জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার বুকে আজ ভোরে নেমে আসে এক অন্যরকম অনুভূতির ছায়া। শ্রদ্ধা, বেদনা আর গর্বের মিশেলে আজকের দিনটি হয়ে ওঠে এক অনন্য আবেগঘন মুহূর্ত। ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ হওয়া রিতা আক্তারের স্মৃতিকে গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করতে আজ মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) সকাল ১০টায় কালাই উপজেলার পুনুট ইউনিয়নের তালখুর গ্রামে তাঁর কবরস্থানে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আয়োজিত এই কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন কালাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামীমা আক্তার জাহান, সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইফতেখার রহমান, কালাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদ হোসেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. নাহিদ নাজনীন ডেইজি, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার কাজী মনোয়ারুল হাসান, পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসানসহ আরও অনেকে।
শহীদ রিতার কবরের পাশে দাঁড়িয়ে তাঁদের চোখে-মুখে ফুটে উঠেছিল গভীর শোক আর শ্রদ্ধার মিশ্র অনুভূতি। একে একে সরকারি-বেসরকারি নানা সংগঠনের পক্ষ থেকেও ফুলেল শ্রদ্ধা জানানো হয়। কবর জিয়ারত শেষে শহীদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।
শহীদ রিতা আক্তার ছিলেন আশরাফ আলীর কন্যা। রাজধানীর মিরপুরের দুয়ারীপাড়া সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের এই শিক্ষার্থী ছিলেন প্রতিভাবান, সাহসী ও সমাজসচেতন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অংশ হিসেবে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকার মিরপুর-২ এলাকার ওভারব্রিজের নিচে পুলিশের গুলিতে মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নির্মমভাবে প্রাণ হারান রিতা। তাঁর অকালপ্রয়াণ শুধু একটি পরিবারের নয়, বরং পুরো জাতির বুকে এক স্থায়ী ক্ষতচিহ্ন হয়ে রয়েছে।
আজ তাঁর কবরের পাশে দাঁড়িয়ে সেই রক্তাক্ত ইতিহাস স্মরণ করে অনেকের চোখ ভিজে ওঠে। কেউ কেউ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকেন—কারণ ভাষায় প্রকাশ করা যায় না সেই বেদনার ভার।
কালাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামীমা আক্তার জাহান বলেন, “শহীদ রিতা আক্তার ছিলেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রামী এক কণ্ঠস্বর। অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর, বৈষম্যের বিরুদ্ধে কণ্ঠ উঁচিয়ে বলার প্রতীক। তাঁর আত্মত্যাগ আমাদের চেতনাকে জাগিয়ে তোলে, নতুন প্রজন্মকে দেয় প্রতিবাদের অনুপ্রেরণা। তাঁর আত্মত্যাগ শুধু কালাই নয়, পুরো জাতির জন্য গর্বের বিষয়। আজ আমরা তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছি, কিন্তু প্রকৃত শ্রদ্ধা হবে যদি আমরা তাঁর স্বপ্নের সমাজ—ন্যায় ও সাম্যের সমাজ গড়ে তুলতে পারি। উপজেলা প্রশাসন সবসময় তাঁর পরিবারের পাশে থাকবে।”
আজ তাঁর স্মরণে আয়োজিত এই শ্রদ্ধা নিবেদন কেবল একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়—বরং এটি একটি অঙ্গীকার, যে আমরা ভুলব না রিতাকে। ভুলব না তাঁর রক্তের ঋণ, ভুলব না তাঁর স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার লড়াইকে।
একুশে সংবাদ/জ.প্র/এ.জে