স্বপ্ন নিয়ে ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় ওমানে পাড়ি দিয়েছিলেন লক্ষ্মীপুরের যুবক মো. সুমন (৩৫)। কিন্তু ১২ বছর পর তিনি দেশে ফিরেছেন মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে। বুধবার (২৭ আগস্ট) বিকেল ৫টার দিকে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের অ্যাম্বুল্যান্সে করে তাকে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার রতনপুর গ্রামের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়।
জানা গেছে, মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) বিকেল ৩টা ২৫ মিনিটে ইন্ডিগো এয়ারলাইন্সের একটি বিমানে ওমান থেকে ফেরেন সুমন। তার কাছে কোনো পাসপোর্ট ছিল না। বিমানবন্দরে অসুস্থ অবস্থায় তাকে পাওয়া গেলে এভিয়েশন সিকিউরিটি ও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় ব্র্যাক মাইগ্রেশন ওয়েলফেয়ার সেন্টারে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসা ও তত্ত্বাবধান শেষে বুধবার সকাল ১১টায় বড় ভাই মো. মামুনের কাছে তাকে হস্তান্তর করা হয়। এ সময় ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের এসোসিয়েট ডিরেক্টর শরিফুল ইসলামসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
স্বজনদের খোঁজে ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম ফেসবুকে সুমনের ছবি ছড়িয়ে দিলে তার গ্রামের মানুষ তাকে চিনতে পারে। এরপর দ্রুত পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ হয়।
পরিবারের সদস্যরা জানান, দীর্ঘ প্রায় ১২ বছর পর সুমন দেশে ফিরেছেন। গত ৮ মাস ধরে তার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ ছিল না। বাড়ির লোকজন ওমান প্রবাসী আত্মীয়দের মাধ্যমে খোঁজ করেও কোনো খবর পাননি। তাকে দেখতে বাড়িতে জড়ো হয় স্বজনরা।
সুমনের বড় ভাই মামুন বলেন, “আমি গেলে আমাকে চিনেছে। তবে আমার আরেক ভাই মিজানকে চিনতে পারেনি। ধারণা করা হচ্ছে, সে ওমানে মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে।”
সুমনের মা নাজমুন নাহার বলেন, “ছেলে বাড়িতে ফিরেছে, এটাই শান্তি। ১২ বছর পর তাকে দেখেছি, এখন শুধু দোয়া চাই—সে যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারে।”
সুমনের বাবা হাফিজ উল্যাহ জানান, “প্রায় ১২ বছর আগে সুমন ওমানে যায়। প্রথমে একটি কোম্পানিতে চাকরি করলেও পরে নিজে টেইলার্স ও বোরকার দোকান চালাতো। ব্যবসা হারানোর পর থেকে সে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। গত ৮ মাস ধরে তার কোনো খোঁজ পাইনি। এখন যেভাবেই হোক সে দেশে ফিরেছে, সুস্থ হলে আসল সমস্যাটা বোঝা যাবে।”
ব্র্যাক চট্টগ্রাম রিজিওনের এমআরএসসি কো-অর্ডিনেটর মো. ইমাম উদ্দিন জানান, প্রায়ই মানসিক ভারসাম্যহীন প্রবাসীদের দেশে ফেরানো হয়। গত আট বছরে ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের মাধ্যমে ১৪৮ জনকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। শুধু ২০২৪ সালেই উদ্ধার করা হয়েছে ৪০ জনকে।
একুশে সংবাদ/ল.প্র/এ.জে