২০২৪ সালের ৪ আগস্ট, শেরপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহত হন তিন শিক্ষার্থী—সবুজ মিয়া (১৮), মাহবুব আলম (২১) ও শারদুল আশীষ সৌরভ (২১)। এক বছরের মাথায়ও বিচার না পাওয়ায় হতাশ ও ক্ষুব্ধ তাদের স্বজনেরা। তারা দাবি জানিয়েছেন—ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি ও নিরপরাধদের অব্যাহতির মাধ্যমে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার।
নিহত সবুজ মিয়া শ্রীবরদী উপজেলার রূপারপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ও এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন। তিনি খরচ চালাতে পড়ালেখার পাশাপাশি একটি ওষুধের দোকানে কাজ করতেন। মাহবুব আলম ছিলেন শেরপুর সরকারি কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্র এবং সদর উপজেলার চৈতনখিলা এলাকার বাসিন্দা। শারদুল আশীষ সৌরভ ছিলেন ঝিনাইগাতীর সেকান্দর আলী ডিগ্রি কলেজের ছাত্র।
জানা যায়, ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট দুপুরের পর থেকেই শহরের কলেজগেট এলাকায় ছাত্র-জনতা জড়ো হতে শুরু করে। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে আন্দোলনকারীরা মিছিল নিয়ে কলেজমোড় থেকে খরমপুরের দিকে গেলে বিপরীত দিক থেকে আসা আওয়ামী লীগের একাংশের মিছিল থেকে ছোড়া গুলি সরাসরি লাগে সবুজের মাথায়। তিনি ঘটনাস্থলেই পড়ে যান এবং পরে হাসপাতালে নেওয়ার পর তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
সবুজের মা সমেজা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “আওয়ামী লীগের অস্ত্রধারী লোকজন আমার ছেলেকে গুলি করে মেরেছে। আমি আমার ছেলের হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই, দ্রুত বিচার চাই।”
সবুজের মৃত্যুর আধঘণ্টা পর, বিকেল সোয়া ৫টার দিকে একই সড়কে আরেকটি মিছিল বের হলে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর যৌথ টহলে থাকা একটি ম্যাজিস্ট্রেটের গাড়ি পেছন দিক থেকে ঢুকে পড়ে মিছিলে। এতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন মাহবুব আলম ও শারদুল আশীষ সৌরভ। আহত হন আরও কয়েকজন।
মাহবুবের মা মাহফুজা খাতুন বলেন, “আমার ছেলের হত্যাকারীরা শাস্তি পাক, তবে কোনো নিরপরাধ যেন সাজা না পায়। আমি ন্যায়বিচার চাই।”
সৌরভের বাবা সোহরাব হোসেন বলেন, “আমার ছেলে কোনো রাজনীতি করত না। সে শুধু মিছিলে দাঁড়িয়েছিল। পেছন থেকে আসা গাড়িটা তাকে পিষে দিল। আমি বিচার চাই।”
ঘটনার পর নিহত তিনজনের পরিবার সদর থানায় পৃথক মামলা দায়ের করেন। পুলিশ সম্প্রতি ওই মামলাগুলোর অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করেছে। এটি সারাদেশের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘটনায় দায়ের করা মামলাগুলোর মধ্যে প্রথম অভিযোগপত্র দাখিল হওয়া মামলা।
তবে অভিযোগ রয়েছে, সবুজ ও মাহবুব হত্যা মামলায় প্রকৃত অপরাধীদের অনেকেই বাদ পড়েছেন এবং কিছু নিরপরাধ ব্যক্তিকে জড়ানো হয়েছে। এই অভিযোগে ওই দুই মামলার বাদী আদালতে নারাজি আবেদন করেছেন।
জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক আহ্বায়ক মামুনুর রহমান বলেন, “ওইদিন আওয়ামী লীগের মিছিল থেকেই গুলি ছোড়া হয়েছিল। আর বাকিরা প্রাণ হারিয়েছেন সরকারি গাড়ির চাপায়। আমরা জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই এবং নিশ্চিত করতে চাই যে, কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি যেন এ মামলায় ক্ষতিগ্রস্ত না হন।”
একুশে সংবাদ/শে.প্র/এ.জে