চট্টগ্রামের কালুরঘাট থেকে শাহ আমানত সেতু (নতুন ব্রিজ) পর্যন্ত নির্মাণাধীন ৯ কিলোমিটার সিটি আউটার রিং রোড চালু হলে কমবে যানজট, বাড়বে অর্থনৈতিক কার্যক্রম ও শিল্পায়ন। পাশাপাশি এ সড়ক নগর রক্ষার বাঁধ হিসেবেও কাজ করবে। কর্ণফুলী নদীর পাশ ঘেঁষে নির্মাণাধীন এই সড়ক ইতোমধ্যেই মোহরা এলাকায় ভিন্ন চিত্র তৈরি করেছে।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) বাস্তবায়নাধীন এই প্রকল্পের ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। বাকি অংশ ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে শেষ করে পুরোপুরি চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে। সিডিএ জানিয়েছে, প্রকল্পটি চালু হলে চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ, বক্সিরহাট, বাকলিয়া, চান্দগাঁও ও কালুরঘাট শিল্পাঞ্চল বন্যা ও জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষা পাবে। একই সঙ্গে ঢাকা-চট্টগ্রাম এবং চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ তৈরি হবে। এর ফলে যান চলাচলে গতি আসবে, পিছিয়ে থাকা এলাকার জীবনমান উন্নত হবে এবং পর্যটন ও আবাসন খাতে নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে।
প্রকল্পের ফলে বিশেষভাবে উপকৃত হবে বাকলিয়া, চান্দগাঁও ও মোহরা এলাকা। কালুরঘাট থেকে চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ পর্যন্ত যাতায়াত সহজ হবে, উত্তর-দক্ষিণ যোগাযোগ হবে দ্রুততর। কর্ণফুলী তীরবর্তী অবকাঠামোহীন এলাকাগুলো উন্নয়নের ছোঁয়া পাবে এবং পর্যটকদের জন্য নতুন আকর্ষণীয় স্পটে পরিণত হবে। ইতোমধ্যেই সেখানে মানুষের ভিড় বাড়ছে, তবে নিরাপত্তার কারণে সন্ধ্যার আগে সবাইকে ফিরতে হচ্ছে।
‘কালুরঘাট-চাক্তাই সড়ক ও বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প’ নামের এই প্রকল্পের ৯ কিলোমিটারের মধ্যে মাত্র এক কিলোমিটার কাজ বাকি রয়েছে। ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় এ অংশের কাজ দীর্ঘদিন আটকে ছিল। একাধিকবার মেয়াদ বাড়িয়েও ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করা সম্ভব হচ্ছে না। প্রকল্প পরিচালক রাজীব দাশ জানিয়েছেন, আগামী বছরের জুনেই কাজ শেষ হবে। তখন মাত্র ১০ মিনিটেই কালুরঘাট থেকে চাক্তাই যাতায়াত সম্ভব হবে।
২০১৮ সালের অক্টোবরে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। শুরুতে ব্যয় ধরা হয়েছিল ২ হাজার ৩১০ কোটি টাকা, যা পরে বেড়ে দাঁড়ায় ২ হাজার ৭৪৬ কোটি টাকা। জমি অধিগ্রহণ, মামলা-মোকদ্দমা, অর্থ সংকট ও কোভিড পরিস্থিতির কারণে কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ করা যায়নি। বর্তমানে শাহ আমানত সেতু থেকে কালুরঘাট সেতু পর্যন্ত কর্ণফুলীর শহরাংশে চার লেনের সড়ক ও বাঁধ নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। চাক্তাই, রাজাখালী, বলিরহাট, সাবখাল-২, ইস্পাহানি খাল, কল্পলোক এলাকা হয়ে কালুরঘাট পর্যন্ত সড়কও প্রায় সম্পন্ন।
সিডিএ চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. নুরুল করিম বলেন, “প্রকল্পটি চালু হলে কালুরঘাট থেকে শাহ আমানত সেতু এলাকার দৃশ্যই বদলে যাবে। দ্রুত যাতায়াতের পাশাপাশি যানজটও কমবে। নিয়মিত পর্যটকরা আসছেন বলে গাছ লাগানো, বেঞ্চ বসানোসহ বিনোদনের ব্যবস্থাও বাড়ানো হচ্ছে।”
২০১৭ সালের ২৫ এপ্রিল একনেকের অনুমোদন পাওয়া প্রকল্পটি ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। বর্তমানে এর ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৭৭৯ কোটি টাকায়। পাশাপাশি কর্ণফুলী নদীর তীরবর্তী এলাকায় প্রায় দেড়শ কোটি টাকা ব্যয়ে সাড়ে ৫ কিলোমিটারজুড়ে একটি পর্যটনকেন্দ্রও গড়ে তোলা হচ্ছে।
একুশে সংবাদ/চ.প্র/এ.জে