখিত তারিখে হামলার ঘটনায় স্থানীয় সাংবাদিক সৈয়দ মুহাম্মদ নজরুল ইসলামসহ ৬৩ জনকে আসামি করা হয়েছে। এছাড়া আরও ১০০–১৫০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
স্থানীয়রা বলেন, তৌহিদুল ইসলাম চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। মাদক বিক্রির দায়ে তাকে এলাকাবাসী পুলিশে সোপর্দ করেছে এবং তার বিরুদ্ধে মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা রয়েছে। চরণদ্বীপ ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি রহমত আলী চৌধুরী জানিয়েছেন, তৌহিদুল ইসলাম বিএনপি, যুবদল বা ছাত্রদলের কোনো কর্মী নয়।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবদল সাধারণ সম্পাদক মো. আজগর বলেন, “আমি তৌহিদুল ইসলামকে চিনি না। তিনি আমাদের যুবদলের কেউ নন।” বোয়ালখালী উপজেলা যুবদল আহ্বায়ক মো. ইকবালও জানিয়েছেন, “জ্বীবনের নাম ব্যবহার করে কেউ মামলা দায়ের করেছে, তিনি আমাদের কেউ নন।”
বোয়ালখালী পৌরসভার সাবেক মেয়র হাজি আবু কালাম বলেন, ২০২০ সালের ৩ জানুয়ারিতে নির্বাচনী প্রচারণার সময় কিছু সংঘর্ষ হয়েছিল, তবে এখন কে মামলা করলো তা বোঝা যাচ্ছে না।
মামলার আসামি সাংবাদিক সৈয়দ মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম জানান, “সাড়ে ৫ বছর পর আমার নাম দেখে হতভম্ব হয়েছি। ৯ জানুয়ারির হামলার ঘটনা ঘটেনি। ৩ জানুয়ারির খবর সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছিল, কিন্তু আমি সেখান উপস্থিত ছিলাম না।”
বোয়ালখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) লুৎফর রহমান বলেন, “মামলা দায়ের হয়েছে। ৫ বছর পর হলেও তদন্তের ভিত্তিতে ঘটনা সম্পর্কে সঠিক তথ্য আদালতে উপস্থাপন করা হবে। সাংবাদিককে আসামি করা হলেও তার বিরুদ্ধে আগে কোনো অভিযোগ ছিল না।”
বাদি মো. তৌহিদুল ইসলামকে যোগাযোগ করলে তিনি নিজেকে তৌহিদুল ইসলাম নন বলে জানান এবং পরবর্তীতে কল রিসিভ করেননি।
একুশে সংবাদ/চ.প্র/এ.জে