একসময় যেখানে শিক্ষার্থীদের কোলাহল, দৌড়ঝাঁপ আর জাতীয় সংগীতের সুর ভেসে আসত, সেই মাঠ এখন হাঁসের জলকেলির আস্তানা। জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলার ৮৬ নং চরপাকেরদহ ঘোনাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একমাত্র খেলার মাঠ বছরের অর্ধেক সময় পানিতে তলিয়ে থাকে। ফলে খেলাধুলা, সমাবেশ এবং সহশিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে, শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক বেড়ে ওঠা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
বিদ্যালয়ের আশপাশের জমি এবং বালিজুড়ী থেকে মাহমুদপুর প্রধান সড়ক তুলনামূলকভাবে উঁচু হওয়ায় মাঠে পানি দীর্ঘ সময় ধরে জমে থাকে। সঠিক পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় বর্ষা এলেই জলাবদ্ধতা স্থায়ী রূপ নেয়। মাঠজুড়ে হাঁসের দল ভেসে বেড়ায়, আর শিক্ষার্থীরা জানালা দিয়ে সেই দৃশ্য দেখেই ক্লাসের সময় কাটায়।
অভিভাবকরা জানান, এমন পরিস্থিতিতে স্কুলে খেলাধুলার কথা কল্পনাই করা যায় না। অন্য স্কুলের বাচ্চারা যেখানে খেলাধুলায় মেতে থাকে, সেখানে তাদের সন্তানরা সারাদিন ক্লাসরুমে বন্দি থাকতে বাধ্য হয়।
বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী সিফাত বলেন, “মাঠে পানি থাকায় আমরা খেলতে পারি না।” ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী দিনা আক্তার জানান, “ছয় মাস মাঠে পানি থাকে, বাকি সময়ও কাদায় ভরা থাকে। আমরা খেলতে পারি না, সমাবেশ করতে পারি না, হাঁটতেও কষ্ট হয়। এতে পড়াশোনাও বিরক্তিকর হয়ে ওঠে।”
জমে থাকা পানি মশার প্রজননস্থলে পরিণত হওয়ায় শিক্ষার্থীরা ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু ও অন্যান্য পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। শিক্ষক ও অভিভাবকরা অভিযোগ করেছেন, মাঠে পানি জমে থাকায় পড়াশোনার পরিবেশও বিঘ্নিত হচ্ছে। অনেক সময় শিক্ষার্থীরা ক্লাসে মনোযোগ দিতে পারে না, কারণ মশার কামড় ও দুর্গন্ধে ক্লাসরুমও অসহনীয় হয়ে ওঠে।
৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী জেবিলা জানায়, “ক্লাস করতে করতে হঠাৎ মশার কামড়ে বসে থাকা দায় হয়ে যায়। এতে পড়াশোনায় মন বসে না।”
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. হাদিউজ্জামান বলেন, “আমাদের স্কুলে প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। কিন্তু মাঠের এই করুণ অবস্থা তাদের স্বাভাবিক চলাফেরা পর্যন্ত ব্যাহত করছে। শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য মাঠ অপরিহার্য।” তিনি আরও জানান, গত কয়েক বছর ধরে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, শারীরিক শিক্ষা ক্লাস, জাতীয় দিবস উদযাপনসহ প্রায় সব অনুষ্ঠানই বন্ধ রয়েছে।
১নং চরপাকেরদহ ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক ও উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা তৌফিকুল ইসলাম খালেক বলেন, “লিখিত আবেদন দিলে সমস্যা সমাধানে চেষ্টা করা হবে।” উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নুরুল আমিন বলেন, “বিদ্যালয়টির বিষয়টি জেনেছি। আগে সরকারি প্রকল্পের মাধ্যমে এসব কাজ করা হতো। বর্তমানে বরাদ্দ নেই। ইউএনও স্যারের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করব।”
একুশে সংবাদ/জা.প্র/এ.জে