নদীর তীব্র স্রোতে ভাঙছে চালিতাবুনিয়া ইউনিয়ন। অন্য দিকে ছোট হতে চলেছে এই ইউনিয়নের আয়তন। ভিটাবাড়ি হারিয়ে দিশেহারা হয়ে মাথা গুজবার ঠাঁই খুঁজছেন বেড়িবাঁধে ও আশ্রয়ন কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া ইউনিয়নবাসী। এমন ঘটনা ঘটিয়েছে সর্বনাশা আগুনমুখা নদী।
পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার চালিতাবুনিয়া ইউনিয়ন চারপাশে নদী বেষ্টিত। ইউনিয়নটিতে প্রায় ২০ হাজার মানুষের বসবাস। প্রতিনিয়ত নদী ভাঙনের সঙ্গে যুদ্ধ করেও পরাজিত হচ্ছে এখানকার মানুষ। মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু রক্ষা করতে পারছে না অনেকে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, চালিতাবুনিয়া, উত্তর চালিতাবুনিয়া, মধ্য চালিতাবুনিয়া, বিবির হাওলা ও গোলবুনিয়া সহ অনেকগুলো গ্রাম নদী ভাঙনের কবলে পড়েছে।
ভিটেমাটি হারিয়ে উচ্চবিত্তরা হয়েছেন মধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্তরা হয়েছেন দিনমজুর আর দিনমজুররা হয়েছেন নিঃস্ব। এদের মধ্যে কেউ কেউ আশ্রয় নিয়েছেন লতার চরে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধের ওপর। থাকার জায়গা না থাকায় অনেকে হয়েছেন বাস্তুহারা।
ভাঙন কবলিত এই জনপদের বাসিন্দাদের জানমালের নিরাপত্তা এবং নদী ভাঙন থেকে সুরক্ষায় দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগের নজির চোখে পড়েনি। এতে ফসলি জমি এবং ভিটেমাটি হারিয়ে কেউ হয়েছে ভূমিহীন, কেউ হয়েছে নিঃস্ব। শুধু নদী ভাঙন নয়, নানা সময়ে হওয়া প্রাকৃতিক দুর্যোগে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ থাকে এই ইউনিয়নের নারী, শিশু ও বৃদ্ধরা। অবহেলিত এসব মানুষদের রক্ষায় অতি শীঘ্রই সংশ্লিষ্টদের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া দরকার বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সাল থেকে চালিতাবুনিয়ায় নদী ভাঙন শুরু হয়। এ পর্যন্ত ইউনিয়নটির মূল ভূখণ্ডের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ বিলীন হয়েছে।
আবহাওয়া খারাপ হলে জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যায় চালিতাবুনিয়া ইউনিয়নের অনেক গ্রাম। অনেকের বাড়িঘর তলিয়ে যায়, থাকে না রান্নার ব্যবস্থা। তখন অনেকের না খেয়ে থাকতে হয়।
ইউনিয়নের বাসিন্দারা বলেন, এখনই যদি নদী ভাঙনের দীর্ঘমেয়াদী বা স্থায়ী পরিকল্পনা গ্রহণ না করা হয়, তাহলে এই এলাকার মানুষের কষ্টের সীমা থাকবে না এবং চালিতাবুনিয়া ইউনিয়নকে রক্ষা করা সম্ভব হবে না।
প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় আশ্রয় নেয়ার জন্য যে একটি সাইক্লোন শেল্টার ছিল সেটিও বিলীন হয়ে গেছে। টেকসই বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ না থাকায় দুর্যোগের সময় নির্ঘুম রাত কাটাতে হয় জনসাধারণের। একদিকে বেড়িবাঁধ তৈরি হয়, অন্যদিকে নদীর স্রোতে তা ভেঙে যায়।
এখনই নদী ভাঙন রোধের জন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা প্রয়োজন। তা না হলে রাঙ্গাবালী উপজেলা থেকে চালিতাবুনিয়া ইউনিয়নের মানচিত্র মুছে যাবে। তাই যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করা হচ্ছে যাতে এই ইউনিয়নে নদী ভাঙন রোধের ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
চালিতাবুনিয়ার ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান মোঃ বিপ্লব হাওলাদার বলেন, এ বিষয়ে আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ডে লিখিতভাবে জানিয়েছি। তারা আমাদের আশ্বস্ততা দিয়ে আসছে, এবং তৎকালীন ত্রাণ ও দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী মোঃ মহিবুর রহমান মহিবকে অবহিত করা হয়েছে। কিন্তু তিনি নদী ভাঙন কবলিত এলাকার মানুষের পাশে দাঁড়াননি। এভাবে নদী ভাঙতে থাকলে অচিরেই রাঙ্গাবালী উপজেলার মানচিত্র থেকে মুছে যাবে চালিতাবুনিয়া ইউনিয়ন। আমি চালিতাবুনিয়া ইউনিয়নের জনগণের পক্ষ থেকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অনুরোধ করব, নদী ভাঙন রোধে তারা দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করে ইউনিয়নবাসীকে রক্ষা করেন।
এ বিষয়ে কলাপাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা মোঃ বাদশা আলম জানান, "চালিতাবুনিয়া ইউনিয়নের নদী ভাঙন রোধের প্রকল্পের কাজটি অনুমোদনের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলে কাজ শুরু করা হবে।"
একুশে সংবাদ/প.প্র/এ.জে