সিলেট-আখাউড়া রেলপথের মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার বালিগাঁও এলাকায় ৫৩ বছর ধরে ৫টি গ্রামের মানুষজন যাতায়াতের জন্য ব্যবহৃত সড়কটি দুই পাশে লোহার স্লিপার দিয়ে হঠাৎ বন্ধ করে দিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে বিভাগ। এতে করে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন হাজার গ্রামবাসী। এই সড়ক ব্যবহার করেই মানুষজন উপজেলা সদরে নিয়মিত আসা-যাওয়া করতেন। সড়কটি বন্ধ হওয়ায় তারা বিপাকে পড়েছেন।
সড়কটি পুনঃউন্মুক্ত করার দাবিতে শতাধিক গ্রামবাসী শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) দুপুর ২টায় ভানুগাছ রেলস্টেশন সংলগ্ন বালিগাঁও এলাকায় মানববন্ধন করেছেন।
স্থানীয়রা জানান, স্বাধীনতার পর থেকেই কমলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের বাঘমারা, রাজটিলা, বালিগাঁওসহ ৫টি গ্রামের মানুষ সিলেট-আখাউড়া রেলপথ ক্রসিং-এর সড়কটি ব্যবহার করে আসছেন। শ্রীমঙ্গল থেকে কমলগঞ্জ প্রধান সড়কের সঙ্গে রাস্তা সংযোগ রয়েছে, তাই উপজেলা সদরে সহজেই যাতায়াত করা যায় এই সড়ক দিয়ে।
রেলওয়ে বিভাগের কাছে স্থানীয়রা দীর্ঘদিন ধরে এখানে গেইটম্যান রাখার দাবি জানিয়ে আসছেন। রেলক্রসিং-এর পাশেই গরমশাহ মাজার ও একটি মসজিদ রয়েছে। সরকারীভাবে রাস্তাটি পাকাকরণ করা হয়েছে। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত শত শত মানুষ সিএনজি, মোটরসাইকেল ও টমটমে আসা-যাওয়া করেন।
কিন্তু হঠাৎ গত তিন দিন আগে গ্রামবাসীরা দেখেন রেলপথের দুই পাশে ৫ থেকে ১০টি লোহার স্লিপারের খুঁটি স্থাপন করে সড়কটি বন্ধ রাখা হয়েছে। সড়কটি বন্ধ হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন কয়েক হাজার গ্রামবাসী। রেলপথের পূর্ব পাশে গ্রামের কবরস্থান থাকায় লাশ বহন করা কঠিন হয়ে পড়েছে। বর্তমানে গ্রামের মানুষরা বিকল্প পথে প্রায় ৫ কিলোমিটার ঘুরে সিএনজি বা টমটমে ভানুগাছসহ উপজেলা সদরে যাতায়াত করছেন।
স্থানীয়রা ভানুগাছ রেলওয়ে স্টেশন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা বলেছেন, “উচ্চ মহলে যোগাযোগ করতে হবে।” গত তিন দিন ধরে সড়কটি বন্ধ রয়েছে। স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীরা পায়ে হেঁটেই আসা-যাওয়া করছেন। চরম দুর্ভোগে পড়া গ্রামবাসীরা সড়কটি খুলে দেওয়ার দাবিতে শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) জুম্মার নামাজের পর শতাধিক গ্রামবাসী মানববন্ধন করেছেন। মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয় বালিগাঁও-বাঘমারা-রাজটিলা গ্রামবাসীর ব্যানারে, বালিগাঁও শাহী ইদগাহ সংলগ্ন এলাকায়।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, “এ সড়কটি বহু বছর ধরে ব্যবহার করছেন স্থানীয়রা। সরকারও রাস্তাটি পাকাকরণ করেছে। এখানে রেলক্রসিং থাকলেও কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। আমরা বহুবার রেলওয়ে বিভাগকে বলেছি, এখানে গেইটম্যান দেওয়া হোক। হঠাৎ করে কেন এই রাস্তাটি বন্ধ করা হলো, তা আমরা জানি না। অবিলম্বে রাস্তাটি খুলে দেওয়ার জন্য স্থানীয় প্রশাসন ও রেলওয়ের কর্তৃপক্ষের কাছে আহবান জানাচ্ছি।”
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন: ভানুগাছ পৌর বাজার বণিক কল্যাণ সমিতির সহ-সভাপতি কাজী মামুনুর রশীদ, কমলগঞ্জ প্রেসক্লাবের আহ্বায়ক এম এ ওয়াহিদ রুলু, বাঘমারা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুস শহীদ, মাওলানা আনোয়ার হোসেন, সমাজসেবক নোমান আহমদ প্রমুখ।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রকৌশল বিভাগের প্রকৌশলী (কার্য) কুলাউড়ার মোঃ জাকির হোসেন খান বলেন, “সরকারের সিদ্ধান্ত মোতাবেক, টেন্ডারের মাধ্যমে যাত্রীদের স্বার্থে মাইজগাঁও হতে আখাউড়া পর্যন্ত অবৈধ রেলক্রসিং বন্ধ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।”
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাখন চন্দ্র সূত্রধর বলেন, “স্থানীয়রা আমাকে বিষয়টি জানিয়েছেন। আমি রেল বিভাগের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলবো।”
একুশে সংবাদ/মৌ.প্র/এ.জে